ছয় মাস পর কমেছে কার্ডে বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন
টানা ছয় মাস পর কার্ডের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন কমেছে। নভেম্বরে ফারেইন কারেন্সি কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন হয়েছে ৫৭২ কোটি টাকা, যা আগের মাসের তুলনায় ৫.৪৫% কম।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২২ এর এপ্রিলে ফরেইন কারেন্সি কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন হয়েছে ২৪১ কোটি টাকা, যা আগের মার্চের তুলনায় ৩৯ কোটি টাকা কম। এপ্রিলের পর থেকে টানা ছয় মাস বেড়েছিল কার্ডে লেনদেন। নভেম্বরে এসে তা কিছুটা কমেছে।
ব্যাংকাররা বলেন, খোলাবাজারে ডলারের দাম কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ায় নভেম্বরে কার্ডে লেনদেন কমেছে। কার্ডের মাধ্যমে ডলারের দাম দাঁড়ায় ১০৭-১০৮ টাকা, তারপর আবার কার্ড চার্জও রয়েছে। খোলাবাজারে একই রেটে ডলার পাওয়া যায়।
একটি বেসরকারি ব্যাংকের কার্ড ডিভিশনের হেড নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, "অনেক ব্যাংকের ডলার সংকট রয়েছে। কোন ব্যাংকের গ্রাহক কার্ডের মাধ্যমে ডলার খরচ করলে ওই ব্যাংকের ফরেইন একাউন্ট থেকে ডলার পরিশোধ করতে হয়। তাই ব্যাংকগুলো নতুন করে কার্ড ইস্যু কমিয়ে দিয়েছে।"
দেশের রিজার্ভের পরিমাণ কমতে থাকায় ব্যাংকগুলোতে ডলার সংকট তৈরি হয় এপ্রিল থেকে। গত ১২ জুলাই প্রথমবারের মতো খোলাবাজারে ডলার বিক্রি হয় ১০০ টাকায়। এরপরে ক্রমান্বয়ে বেড়ে ১০ আগস্ট ডলারের দাম বেড়ে যায় ১২০ টাকায়।
এরপর বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে মৌখিকভাবে ক্যাশ ডলারের নির্ভরতা কমাতে কার্ড ব্যবহার বাড়াতে বলা হয়। তারপর থেকে কার্ডের মাধ্যমে লেনদেনের পরিমাণ বেড়েছে।
দেশে ২০২১ এর আগস্টে রেমিট্যান্স ও এক্সপোর্ট আর্নিং ভালো থাকায় রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়ায় ৪৮ বিলিয়ন ডলার। ওই বছরের আগস্টের পর থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক টানা ডলার বিক্রি শুরু করে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডলার বিক্রি অব্যাহত থাকলেও আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় ২০২২ এর এপ্রিল থেকে ডলারের সংকট তৈরি হয়। এরপর কেন্দ্রীয় ব্যাংক ধীরে ধীরে দাম ও রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি বাড়াতে থাকায় রিজাভ কমতে থাকে। একই বছরের ডিসেম্বর শেষে রিজার্ভের পরিমাণ কমে দাঁড়ায় ৩৩.৮৩ বিলিয়ন ডলার।
একটি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের কর্মকর্তা বলেন, রিজার্ভের উপর চাপ কমাতে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য ছাড়া সকল পণ্যে শতভাগ মার্জিন শত্য দিয়েছে সরকার। যার কারণে দেশের আমদানির পরিমাণ কমে গেছে।
ছোট ছোট ব্যবসায়ীরা ব্যাংকগুলোতে আমদানি করতে ডলার না পাওয়ায় ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে পণ্য আমদানি করেছে। তারা পরিবারের একাধিক সদস্যদের নামে কার্ড ইস্যু করেছে যার কারণে কার্ডের লেনদেন আগের বছরের তুলনায় এই সময়ে বেশি ছিল।
একজন গ্রাহক বছরে কার্ডের মাধ্যমে অথবা পাসপোর্ট এর মাধ্যমে এন্ডোর্স করে বছরে ১২ হাজার ডলার পর্যন্ত ডলার খরচ করতে পারে।
যদিও গত ৪ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২৭টি ব্যাংককে ক্রেডিট কার্ডের সীমার চেয়ে অতিরিক্ত খরচ করার কারণ জানতে চেয়ে চিঠি দিয়েছে। ব্যাংকের অন্তত ৭১ জন ক্রেডিট কার্ডধারী ১২ হাজার ৫০০ থেকে ২০ হাজার ডলার খরচ করেছে।
ওভারঅল কার্ড লেনদেন নভেম্বর এযাবৎকালে সর্বোচ্চ নভেম্বরে অটোমেটেড টেলার মেশিন (এটিএম), পয়েন্ট অফ সেল (পিওএস), ক্যাশ রিসাইক্লিং মেশিন (সিআরএম), ই-কমার্স লেনদেন এযাবৎকালের সর্বোচ্চ।
২০২২ এর নভেম্বরে এসমস্ত কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন হয়েছে ৩৯২৪৭ কোটি টাকা। ২০২১ সালের নভেম্বরে ছিল ২৫৫০১ কোটি টাকা। সে হিসেবে আগের বছরের তুলনায় ৫৩.৯০% বেড়েছে।
নভেম্বরে এটিএম কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন হয়েছে ২৯৭২০ হাজার কোটি টাকা, পোস কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন হয়েছে ২৪২০ কোটি টাকা, সিআরএম এর মাধ্যমে লেনদেন হয়েছে ৫৯৪৪ কোটি টাকা ও ই-কমার্স ট্রানজ্যাকশন হয়েছে ১১৬২ কোটি টাকা।