কার্ডে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের রেকর্ড ডিসেম্বরে
গত বছরের ডিসেম্বরে কার্ডের মাধ্যমে ফরেইন কারেন্সি লেনদেন এযাবৎকালে সর্বোচ্চ সীমা ছাড়িয়ে ৬৩৯ কোটি টাকা অতিক্রম করেছে। ২০২১ সালে এটি ছিল মাত্র ২৫০ কোটি টাকা।
সে হিসেবে এই কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন বেড়েছে ৩৮৯ কোটি টাকার বেশি।
ডলারের রেট বৃদ্ধি ও বিদেশে চিকিৎসা ও ভ্রমণের পরিমাণ বাড়ার কারণে কার্ডের মাধ্যমে এ বিপুল পরিমাণ ব্যয় হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, গত বছরের এপ্রিল থেকে কার্ডের মাধ্যমে ফরেইন কারেন্সি লেনদেনের পরিমাণ বাড়তে থাকে। এপ্রিলে এর পরিমাণ ছিল ২৪১ কোটি টাকা। এরপর সর্বপ্রথম ৫০০ কোটি টাকার উপরে লেনদেন হয় আগস্টে। অক্টোবরে ৬০৫ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। ডিসেম্বরে এসে ৬৩৯ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে, যা এযাবৎকালের সর্বোচ্চ।
ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেডের হেড অব ট্রেজারি শাহীন ইকবাল টিবিএসকে বলেন, কার্ডের মাধ্যমে ফরেইন কারেন্সি লেনদেন বেড়ে যাওয়ার কয়েকটি কারণ রয়েছে। খোলাবাজারে ডলার কিনতে গেলে ১১০-১২ টাকা লাগে। কার্ডের মাধ্যমে ডলার এন্ডোর্স করলে এর খরচ পড়ে ১০৬-১০৭ টাকা।
তিনি আরও বলেন, "গত বছরের আগস্ট থেকে ব্যাংকগুলোতে ক্যাশ ডলারের সংকট ছিল। এই সময়ে দেখা যায় অনেক ব্যাংক গ্রাহকের জন্য ফরেইন কার্ড ইস্যু করেছে, যার কারণে কার্ডের লেনদেন বেড়েছে।"
আরেকটি বেসরকারি একটি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের কর্মকর্তা টিবিএসকে বলেন, ক্যাশ ডলার সংকটের পর থকে ক্রেডিট কার্ড নেওয়া গ্রাহকের পরিমাণ বাড়ছে, বিদেশি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে গ্রাহক পণ্য কেনায় ঝুঁকেছেন। এছাড়া আমদানিতে এলসি মার্জিনসহ বিভিন্ন শর্ত থাকায় ছোট ছোট ব্যবসায়িরা ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে পণ্য আমদানি করছেন যার কারণে কার্ডে লেনদেন বেড়েছে।
এদিকে একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কোভিডের কারণে ২০২০-২১ সাল জুড়ে ভ্রমণ ও চিকিৎসাসেবা নেওয়ার জন্য বিদেশে যাওয়া প্রায় বন্ধ ছিল। এখন তা পুরোপুরিভাবে খুলে দেওয়া হয়েছে, যার কারণে লেনদেন বেড়েছে। তবে ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণেও এর পরিমাণটা বেড়েছে।
তিনি আরও বলেন, "নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে নিয়মিত ডলার সেল দেওয়ার কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভের পরিমাণ কমছে। এরমধ্যে কার্ডের মাধ্যমে ডলারের লেনেদেন বাড়াটা শোভনীয় নয়। এক্ষেত্রে আরও ব্যাংকগুলোর সতর্ক থাকা উচিত।"
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ এর ডিসেম্বরে প্রতি ডলারের দাম ছিল ৮৫.৮০ টাকা। ২০২২ এর ডিসেম্বরে এসে এর রেট দাঁড়িয়েছে প্রায় ১০৬ টাকা। কার্ডে লেনদেনের পরিমাণটা টাকায় হিসাব করায় ডলারের রেট বেড়ে যাওয়ার কারণেও এর রেট বেড়েছে।
এছাড়া ২০২১ এর আগস্টে দেশের রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৪৮ বিলিয়ন ডলার। এরপর ২০২২ এর শুরু থেকে রিজার্ভের পরিমাণ কমছে। ২০২৩ এর ৮ ফেব্রুয়ারি শেষে রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩২.৬৩ বিলিয়ন ডলার।
যদিও সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি সার্কুলার ইস্যু করে গ্রাহকের পাসপোর্ট ডলার এন্ডোর্স করার ক্ষেত্রে পূর্বের এন্ডোর্সমেন্ট যাচাই করতে বলা হয়েছে। কারণ একজন গ্রাহক বছরে সর্বোচ্চ ১২০০০ হাজার ডলার খরচ করতে পারবেন। এই সার্কুলারটি ডলার খরচ নিয়ে নিয়মিত তদারকি করতে ইস্যু করা হয়েছে।
এদিকে কার্ডের মাধ্যমে ফরেইন কারেন্সি লেনদেনের পাশাপাশি লোকাল কারেন্সি লেনেদেনের পরিমাণ বেড়েছে। ২০২২ এর ডিসেম্বরে লোকাল ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন হয়েছে ৩৯০২৫ কোটি টাকা। যা আগের মাস নভেম্বরে ছিল ৩৮৬৭৫ কোটি টাকা। এছাড়া ২০২১ এর ডিসেম্বরে ২৬৮২৪ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে।