পাঁচটি পণ্যে কাস্টমসের রাজস্ব আয় বেড়েছে দুই হাজার কোটি টাকা
বৈশ্বিক বাণিজ্য মন্দা পরিস্থিতির সময়ে বেশিরভাগ পণ্যের আমদানি কমেছে। কিন্তু বেশি রাজস্ব আয় হয় এমন পাঁচটি পণ্যের আমদানি বেড়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি হওয়া এসব পণ্যের আমদানি বেড়েছে সর্বোচ্চ ৪৩ শতাংশ পর্যন্ত।
আমদানি বেশি হওয়ার কারণে শুধুমাত্র ৫টি পণ্য থেকে কাস্টমসের রাজস্ব আয় বেড়েছে ২০০১ কোটি টাকা। নিত্য অপরিহার্য জ্বালানি তেল, ভোজ্যতেল সহ দেশের চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের কাঁচামাল আমদানি অব্যাহত রাখতে সংকটময় মুহূর্তেও এসব পণ্যের আমদানি বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ডলার সংকট কাটাতে আমদানি পণ্যে সরকারের যেসব কড়াকড়ি রয়েছে, সেগুলো প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন তারা।
চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম টিবিএসকে বলেন, "ডলার সংকটের কারণে সার্বিক আমদানি কমলেও উচ্চমূল্যে অপরিহার্য পণ্যগুলোর আমদানি স্বাভাবিক রাখতে হয়েছে। অন্যদিকে গত অর্থবছরের তুলনায় এবার পণ্যের মূল্য বেশি। তাই আমদানি বাড়ার সাথে সাথে রাজস্ব আয়ও বেড়েছে। আবার কিছু পণ্যে আমদানি কমে গেলেও পণ্যের মূল্য বেশি হওয়ায় কাস্টমসের রাজস্ব আয় বেড়েছে।"
সর্বোচ্চ রাজস্ব আদায় হয় এমন পাঁচটি আমদানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে- হাই স্পিড ডিজেল ওয়েল, মোটর স্প্রিন্ট অব এইচবিওসি টাইপ, ব্রোকেন অর ক্রাশড স্টোন, অন্যান্য কয়লা (আদার কোল) এবং সিমেন্ট ক্লিঙ্কার।
২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি এবং ২০২১-২২ অর্থবছরের একই সময়ের আমদানির তথ্য পর্যালোচনায় উঠে আসে এমন চিত্র।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আয় হওয়া এমন পণ্যের তালিকায় প্রথমেই রয়েছে হাই স্পিড ডিজেল ওয়েল। চলতি অর্থবছরের আট মাসে জ্বালানি তেলের আমদানি বাড়ে ৪০ শতাংশ। এ সময়ের মধ্যে হাই স্পিড ডিজেল আমদানি হয় ৩২০০০০৭ মেট্রিক টন। রাজস্ব আদায় হয় ৩৫২৬ কোটি টাকা। শুধুমাত্র হাই স্পিড ডিজেল আমদানিতে কাস্টমসের রাজস্ব বাড়ে ৩৯ শতাংশ বা ৯৯৮ কোটি টাকা।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রাজস্ব আয় বাড়ে ব্রোকেন অর ক্রাশড স্টোন পণ্যটির আমদানি খাতে। গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের আট মাসে পণ্যটির আমদানি বাড়ে ৩৭ শতাংশ। এই পণ্যটি থেকে গত অর্থবছরের তুলনায় ৮০ শতাংশ অর্থাৎ ৩৬৬ কোটি টাকা রাজস্ব আয় বাড়ে কাস্টমসের।
সিমেন্ট ক্লিঙ্কারের আমদানি বাড়ে ৫ শতাংশ বা প্রায় ৫ লাখ মেট্রিক টন। এই খাতে কাস্টমসের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পেয়েছে ২৪৭ কোটি টাকা। এছাড়া অন্যান্য কয়লার আমদানি বাড়ে ৬৬৭৫৫১ মেট্রিক টন, যা গত অর্থবছরের তুলনায় ৩০ শতাংশ বেশি। এই পণ্য থেকে কাস্টমসের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পায় ১৯১ কোটি টাকা। মোটর স্প্রিন্ট অব এইচবিওসি টাইপ-এর আমদানি বাড়ে ৪৩ শতাংশ। পণ্যটি থেকে কাস্টমসের রাজস্ব আয় বাড়ে ১৯৯ কোটি টাকা।
চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পাম অয়েলের রপ্তানি বাড়ে গত অর্থবছরের তুলনায় ৩৩ শতাংশ। তবে পণ্যটির আমদানি বাড়লেও বাড়েনি রাজস্ব আয়, বরং গত অর্থবছরের তুলনায় ৪৭৬ কোটি টাকা রাজস্ব আয় কমে গেছে।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের ডেপুটি কমিশনার মোঃ বদরুজ্জামান মুনশি টিবিএসকে বলেন, "আমদানি বৃদ্ধির বিষয়টি চাহিদার উপর নির্ভর করে। এলসি ওপেন করার ক্ষেত্রে কিছুটা অসুবিধার কারণে আমদানি আবশ্যিক পণ্যগুলোর আমদানি কমেছিলো। এখন সেগুলো স্বাভাবিক হচ্ছে।"
তিনি আরো বলেন, "আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি এবং কমে যাওয়ার উপর কাস্টমসের রাজস্ব আয়ে প্রভাব পড়ে। এবার আন্তর্জাতিক বাজারে পাম অয়েলের দাম কমে যাওয়ার কারণে আমদানি বাড়লেও কাস্টমসের রাজস্ব কমেছে।"