সরকারের কৃচ্ছ্রতায় সাশ্রয় ১৫,০০০ কোটি টাকা
চলতি ২০২৩ অর্থবছরের শুরু থেকে সরকারের কৃচ্ছ্রসাধনের নীতিতে এ পর্যন্ত সরকারি ব্যয়ে ১৫,০০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে। বুধবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অর্থ, মুদ্রা ও বিনিময় হার সংক্রান্ত কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের সভায় এ তথ্য তুলে ধরে অর্থ বিভাগ।
এই অর্থের মধ্যে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতা খাত থেকে সাশ্রয় হয়েছে ১,০৯৩ কোটি টাকা। এছাড়া, পণ্য ও সেবাসহ পূর্ত কাজ এবং শেয়ার ও ইক্যুইটিতে বিনিয়োগের লাগাম টেনে সাশ্রয় হয়েছে প্রায় ১৪,০০০ কোটি টাকা।
তবে জ্বালানি তেল ও বিদ্যুতের দাম বাড়ার কারণে এই দুই খাতে বরাদ্দের ২০ শতাংশ সাশ্রয়ের যে নির্দেশনা দিয়েছিল অর্থমন্ত্রণালয়, তা কোনো কাজে লাগেনি। সরকারি দপ্তরগুলো ব্যবহারে কিছুটা সাশ্রয়ী হলেও দাম বাড়ার কারণে সরকারি চাকরিজীবীদের পেট্রোল ও বিদ্যুৎ ব্যবহার থেকে কোনো অর্থ সাশ্রয় করতে পারেনি সরকার।
জাতীয় পে-স্কেল অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে সরকারি চাকরিজীবীদের ইনক্রিমেন্ট, পদোন্নতি স্বাভাবিকভাবেই হয়েছে। তাদের কোনো উৎসব ভাতাও কমানো হয়নি। তবে বিভিন্ন সভায় যোগদান করলে চাকরিজীবীরা যে সম্মানী পান, সেটি স্থগিত করার পাশাপাশি চাকরিজীবীদের বিদেশ ভ্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। এতে এ খাত থেকে অর্থ সাশ্রয় হয়েছে।
চলতি অর্থবছরের বাজেটে বেতন-ভাতায় ৭৪,২৬৬ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছিল। সংশোধিত বাজেটে এ খাতে ব্যয় হবে ৭৩,১৭৩ কোটি টাকা।
আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতায় বরাদ্দ থাকছে ৭৭,০০০ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১.৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে এ খাতে জিডিপির ১.৭ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছিল।
ব্যয় সাশ্রয়ের অংশ হিসেবে চলতি অর্থবছর পণ্য ও সেবা ক্রয় এবং পূর্ত কাজে সরকারের সাশ্রয় হয়েছে ৬,৪৭০ কোটি টাকা। এ খাতে বরাদ্দের অর্থ দিয়ে সাধারণত সরকারের মন্ত্রণালয় ও দপ্তরগুলো বিভিন্ন স্টেশনারি, চেয়ার-টেবিল, কম্পিউটারসহ বিভিন্ন পণ্য কেনা এবং ভবন ও বিভিন্ন কক্ষের ছোট-খাটো মেরামতের কাজ করে থাকে।
এছাড়া, শেয়ার ও ইক্যুইটিতে বিনিয়োগ হতে সরকার সাশ্রয় করেছে ৭,৫৮৫ কোটি টাকা। এই খাতে বরাদ্দের অর্থ থেকে সরকার মালিকানাধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মূলধন ঘাটতি পূরণ ও ইক্যুইটিতে বিনিয়োগ করে।
এর পাশাপাশি, সরকারের ব্যয় সাশ্রয়ের অংশ হিসেবে চলমান প্রকল্পগুলোকে এ, বি ও সি ক্যাটাগরিতে বিভক্ত করে সি ক্যাটাগরির প্রকল্পে বরাদ্দ স্থগিত রাখে অর্থ মন্ত্রণালয়। এছাড়া, বি ক্যাটাগরির প্রকল্পগুলোতে মোট বরাদ্দের সর্বোচ্চ ৮০ শতাংশ ব্যয় করার সুযোগ দেওয়া হয়। এতে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার ১৮,৫০০ কোটি টাকা হ্রাস পেয়েছে।
তবে বিভিন্নখাত থেকে অর্থ কিছুটা সাশ্রয় হলেও আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেল, গ্যাস ও সারের দাম বাড়ার কারণে এসব খাতে সরকারের ভর্তুকি ব্যয় বেড়ে গেছে। এছাড়া, খাদ্যমূল্য বেড়ে যাওয়ায় চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে খাদ্য ভর্তুকিতেও বরাদ্দ বাড়াতে হয়েছে।
কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের সভায় উপস্থাপন করা তথ্যে অর্থ বিভাগ বলেছে, চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে কৃষি, বিদ্যুৎ ও খাদ্য ভর্তুকি খাতে প্রায় ২১,০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ বেড়েছে।
এছাড়া, ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে যাওয়া, লাইবর ও এসওএফআর'র রেট বৃদ্ধির কারণে বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধ ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় সামগ্রিকভাবে সরকারের সুদ ব্যয় বাড়ছে।
চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে সুদ পরিশোধ বাবদ বরাদ্দ ছিল ৮০,৩৭৫ কোটি টাকা, সংশোধিত বাজেটে এ খাতে অতিরিক্ত ৯,৬৩৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
আগামী অর্থবছর সরকারি ঋণের সুদ পরিশোধে বরাদ্দ ১,০২,৩৭৬ কোটি টাকা প্রাক্কলন করা হয়েছে।