১৫ টাকার আলু ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে: প্রতিবেদন
অসাধু ব্যবসায়ীরা কৃত্রিমভাবে দাম বৃদ্ধি করছে বলেই কৃষক পর্যায়ে বিক্রি হওয়া ১৫ টাকা কেজি দরের আলু বাজারে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর।
গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে হঠাৎ করে আলুর দাম ৩৫ টাকা থেকে বেড়ে ৪৫-৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। অযথা মূল্যবৃদ্ধির কারণ অনুসন্ধান করে অধিদপ্তর কৃষি মন্ত্রণালয়কে একটি প্রতিবেদন দিয়েছে। এই প্রতিবেদনে অসাধু ব্যবসায়ীদের কৃত্রিমভাবে দাম বৃদ্ধির বিষয়টি তুলে ধরা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এবারে আলুর উৎপাদন খরচ হয়েছে ১০.৫০ টাকা, যেটা সব খরচ মিলে খুচরা বাজারে ৩২ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। কিন্তু কৃত্রিমভাবে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী আলুর দাম বৃদ্ধি করছে, যা এখন ৪৫-৫০ টাকায় বাজারে বিক্রি হচ্ছে। এর জন্য অবশ্য হিমাগার মালিকদেরও দায়ী করা হয়েছে। কারণ হিমাগার মালিকরা চাহিদার তুলনায় অপর্যাপ্ত পরিমাণ আলু বাজারে ছাড়ছে।
প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, প্রতিবছরের ন্যয় এবারও ফেব্রুয়ারী মাস থেকে দেশের আলু উঠতে শুরু করে। আলুর একটা অংশ কৃষক পর্যায় থেকে সরাসরি বাজারে আসে, কৃষকের কাছে কিছু মজুদ থাকে এবং বাকিটা থাকে হিমাগারে। ৩৬৫টি হিমাগারে এ বছর ২৪.৯২ লাখ টন আলু সংরক্ষণ করা হয়েছে। কৃষকের হাতে আলু শেষ হওয়ার পর জুন থেকে হিমাগারের আলু বাজারে সরবরাহ আসতে থাকে। কিন্তু এই সরবরাহ ঠিকভাবে হচ্ছে না বলে প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে।
জানা যায়, এ বছর আলুর উৎপাদন হয়েছে ১.১১ কোটি টন, যেখানে স্থানীয় চাহিদা ৮৯.৯২ লাখ মে টন। চাহিদার বিপরীতে ২১.৯৯ লাখ মে টন আলু বেশি উৎপাদন হওয়া সত্ত্বেও গত প্রায় ১৫ দিন ধরে আলুর দাম বাড়ছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। সর্বশেষ ১০ জুলাই পাইকারি পর্যায়ে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হয়েছে ৩০-৩৩ টাকা এবং খুচরা পর্যায়ে এটা ৪৫-৫০ টাকা। যা এক মাস আগের তুলনায় প্রায় ১০ শতাংশ এবং গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫৪.৫৫ শতাংশ বেশি।
অথচ পাইকারি পর্যায়ে ২৪ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয় বলেই প্রতিবেদনে বলা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে হিমাগার থেকে খাবার আলু খালাস হয়েছে ২.৬৯ লাখ মে টন এবং এখনো সংরক্ষিত আলুর ৮৯.১৯ শতাংশ আলু সংরক্ষিত রয়েছে। তবে কৃষকের ঘরে এখন কোন আলু সংরক্ষণ করা নেই।
এদিকে বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন বলছে, এ বছর আলুর উৎপাদনে সরকার যে তথ্য দিচ্ছে তা ঠিক না। তার চেয়ে ২০-২২ শতাংশ কম আলু উৎপাদন হয়েছে। গত বছর সব কোল্ড স্টোরেজ ভরা থাকলেও এবারে ১০-২০ শতাংশ পর্যন্ত আলু কম রয়েছে। কৃষকের হাতে যে আলু জুন পর্যন্ত থাকে সেটা এবার এপ্রিলেই শেষ হয়েছে।
কোল্ড স্টোরেজে যে আলু আছে তার মধ্যে ৬০ শতাংশ খাওয়ার এবং ৪০ শতাংশ বীজ আলু। এই ৬০ শতাংশের মধ্যে ১০ শতাংশ কোল্ড স্টোরেজ মালিকদের, ১০ শতাংশ কৃষকদের এবং বাকি ৪০ শতাংশ রয়েছে স্টকারদের। এই স্টকের ব্যবসায়ী যারা, তারা এবারে জানে যে আলুর উৎপাদন কম হয়েছে, চাহিদা বেশি। যে কারণে তারা বাজারে আলু কম ছাড়ছে এবং অতিরিক্ত লাভ করছে।
বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য বেশকিছু সুপারিশও করা হয়েছে- হিমাগার থেকে চাহিদা অনুযায়ী দ্রুত আলু খালাস করতে হবে। আলুর সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে পর্যাপ্ত পরিবহন সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। ফেরি ও টোল প্লাজায় আলু বহনকারী পরিবহনকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পারাপার নিশ্চিত করতে হবে।
এর সঙ্গে যেসব অসাধু ব্যবসায়ী কৃত্রিমভাবে আলুর বাজার অস্থির করার চেষ্টা করবে তাদেরকে বিভিন্ন তদারকি সংস্থা এবং পুলিশ প্রশাসনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে বলেও প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মো. মজিবর রহমান টিবিএসকে বলেন, 'অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয় থেকে বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের মনিটরিং সংশ্লিষ্ট সকল কর্মকর্তাদেরকে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে কোল্ড স্টোরেজ এসোসিয়েশনের সভাপতি ও এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র সহ সভাপতি টিবিএসকে বলেন, "যারা আলু স্টক করেছেন তারা বাজারে চাহিদার তুলনায় কম আলু দিচ্ছেন। আবার প্রতি কেজি আলু কোল্ড স্টোরেজ থেকে মানভেদে ৩০-৩১ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যেখানে তারা কেজিপ্রতি ১২-১৩ টাকা পর্যন্ত লাভ করছেন। এই কারণেই বাজারে অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে।"
তিনি বলেন, "এখনো যে আলু রয়েছে তাতে ডিসেম্বর পর্যন্ত অনায়াসেই চলে যাবে, দাম বাড়ার কথা নয়। এরপরও যদি বাজার নিয়ন্ত্রণে না আসে তাহলে ভোক্তার স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে আমদানির বিকল্প নেই।"