ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্যমান আরো কমলো
বৈদেশিক রিজার্ভ থেকে বিক্রির ক্ষেত্রে ডলারের দাম ৫০ পয়সা বাড়িয়ে ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কলে টাকার মান আরো কমলো।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক মঙ্গলবার (১ আগস্ট) নতুন রেটে প্রায় ৬৯ মিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে।
এ নিয়ে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তৃতীয়বারের মতো টাকার অবমূল্যায়ন হলো। চলতি বছরের জুলাইয়ে ডলার রেট ছিল ১০৯ টাকা।
গত এক বছরে দেশে টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে ১৫ টাকা ৫ পয়সা। এক বছর আগের ডলার রেট ৯৪ টাকা ৪৫ পয়সা থেকে হিসাব করলে এ অবমূল্যায়ন ১৬% এর সমতূল্য।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা টিবিএসকে বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক আন্তঃব্যাংক রেটে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করছে। ডলারের আন্তঃব্যাংক রেট ৫০ পয়সা বেড়েছে। তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকও রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রির রেট বাড়িয়েছে।
বাংলাদেশ ফরেইন এক্সচেঞ্জ ডিলার অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) এবং অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ (এবিবি) সোমবার মার্কিন ডলারের বিনিময় হার সমন্বয় করেছে। দুটি সংস্থার ঘোষণা অনুযায়ী নতুন আন্তঃব্যাংক ডলারের রেট নির্ধারণ করা হয়েছে।
এদিকে, রপ্তানিকারকরা বর্তমানে প্রতি ডলার পাচ্ছেন ১০৮ টাকা ৫০ পয়সা করে, যেখানে রেমিটেন্সের ক্ষেত্রে ডলার রেট ১০৯ টাকা এবং আমদানি নিষ্পত্তির জন্য লেনদেন চলছে ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা।
বাফেদার চেয়ারম্যান এবং সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মো. আফজাল করিম টিবিএসকে বলেন, "কেন্দ্রীয় ব্যাংক আমাদের ঘোষিত রেট অনুযায়ী ডলার বিক্রি করছে। সোনালী ব্যাংক ডলার পরিচালনা এবং সময়মতো আমদানি ঋণ পরিশোধের চেষ্টা করছে।"
"আমাদের দেশে লেটার অফ ক্রেডিট পেমেন্টে সাধারণত এক বা দুই দিন বিলম্বিত হয়। আমরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে ডলার সহায়তা পাচ্ছি। পাশাপাশি, আমরা বাজার থেকে ডলারও কিনছি। সামগ্রিকভাবে পরিস্থিতি আগের চেয়ে ভালো," বলেন তিনি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতে, চলতি অর্থবছরের জুলাইয়ে রিজার্ভ থেকে ১.১৫ বিলিয়ন ডলার বিক্রি হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে রিজার্ভ থেকে ১৩.৫৮ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করা হয়েছিল।
এসব কারণে, যেখানে গত বছরের জুলাইয়ের শেষে মোট রিজার্ভ ছিল ৩৯.৬০ বিলিয়ন ডলার, তা সোমবার ২৯.৭২ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। তবে, এটি পুরনো হিসাব অনুযায়ী। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের নির্দেশিকা অনুসারে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন মোট রিজার্ভ ২৩.৩০ বিলিয়ন ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা টিবিএসকে বলেন, "বর্তমানে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করা হয় শুধুমাত্র জ্বালানি ও সার আমদানির অর্থ পরিশোধের জন্য। রিজার্ভ এখনও উদ্বেগজনক পর্যায়ে কমেনি।"
"গত অর্থবছরে প্রতি মাসে গড় আমদানি ব্যয় ছিল ৫.৮৩ বিলিয়ন ডলার। সে অনুযায়ী গ্রস রিজার্ভ দিয়ে আমরা কমপক্ষে চার মাসের আমদানি ব্যয় মেটাতে পারি। সেক্ষেত্রে আমরা এখনও নিরাপদ," বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, বৈদেশিক মুদ্রা সহায়তা ও বিদেশি বিনিয়োগ বাড়লে দেশের রিজার্ভ ইতিবাচক হবে। বাংলাদেশ ২০২৩ সালের জুলাই মাসে জাপানের কাছ থেকে ৩০ বিলিয়ন জাপানিজ ইয়েন (২১০ মিলিয়ন ডলার) পেয়েছে। এ ধরনের আরও সহায়তা এবং বিনিয়োগ পাওয়া গেলে রিজার্ভ বাড়বে।
এদিকে, চলতি বছরের জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় মুদ্রার অবমূল্যায়ন ঘটে। মাত্র একদিনে টাকার মান কমে ২ টাকা ৮৫ পয়সা। এদিন বাংলাদেশ ব্যাংক ১০৮ টাকা ৮৫ পয়সা রেটে ডলার লেনদেন করে। এরপর ডলার রেট বাড়িয়ে ১০৯ টাকা করা হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নেওয়া উদ্যোগগুলোর লক্ষ্য হলো একটি সমন্বিত এবং বাজার-চালিত বিনিময় হার ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করা, দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের উপর চাপ কমানোর জন্য একাধিক বিনিময় হার প্রক্রিয়া বন্ধ করা ও ৪.৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণের জন্য প্রয়োজনীয় শর্তাবলী মেনে চলা।
চলতি অর্থবছরের নতুন মুদ্রানীতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক একীভূত ও বাজার-চালিত একক বিনিময় হার ব্যবস্থা গ্রহণের ঘোষণা দিয়েছে। এই পদ্ধতির মাধ্যমে টাকা এবং মার্কিন ডলার, বা অন্য কোনো বৈদেশিক মুদ্রার মধ্যে বিনিময় হার মার্কেট ফোর্সের মাধ্যমে নির্ধারিত হতে পারবে।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে ডলারের রেট বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে রপ্তানি, আমদানি ও রেমিট্যান্সের জন্য বাফেদাকে ভিন্ন ভিন্ন রেট নির্ধারণের নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
ডলারের রেট ১১৫ টাকায় উন্নীত হওয়ার পরপরই একাধিক বিনিময় হার চালু করা হয়।