ঢাকা-দিল্লি-টোকিও জোটবদ্ধ হলে আঞ্চলিক উন্নয়ন গতিশীল হবে: ভারতীয় বিশেষজ্ঞ
ভবিষ্যত উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনের জন্য বাংলাদেশ, ভারত ও জাপানের ত্রিদেশীয় সহযোগিতা বাড়ানো গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন নয়াদিল্লিভিত্তিক রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম ফর ডেভেলপিং কান্ট্রিজ (আরআইএস)-এর অধ্যাপক প্রবীর দে।
এই তিন দেশের ব্যবসা ও বিনিয়োগ ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি নিয়ে এগোচ্ছে। তবে তিন দেশের মধ্যে আঞ্চলিক উন্নয়ন সহযোগিতার বন্ধন সৃষ্টি করা গেলে উন্নয়নের গতি আরও ত্বরান্বিত হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
সানেম ট্রেড সেন্টার আয়োজিত 'এমার্জিং কনট্যুর অভ বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া-জাপান ট্রায়াঙ্গুলার সিস্টেম ফর ডেভেলপিং কান্ট্রিজ' শীর্ষক এক ভার্চুয়াল গণবক্তৃতা অনুষ্ঠানে প্রবীর দে এসব কথা বলেছেন।
তিনি বলেন, 'বঙ্গোপসাগর ব্যবহার করে এই তিন দেশের মধ্যে নতুন সংযোগ গড়ে উঠতে পারে।
'বাংলাদেশ ২০৩১ সালের মধ্যে ১ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি হবে। ভারতও অনেক এগিয়ে যাবে। ভবিষ্যতে বাংলাদেশের বন্দর ও মেরিটাইম লিংকেজ বাড়বে। ফলে উন্নয়নের জন্য ত্রিদেশীয় সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।'
এ অনুষ্ঠানে সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হানসহ তিন দেশের একাধিক গবেষণা সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
অধ্যাপক প্রবীর দে বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগে (এফডিআই) জাপানের শীর্ষস্থানীয় দেশ। ধারাবাহিকভাবে এই দুই দেশে জাপানের বিনিয়োগ বাড়ছে। আবার অফিশিয়াল ডেভেলপমেন্ট এসিস্ট্যান্ট (ওডিএ)-এর ক্ষেত্রেও জাপান বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশেই যথেষ্ট বিনিয়োগ করেছে।
বাংলাদেশ ও ভারতের অবকাঠামো উন্নয়নে জাপানের যথেষ্ট অংশগ্রহণ রয়েছে। দিল্লি ও ঢাকার মেট্রোরেল স্থাপনে দ্বীপরাষ্ট্রটি ভূমিকা রেখেছে। এছাড়া ইন্ডাস্ট্রিয়াল করিডোর, হাইওয়ে, শিল্পাঞ্চল স্থাপনেও জাপান এগিয়ে এসেছে।
প্রবীর দে বলেন, বাংলাদেশে জাপানি বিভিন্ন কোম্পানি কার্যক্রম শুরু করেছে। বাংলাদেশে জাপানের উন্নয়ন সহায়তাও বাড়ছে।
'ভারতেও যথেষ্ট বিনিয়োগ করেছে জাপানি কোম্পানিগুলো। এদিকে ভারত ও জাপানের মধ্যে সেমিকন্ডাক্টর কার্যক্রম বিষয়ে আলোচনা চলছে,' বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের নতুন পণ্যের গন্তব্য হতে পারে জাপান ও ভারত। আবার জাপান ও ভারতের বিনিয়োগকারীদের জন্য বাংলাদেশ এখন নতুন সুযোগ সৃষ্টি করেছে।
'ফলে এই তিন দেশের মধ্যে উন্নয়ন সহযোগিতার নতুন স্তরে যাওয়ার সময় এসেছে। এখন সরকারগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে।'
প্রবীর দে বলেন, জাপানের শক্তিশালী বেসরকারি খাত, উন্নত প্রযুক্তি, উচ্চমূল্যের বাজার বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহযোগিতা করবে। অন্যদিকে ভারতের উত্তর-পূর্ব অংশ বাংলাদেশের জন্য সম্ভাবনাময়। ফলে এই তিন দেশের উন্নয়ন জোটবদ্ধতা এশিয়ার এই অঞ্চলকেই শক্তিশালী করতে পারে।
বাণিজ্য, ডিজিটাল প্রযুক্তি, আর্থিক সহায়তা, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় এই তিন দেশ একসাথে কাজ করতে পারে বলে মনে করেন প্রবীর দে। তিনি বলেন, এ তিন দেশের বেজলাইন খুবই শক্তিশালী। সংস্কৃতি, আবহাওয়া, সংযুক্তি ও বাণিজ্য সবই একই ধরনের।
তিনি বলেন, 'বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় ভারতের যেমন ভূমিকা রয়েছে, তেমনি জাপানের ভূমিকাও উল্লেখযোগ্য। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দ্বিতীয় বৈদেশিক সফর ছিলো জাপান। অর্থাৎ জাপানের সাথে বন্ধুত্ব ও কুটনীতিক সম্পর্কও উষ্ণ। ফলে বাংলাদেশ, ভারত ও জাপানের জোটবদ্ধতা বিশ্বে শক্তিশালী আঞ্চলিক জোট হতে পারে। এখন সময় এসেছে দেশগুলোর সরকারের এ বিষয়ে বিবেচনা করার।'