৯ ব্যাংকের ১ কোটি বা তার বেশি টাকার চেক ক্লিয়ারেন্স বন্ধের নির্দেশ
এস আলমের মালিকানাধীন ছয়টি ব্যাংকসহ মোট নয়টি ব্যাংকের ইস্যুকৃত এক কোটি টাকা বা তার বেশি টাকার চেক নিজ নিজ ব্যাংক থেকে বা অন্য কোনো ব্যাংকের মাধ্যমে নগদায়ন বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেম বিভাগ সোমবার (১২ আগস্ট) রাতে সব ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের এ মৌখিক নির্দেশনা দিয়েছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগ এবং কিছু বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানিয়েছেন।
নয়টি ব্যাংক হলো: ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, পদ্মা ব্যাংক এবং আইসিবি ব্যাংক।
এর আগে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই ব্যাংকগুলোর চলতি হিসাবে টাকা না থাকলেও অন্যান্য ব্যাংকের মাধ্যমে চেক ক্লিয়ারিংয়ের অনুমতি দিয়েছিল। এই সুবিধার ফলে বিভিন্ন কাগজে প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ব্যাংকগুলো থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে।
তবে চট্টগ্রামভিত্তিক এস আলম গ্রুপের প্রভাব কমাতে এবং তাদের ঋণ গ্রহণ বন্ধ করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। গ্রুপটির ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সরাসরি সম্পর্ক ছিল। ব্যাংক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই সিদ্ধান্তের মূল লক্ষ্য এস আলম গ্রুপকে কাগজে প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ঋণ গ্রহণ থেকে বিরত রাখা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, "এস আলমের মালিকানাধীন ব্যাংকগুলো দীর্ঘদিন ধরে ঘাটতিতে রয়েছে। নামে-বেনামে ঋণ দিয়ে এই ব্যাংকগুলোর এমন সংকট তৈরি হয়েছে। তারপরও সাবেক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদের বিশেষ সুবিধার মাধ্যমে এসব ব্যাংকগুলোকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্ট থেকে নিয়মিত টাকা সরবরাহ করেছেন।"
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৩০ জুন গভর্নরের অনুমোদনে বাংলাদেশ ব্যাংক এস আলম গ্রুপের প্রভাব থাকা ইসলামিক ব্যাংকগুলোকে একদিনে ৩৫ হাজার কোটি টাকা তারল্য সহায়তা প্রদান করেছে। একটি কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, "বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে এমন কোনো নির্দেশনা নেই। তবে ব্যাংকগুলো এখন সার্বিক পরিস্থিতির কারণে বড় চেক নেয় না।"
ইসলামী ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, সরকার পরিবর্তনের পর বেনামি ঋণের মাধ্যমে বেসরকারি ইসলামী ব্যাংক থেকে কাগজে প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে একইদিনে ৮৮৯ কোটি টাকা উত্তোলনের চেষ্টা করা হয়েছে। তবে ব্যাংকের কর্মকর্তারা তা জানতে পেরে এসব লেনদেন আটকে দিয়েছে। অর্থ তুলে নেওয়ার চেষ্টা করছিল গোল্ডেন স্টার ও টপ টেন ট্রেডিং হাউজ নামে দুটি প্রতিষ্ঠান।
কর্মকর্তারা জানান, "দুটি প্রতিষ্ঠানই ব্যাংকের মালিকপক্ষের সঙ্গে সম্পর্কিত। এ জন্য সরকার পরিবর্তনের পরে এভাবে অর্থ তুলে নেওয়া ঠেকানো গেছে।"
কর্মকর্তারা বলছেন, সোনালী, জনতা, রূপালী, পূবালী এবং সিটি ব্যাংকের পাঁচটি চেক গত মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) ইসলামী ব্যাংকের চট্টগ্রাম আগ্রাবাদ শাখায় নগদ অর্থের জন্য উপস্থাপন করা হয়। গোল্ডেন স্টার এই পাঁচটি চেক জারি করেছে। প্রতিষ্ঠানটির মূল হিসাব ছিল আগ্রাবাদ শাখায়।
পাঁচটি চেক আগ্রাবাদ শাখার ম্যানেজার প্রাথমিক অনুমোদন দেওয়ার পর চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য ইসলামী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়। এই চেকগুলোর মাধ্যমে ৩৪৬ কোটি টাকা তুলে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। তবে ব্যাংকটির কর্মকর্তাদের তৎপরতায় তা আটকে যায়। একইদিনে টপ টেন ট্রেডিংয়ের ৫৪৮ কোটি টাকার বেনামি ঋণও আটকে দেওয়া হয়।
বর্তমানে এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণাধীন ৮টি ব্যাংকসহ ৯টি ব্যাংক চরম আর্থিক সংকটের মুখোমুখি। এসব ব্যাংক দীর্ঘদিন ধরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে সিআরআর এবং এসএলআর বজায় রাখতে হিমশিম খাচ্ছে এবং তাদের চলতি হিসাবগুলোতে বড় ধরনের ঘাটতি রয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এসব ব্যাংক আমানতের চেয়ে বেশি ঋণ দেওয়ায় সেগুলোর চলতি হিসাবের ঘাটতি আরও বেড়েছে।
তিনি বলেন, "বাংলাদেশ ব্যাংক বিশেষ বিবেচনায় এসব ব্যাংককে জামানত ছাড়াই টাকা ধার দিচ্ছে এবং লেনদেন হিসাব চালু রেখেছে। এ কারণেই মূলত নতুন ঋণ দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছিলো ব্যাংকগুলো।"
এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে কোনো ব্যাংক থেকে ২ লাখ টাকার বেশি নগদ উত্তোলনের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে।