অভ্যন্তরীণ ঘোষণায় ঋণ পরিশোধের সময় বাড়ল ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত
অভ্যন্তরীণ ঘোষণার মাধ্যমে ব্যাংক ঋণ পরিশোধের বিশেষ সুবিধা আরও পনের দিন বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অধিক পরিমাণ খেলাপি হবে এমন আশঙ্কায় এ সুযোগ দেয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং রেগুলেশন এন্ড পলিসি ডিপার্টমেন্ট (বিআরপিডি) ব্যাংকগুলোকে মৌখিকভাবে এই বিষয়টি অবহিত করেছে।
যদিও গত ২৮ ডিসেম্বর ব্যাংকার্স সভা থেকে জানানো হয়, সবার জন্য সুবিধা আর বাড়বে না। শুধু অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি (সিএমএসএমই) খাতের উদ্যোক্তারা ১৫ শতাংশ পরিশোধ করলে আর খেলাপি হবেন না।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রত্যাহারের ঘোষণার দুই দিন পরেই উল্টো সিদ্ধান্ত নিতে হয়। ব্যবসায়ী নেতারা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে গিয়ে আলোচনার ফলে সকল ঋণের ক্ষেত্রে একই পরিমাণে পরিশোধের সুযোগ দেয়া হয়।
একইসঙ্গে নতুন সার্কুলারে বলা হয়, ব্যাংকগুলো যদি গ্রাহকের অনুকূলে গত বছরের ঋণের ১৫ শতাংশ আদায় করে তাহলে বছরের পুরো সুদ আয়খাতে নিতে পারবে।
এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ ঘোষণার বিষয়ে রাষ্ট্রায়ত্ব একটি ব্যাংকের ব্যবস্থা পরিচালক (এমডি) দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণ পরিশোধের যে নীতিমালা দিয়েছে এর ফলে অনেক খেলাপির পরিমাণ বেড়ে যাবে। তাই অভ্যন্তরীণ ঘোষণার মাধ্যমে আরও ১৫ দিন সুযোগ দেয়া হয়েছে।'
তিনি বলেন, 'খেলাপির তালিকা দিতে হয় নিদিষ্ট প্রান্তিকে পরবর্তী মাসের ২০ তারিখের মধ্যে। যদি ১৫ জানুয়ারির আগে কেউ সমন্বয় করে তাহলে সে খেলাপি থেকে মুক্তি পেল। এছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংক সার্কুলার ইস্যু না করলেও সব ব্যাংককে জানিয়ে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।'
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, 'ঋণ পরিশোধের সুবিধা যে বেড়েছে তা এখন পর্যন্ত আমি জানি না। কারণ আমি সার্কুলার ব্যতীত কিছু বলতে পারছি না। তবে যে মাসে থেকে খেলাপি হওয়ার কথা সেই মাসের প্রথম সপ্তাহে যদি পরিশোধ করা হয় তাহলে ব্যাংকগুলো নোটিস দিয়ে বলতেও পারে লাস্ট ডেটের পরের সপ্তাহে তারা টাকা পরিশোধ করেছে। সেই বিবেচনায় তাদের খেলাপি নাও দেখাতে পারে।'
২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনা সংক্রমণ হলে সাধারণ ছুটিতে ব্যবসা-বাণিজ্যে অচলাবস্থা দেখা দেয়। সে সময় ঋণ নিয়ে ব্যবসায় উদ্যোগ শুরু করা মানুষদের জন্য নীতিসহায়তা ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সিদ্ধান্ত হয়, ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ঋণের কিস্তি জমা না দিলেও কেউ খেলাপির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হবেন না।
পরে এই মেয়াদ বাড়ানো হয় ধাপে ধাপে। তবে ঢালাও সুবিধা ধীরে ধীরে কমায় বাংলাদেশ ব্যাংক।
ডিসেম্বর পর্যন্ত কিস্তির কোনো অংশ জমা না দিয়েও খেলাপিমুক্ত থাকার সুযোগ থাকলেও পরে তা কমানো হয়।
সবশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী করোনার কারণে চলতি বছর একজন ঋণগ্রহীতার যে পরিমাণ পরিশোধ করার কথা ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে কেউ ২৫ শতাংশ পরিশোধ করলে আর খেলাপি হবেন না।
ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো এ সুবিধা আরও বাড়ানোর দাবিতে চিঠি দিয়েছিল। তারা বলছেন, বিশ্বে করোনা আবার বাড়ছে। ইউরোপ-আমেরিকায় ভাইরাসটি ফের ছড়াচ্ছে। বাংলাদেশের পরিস্থিতি ভালো হলেও রপ্তানির ক্ষেত্রে আবারও নানা বিধিনিষেধ আসছে। এতে ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দাভাব তৈরি হবে। আর এটা হলে ব্যবসায়ীদের জন্য ঋণের কিস্তি জমা দেয়া অসম্ভব হয়ে পড়বে।