শীত উপেক্ষা করে বাণিজ্য মেলায় জমেছে আইসক্রিমের বিক্রি
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী শীতকালে আইসক্রিমের চাহিদা একটু কম থাকার কথা। তবে বাণিজ্য মেলায় এলে এ ধারণা ভুল প্রমাণিত হবে। মেলায় বিভিন্ন ব্র্যান্ডের আইসক্রিমের প্যাভিলিয়ন, মিনি প্যাভিলিয়নে ক্রেতাদের জমজমাট ভিড় দেখা যায়। মেলা উপলক্ষে এখানে অংশ নেওয়া কোম্পানিগুলোও দিচ্ছে নানা ধরনের অফার। এতে তারা দর্শনার্থীদের কাছ থেকেও সাড়া পাচ্ছেন বেশ ভালো।
সাপ্তাহিক ছুটির দিন গত শুক্রবার জনপ্রিয় আইক্রিম ব্র্যান্ডগুলোর প্যাভিলিয়নের কেনাবেচা অত্যন্ত ভালো ছিল। প্রচুর ক্রেতা-আইসক্রিমপ্রেমীদের সমাগম দেখা গেছে স্টলের সামনে। মেলায় অংশ নেয়া প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা বলছে তাদের মূল উদ্দেশ্য ব্রান্ডকে পরিচিত করে তোলা। তবে মেলা শুরু হওয়ার ৫ দিন পর থেকেই তাদের আইসক্রিম ভাল বিক্রি হচ্ছে। বিশেষ করে দুপুরের পর ক্রেতারা ভিড় করছে স্টলে।
ইগলু, স্যাভয়, পোলার, মিল্কভিটা ইত্যাদি কোম্পানি প্যাভিলিয়ন নিয়ে তাদের আইসক্রিম বিক্রি করছে। মেলায় আগত ক্রেতা-দর্শনার্থীরা কেনাকাটা ও ঘোরাঘুরির ফাঁকে বেশ মজা করে আইসক্রিম কিনে খাচ্ছেন। প্যাভিলিয়নের ব্রান্ড প্রোমোটার-বিক্রয়কর্মীরা বাহারি সাজে সেজে ক্রেতাদের নজর কাড়ছেন, সরবরাহ করছেন আইসক্রিম।
স্যাভয় প্যাভিলিয়ন ঘিরে ক্রেতাদের জটলা। সবার হাতে হাতে বিভিন্ন স্বাদের আইসক্রিম। মো. ফাহাদ এসেছেন মগবাজার থেকে তিন বন্ধুসহ, তারা শাহী ক্ষির আইসক্রিম খাচ্ছিলেন। ফাহাদ বলেন, 'মেলায় আসলে আইসক্রিম খাওয়া একটা কমন ব্যাপারে পরিণত হয়েছে।'
স্যাভয়ের মো. মেহেদি হাসান বলেন, 'আইসক্রিম এখন রেগুলার পণ্য হয়ে গেছে। মেলায় আসলে অনেকেই আইসক্রিম খাচ্ছেন। আমাদের শাহী ক্ষির আইসক্রিম ১০০ টাকা করে, এটা ভালো চলছে। ললি ১৫ টাকা ও বিভিন্ন স্বাদের স্কুপ ১০০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
প্রতিদিন ৩টার পর ভিড় হয় আর শুক্র, শনি ও বৃহস্পতিবার বেশি বিক্রি হয়। মেলা শুরু হওয়ার ৫ দিন পর থেকে আমাদের বিক্রি বেশ ভালো হচ্ছে।"
মেলায় তুর্কি গানের তালে নেচে নেচে আইসক্রিম বিক্রি করতেও দেয়া যায় স্যাভয় আইসক্রিম বিক্রয় কর্মীদের। ক্রেতারাও নেচে-নেচে কিনছেন আইসক্রিম। এ দৃশ্য দারুণ উপভোগ করছেন মেলার দর্শনার্থীরা।
ইগলুর পোলার আইসক্রিম প্রতি স্কুপ ১০০ টাকা। এখানে চকলেট, আম, স্ট্রবেরিসহ বিভিন্ন ফ্লেভারের আইসক্রিম আছে। ইগলুর ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর জাভেদ খান টিবিএসকে বলেন, 'এই প্যাভিলিয়নে ২০ টাকার আইসক্রিমও আছে। দিন যত যাচ্ছে, মেলায় আইসক্রিম বিক্রি তত বাড়ছে। তবে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বেশি দর্শনার্থী আসতো বিক্রিও বেশি ছিল, সেই তুলনা তিনভাগের দুইভাগ বিক্রি হচ্ছে পূর্বাচলের এ নতুন ভ্যেনুতে।'
মেলায় ঘুরতে এসেছেন রুমানা হক। সঙ্গে দুই ছেলে, ভাবি ও ভাগিনা। রূপগঞ্জের রুপসী এলাকা থেকে এসেছেন তারা। সবাই আইসক্রিম খাচ্ছিলেন, বললেন মেলায় ঘুরে ঘুরে আইসক্রিম খেতে ভাল লাগছে। বাসার কাছে হওয়ায় এ নিয়ে পাঁচবার আসা হয়েছে তাদের মেলায়। রুমানার ভাবি ফিলিপিনো, তিনি বাংলাদেশে বেড়াতে এসেছেন। ক্রেতারা আইসক্রিম খেয়ে যেখানে-সেখানে প্যাকেট ফেলছে এটা তার খাছে খারাপ লাগছে। তিনি বলেন, সবারই ময়লা রাখার বক্সে প্যাকেট ফেলা প্রয়োজন।
গুলশান-১ থেকে পরিবার নিয়ে মেলায় এসেছেন বিপুল সরকার। জটলা করে তাদের ৮ জনকে আইক্রিম খেতে দেখা যায়। বিপুল সরকার বলেন, 'করোনার সংক্রমণের ভয় তো আছেই। কিন্তু পরিবারের সদস্যদের নিয়েও একটু ঘুরতে বের হতে হয়। ছুটির দিনে তাই মেলায় এলাম।'
পোলার আইসক্রিম প্যাভিলিয়নের বিক্রয়কর্মী মোহম্মদ নাহিদ বলেন, 'আমাদের কোন আইসক্রিম ৫০ থেকে ৭০ টাকা। আমরা প্রতিবছরই মেলায় মার্কেটিংয়ের জন্য আসি। ব্রান্ড ইমেজ ধরে রাখা আমাদের প্রধান টার্গেট।'
মিল্কভিটার স্টলে এক কেজি আইসক্রিম বক্স বিক্রি হচ্ছে ১৭৪ টাকা, চকবার বিক্রি হচ্ছে ১৯ টাকা, কাপ আইসক্রিম ১৭ টাকা। বিক্রয়কর্মী ইসমাইল খান বলেন, তাদের কাপ আইসক্রিম বেশি বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া পুনক ফুড কর্নার, পর্যটন করপোরেশনের ক্যান্টিন সহ বেশ কয়েকটি ফুড কর্নারে বিভিন্ন ব্রান্ডের আইসক্রিম বিক্রি হচ্ছে।
ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার ২৬তম আসরের পর্দা উঠেছে নতুন বছরের প্রথম দিন। পূর্বাচলে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে (বিবিসিএফইসি) এবারই প্রথম স্থায়ী কমপ্লেক্সে মেলার আয়োজন করা হয়েছে। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত এবং সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে রাত ১০টা পর্যন্ত মেলা চলছে। মেলায় প্রবেশমূল্য বড়দের জন্য ৪০ টাকা এবং ২০ টাকা ছোটদের জন্য।