মেলায় অংশ নেয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান লোকসানের কবলে
একপ্রকার ক্রেতা-দর্শনার্থী খরার মধ্য দিয়ে শেষ হচ্ছে এবারের ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা। মেলায় অংশ নেয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানকে লোকসানের কবলে পড়তে হয়েছে বলে জানা গেছে। মেলার গেট ইজারা নিয়ে লোকসানে পড়বে বলে জানিয়েছেন ইজারাদার।
মেলার ইজারা পাওয়া প্রতিষ্ঠান মীর ব্রাদার্সের মালিক মীর শহিদুল টিবিএসকে বলেন, "এবার দর্শনার্থীর সংখ্যা খুব কম। ৩ কোটি টাকা দিয়ে মেলা ইজারা নিয়েছি, আর ৬০ লাখ টাকা দিতে হয়েছে ভ্যাট। ২৭ দিন পর্যন্ত যে টিকিট বিক্রি হয়েছে তাতে আমাদের লস হবে ৭৬ লাখ টাকা। আমরা আশা করেছিলাম এবার দর্শনার্থী বেশি হবে । তবে করোনা ও যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ থাকায় দর্শনার্থী কম ছিল।"
তিনি জানান, সর্বশেষ ২০২০ সালে আগারগাঁওয়ে হওয়া বাণিজ্য মেলায় দর্শনার্থী এসেছিল ২৫ লাখ। এখানে এসেছে এ পর্যন্ত সাড়ে চার লাখ দর্শনার্থী।
এবারের বাণিজ্য মেলার বিক্রি ও রপ্তানি আদেশের বিষয়ে জানতে চাইলে মেলার পরিচালক ও ইপিবি সচিত মো. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বলেন, আমরা প্রতিটি স্টলে আগামীকালকে (আজ) ফর্ম দিবো। তারা সেখানে জানাবে তাদের কত বিক্রি হয়েছে। আশা করি আমরা মেলার শেষ দিন এ তথ্য জানাতে পারবো।
আয়োজক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) জানিয়েছে, করোনা পরিস্থিতির কারণে মেলায় কমানো হয়েছে স্টলের সংখ্যা। এছাড়া বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও কম। ২০২০ সালে ৪৮৩টি ছোট-বড় স্টল ও প্যাভিলিয়ন ছিল। সে সংখ্যা কমিয়ে এবার করা হয়েছে ২২৫টি। এর মধ্যে বিদেশি ৬টি স্টল ও ৪টি মিনি প্যাভিলিয়ন রয়েছে।
২০২০ সালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা হয়। এরপর করোনার কারণে এক বছর বিরতি দিয়ে পূর্বাচলে স্থায়ী ভবনে হয় শুরু হয় এবারের বাণিজ্য মেলা।
মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে অংশগ্রহণ করা প্রায় ২০টি প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মেলার প্রথম থেকেই ক্রেতা-দর্শনার্থীর খরা দেখা দেয়। যারা এসেছে তারা ঘুরতেই বেশি এসেছে। তবে মেলার শেষ দিকে তাদের কিছুটা বিক্রি হয়েছে।
আমানত শাহ্ লুঙ্গি এবার মিনি প্যাভিলিয়ন নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির কর্পোরেট সেলসের ম্যানেজার মোঃ শফিকুল ইসলাম বলেন, "মূলত প্রচারণার জন্য মেলায় আসা। মেলায় যা বিক্রি হয়েছে সেই লাভ দিয়ে দিয়ে স্টল ভাড়া ও স্টলের কর্মীদের বেতনের টাকাও হবে না।"
তাওয়াক্কল ফার্নিচার মেলায় পাকিস্তান থেকে নকশা করা ফার্নিচার এনেছেন। এর বিক্রয় কর্মী গোলাম নবী জানান, মাত্র দুইটি ফার্নিচার বিক্রি হয়েছে। স্টল ভাড়া , কর্মীদের বেতন দেয়া ও ফার্নিচার নিয়ে আসতে যে খরচ হয়েছে সব মিলিয়ে তাদের এবার ৫ লাখ টাকা লোকসান হবে।
তিনি বলেন, "মেলার সঙ্গে রাজধানীর যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ থাকায় ক্রেতারা ফার্নিচার কিনে নি। কারণ কিভাবে বাড়িতে নিবে তারা।"
মেলায় অংশ নেয়া আলয় গ্রুপের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মোঃ তাফাজ্জেন সরকার বলেন, "প্রথম এক সপ্তাহ দর্শনার্থী ভালো ছিল, কিন্তু রাস্তা খারাপ হওয়ায় তরা বাড়ি গিয়ে অন্যকে বলেছে এ দুরবস্থার কথা। তাই হয়তো পরবর্তীতে দর্শনার্থী কম এসেছে।"
তিনি বলেন, "আমাদের স্টল ভাড়াও উঠবে না। তবে আমাদের পণ্যের প্রচারণা ভাল হয়েছে।"
আখতার ফার্নিশার্সের সহকারী বিক্রয় ব্যবস্থাপক সৈয়দ তানভীর হাসান বাপ্পী বলেন, "আগারগাঁওয়ে যে বিক্রি হতো তার ১০ ভাগের এক ভাগও বিক্রি হয় নি এবার। স্টলের কর্মীদের বেতন ও স্টল ভাড়াও উঠবে না বিক্রির লাভ দিয়ে।"
ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার ২৫তম আসরে ওয়ালটন সর্বোচ্চ পরিমাণ ভ্যাট দিয়ে পুরস্কার পেয়েছিল। এ তথ্য জানিয়ে ওয়ালটনের মিনি প্যাভিলিয়ন ইনচার্জ সাব্বির আহমেদ বলেন, "আগে আমাদের লক্ষ থাকতো পণ্যর গুণাগুণ তুলে ধরার সঙ্গে পণ্য বিক্রি করা। তবে এবার বিক্রির চেয়ে প্রচারে গুরুত্ব দিয়েছি। মেলার আমাদের তেমন বিক্রি হয়নি । ক্রেতা এখানে পণ্য দেখে তাদের কাছের শোরুম থেকে নিয়েছেন।"
শুক্রবার বিকেলে মেলা প্রাঙ্গণ কানায় কানায় ভরে যায় ক্রেতা-দর্শনার্থীদের পদচারণায়। তবে বেশিরভাগই ঘুরতে এসেছেন। দর্শনার্থীদের খুব কমের হাতেই দেখা গেছে কেনাটাকার ব্যাগ। সন্ধ্যা পর্যন্ত ৭৫ হাজার দর্শনার্থী এসেছে বলে জানিয়েছে মেলার ইজারাদার । তবে এ সময় কাউকেই সামাজিক দূরত্ব মানতে দেয়া যায় নি। মাস্ক পরলেও কারও মাস্ক থুতনিতে, কারও মাস্ক গলায় ঝুলছে।
রাজধানীর শনির আখড়া থেকে মেয়েকে নিয়ে মেলায় এসেছেন খুরশিদ আলম। তিনি বলেন, "আগারগাঁওয়ে মেলা হলে ৩ থেকে ৪ বার আসতাম। ঘরের প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতাম। কিন্তু দূরে হওয়ার এবার আজকেই মেলায় আসলাম। শতরঞ্জি ও ক্রোকারিজ পণ্য কিনেছি।"
অন্যদিকে আরেক দর্শনার্থী মো. শরিফ ভুঁইয়া বলেন, "বাড়ির কাছে হওয়ায় ৫ দিনের মতো মেলায় এসেছি। মূলত ঘুরতেই এসেছি।"
গতবারের মেলায় কত টাকার রপ্তানি আদেশ এসেছে সেটা জানাতে পারেনি ইপিবি। তবে তার আগের বছর বাণিজ্য মেলায় রপ্তানি আদেশ পাওয়া গিয়েছিল ২০০ কোটি টাকার। মেলায় দর্শক এসেছিলেন ৫০ লাখের মতো।