বাজেটে কমলো করপোরেট কর
লিস্টেড, নন-লিস্টেড এবং এক ব্যক্তি কোম্পানির জন্য নতুন বাজেটে করপোরেট কর হার কমানোর প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
২০২২-২০২৩ অর্থবছরে বাজেটে তালিকাভুক্ত কোম্পানির জন্য করহার ২২.৫% থেকে কমিয়ে ২০%, নন-লিস্টেড কোম্পানির করহার ৩০% হতে কমিয়ে ২৭.৫% এবং এক ব্যক্তি কোম্পানির করহার ২৫% থেকে কমিয়ে ২২.৫% করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
সংসদে বাজেট পেশকালে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, "ব্যবসা বাণিজ্যের ব্যাপক প্রসারের লক্ষ্যে গত ২০২১ সালের অর্থ আইনে কর্পোরেট করহার ৩২.৫০% থেকে ৩০% এ হ্রাস করা হয়। ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে কর্পোরেট করহার আরও কমানোর প্রস্তাব করছি।"
তিনি আরও বলেন, "এক্ষেত্রে সকল প্রকার প্রাপ্তি ও আয় অবশ্যই ব্যাংক স্থানান্তরের মাধ্যমে গৃহীত হতে হবে এবং ১২ লাখ টাকার অতিরিক্ত ব্যয় ও বিনিয়োগ অবশ্যই ব্যাংক স্থানান্তরের মাধ্যমে সম্পাদন করতে হবে। এ শর্তে আমি নন-লিস্টেড কোম্পানির করহার ৩০% হতে ২৭.৫% এ হ্রাস এর প্রস্তাব করছি। এছাড়া অর্থনীতির অধিকতর আনুষ্ঠানিকীকরণ এবং এক ব্যক্তি কোম্পানির (ওপিসি) প্রতিষ্ঠা উৎসাহিত করার লক্ষ্যে এক ব্যক্তি কোম্পানির করহার ২৫% থেকে কমিয়ে ২২.৫% করার প্রস্তাব করছি।"
মন্ত্রী বলেন, "পুঁজিবাজারের উন্নয়ন ও পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে পরিশোধিত মূলধনের ১০% এর অধিক শেয়ার আইপিও (ইনিশিয়াল পাবলিক অফারিং) এর মাধ্যমে হস্তান্তর হলে তালিকাভুক্ত কোম্পানির জন্য করহার ২২.৫% থেকে কমিয়ে ২০% করার প্রস্তাব করছি। তবে এক্ষেত্রে ১০% বা তার কম শেয়ার আইপিও এর মাধ্যমে হস্তান্তরকারী লিস্টেড কোম্পানির কর হার ২২.৫% করার প্রস্তাব করছি। এছাড়া, পূর্বোক্ত শর্ত পরিপালনে ব্যর্থতায় তালিকাভুক্ত কোম্পানির করহার ২২.৫% থেকে বৃদ্ধি করে ২৫% করার প্রস্তাব করছি।"
এর আগে গত ২৩ মে ঢাকা চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি রিজওয়ান রহমানের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "আমরা করপোরেট কর হার হ্রাসের বিষয়টিকে সবসময় প্রশংসার চোখে দেখি। এতে আমাদের প্রতিযোগী দেশগুলোর চেয়ে এগিয়ে থাকার সুযোগ তৈরী হয়।"
বেসরকারি খাত বিগত কয়েক বছর ধরেই কর্পোরেট কর হার কমানোর দাবি করে আসছে। কারণ ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বাংলাদেশের বের হওয়ার পর কিছু বাণিজ্যসুবিধা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে, বিভিন্ন পণ্যের ওপর আরোপ করা হবে অতিরিক্ত শুল্ক।
তিনি বলেন, "যদি আমরা এখনই প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি না নিই, তবে এটি ব্যবসায়ের উপর আরও বোঝা বাড়াবে।"
কর্পোরেট কর হার ২.৫ শতাংশীয় পয়েন্ট হ্রাসে বাংলাদেশে আরও বেশি বৈদেশিক বিনিয়োগ আসবে। ডলারের ক্রমবর্ধমান দামও এক্ষেত্রে কার্যকর হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
অন্যদিকে কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস এবং ইজ অব ডুয়িং বিজনেস বাংলাদেশের জন্য প্রধান উদ্বেগ হিসাবে রয়ে গেছে উল্লেখ করে রিজওয়ান রহমান বলেন, দেশে সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফডিআই) জিডিপির ন্যূনতম ৫% হওয়া উচিত।
এদিকে করপোরেট কর হ্রাস অন্যান্য সকল খাতের জন্য একটি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বা সমানুপাতিক সুবিধা সৃষ্টি করবে। এর আগে একে 'রপ্তানি-বান্ধব উদ্যোগ' হিসেবে উল্লেখ করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, এই ধরনের উদ্যোগ অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনবে। এতে বৈদেশিক মুদ্রায় অর্থপ্রদানের ভারসাম্যের (ব্যালান্স অব পেমেন্টের) ঘাটতিও কমিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে তারা মন্তব্য করেন।