ইউরোপের প্রথম দেশ হিসেবে কোভিড বিধিনিষেধ তুলে দিচ্ছে আইসল্যান্ড
ইউরোপের প্রথম দেশ হিসেবে করোনাভাইরাস রোধে আরোপিত সব ধরনের নিষেধাজ্ঞা তুলে দিতে যাচ্ছে আইসল্যান্ড। এখন থেকে আইসল্যান্ডবাসীর জন্য আর মাস্ক পরা কিংবা সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা বাধ্যতামূলক নয়। দেশটির প্রধানমন্ত্রী ২৫ জুন এই ঘোষণা দেন এবং মধ্যরাত থেকেই তা কার্যকর হয়।
প্রধান মহামারিবিদ পোরোলফুর গুনাসনের সুপারিশে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আইসল্যান্ডে সর্বোচ্চ ৩০০ মানুষ এক জায়গায় জড়ো হওয়া, মাস্ক ব্যবহার এবং এক মিটার সামাজিক দূরত্ব মানার বাধ্যবাধকতা এখন আর থাকছে না।
কঠোর পরীক্ষা ও ট্রেসিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কোভিড মহামারিকে বেশ ভালোভাবেই মোকাবিলা করেছে ইউরোপের এই নর্ডিক জাতি। সংক্রমণ কমাতে দেশটিকে বেশ কয়েকবার লকডাউন জারি করতে হয়েছে।
তবে, আইসল্যান্ডীয় সীমান্তে কোয়ারেন্টাইন এবং আইসোলেশনের নিয়মকানুন আগের মতোই থাকছে; সেখানে 'ব্যক্তিগত সুরক্ষা ব্যবস্থা' নিতে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে।
আইসল্যান্ডের কোভিড ওয়েবসাইটে সুরক্ষা ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা সংক্রান্ত তথ্যের মধ্যে বলা হয়েছে "অনেক মানুষ স্পর্শ করেছে এমন সব স্থান, যেমন- দরজার হাতল ও সিঁড়ির দুই পাশের হাতল, এসব জায়গা পরিষ্কার রাখতে হবে এবং নিয়মিত জীবাণুমুক্ত করতে হবে।"
এছাড়া প্রবেশপথ ও এর আশেপাশের ভূমিপৃষ্ঠে, যেখানে অনেক মানুষের পদচারণা আছে; যেমন- টাচ কিপ্যাড, শপিং ট্রলি এবং ক্যাশ রেজিস্টারে জীবাণুনাশক ব্যবহার করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
প্রধান মহামারিবিদ পোরোলফুর গুনাসন আশাবাদ ব্যক্ত করে জানান যে, আইসল্যান্ডকে আর কখনো কঠোর কোভিড বিধিনিষেধের মধ্যে থাকতে হবে না।
প্রথম বিধিনিষেধ আরোপের মাত্র ১৫ মাসের কিছু বেশি সময় পর এসে তিনি বললেন, "আমরা আশা করি যে আমরা এমন একটা পর্যায়ে চলে এসেছি যেখানে সীমান্তের ভেতরে আর কোভিড সংক্রান্ত পদক্ষেপ জোরদার করার প্রয়োজন নেই।"
তিনি আরও বলেন, "মাঝেমাঝে দুয়েকজন হয়তো আক্রান্ত হবেই, কিন্তু তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। কারণ আমরা জানি যে গুটিকয়েক মানুষ ইচ্ছে করেই ভ্যাকসিন নেননি, যদিও আমরা আমাদের জনসংখ্যার সিংহভাগকেই ভ্যাকসিন দিতে সক্ষম হয়েছি। ভ্যাকসিন শতভাগ কার্যকরী হয়না, এমনকি কারো কারো সংক্রমিত হওয়া থামাতে পারেনা। কিন্তু গুরুতর রোগ থেকে রক্ষা করার জন্য ভ্যাকসিন বেশ কার্যকরী।"
১ জুলাই থেকে যেসব ভ্রমণকারীদের কোভিড ভ্যাকসিন নেয়ার সনদ থাকবে, তাদেরকে আইসল্যান্ড সীমান্তে এসে আর কোনো পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হবেনা বলে জানিয়েছে আইসল্যান্ড রিভিউ নামক ম্যাগাজিন।
ভ্যাকসিন সনদ না থাকা পর্যটকদের আইসল্যান্ডে ঢুকতে হলে অবশ্যই নেগেটিভ পিসিআর টেস্ট দেখাতে হবে এবং একটি পরীক্ষা ও পাঁচ দিনের কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। তবে ২০০৫ সাল বা তার পরে জন্ম নেয়া শিশুদের ক্ষেত্রে ভ্যাকসিন সনদ থাকলে আর কোনো নেগেটিভ পিসিআর টেস্ট দেখাতে হবেনা।
আইসল্যান্ড সরকার জানিয়েছে, ৮৭ শতাংশ আইসল্যান্ডবাসী ইতিমধ্যে ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ পেয়েছেন যা অন্যান্য দেশের তুলনায় সবচেয়ে বেশি বলে তাদের দাবি। ওয়েবসাইটের হিসাব অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত দেশটিতে তিন লাখ ৮৬ হাজার ৭১৫ ডোজ ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে এবং পুরোপুরি ভ্যাকসিন নিয়েছেন ১৭ লাখ ৭৫ হাজার ৪০ জন। আইসল্যান্ড সরকার দেশের অধিবাসীদের মডার্না, ফাইজার ও জনসন ভ্যাকসিন প্রদান করেছে।
আইসল্যান্ডের কোভিড পরীক্ষা প্রক্রিয়াই তাদেরকে করোনাভাইরাসের ধরন বুঝতে সাহায্য করেছে এবং মহাদেশের অন্যান্য দেশের তুলনায় বড় পরিসরে কঠোর লকডাউন দিতে হয়নি তাদের।
এই মুহূর্তে, ৩৬ লাখ অধিবাসীর দেশ আইসল্যান্ডে করোনা সংক্রমণের হার গড়ে দুই সপ্তাহে প্রতি ১০০,০০০ জনে মাত্র ১ দশমিক ৬।
সরকারি হিসাবমতে, দেশে সব মিলিয়ে ছয় হাজার ৬৩৭ জন আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে মৃতের সংখ্যা মাত্র ৩০ জন। গত ১৫ জুন থেকে আইসল্যান্ডে নতুন করে কেউ করোনা আক্রান্ত হয়নি বলে সরকারের করোনাভাইরাস ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়।
সূত্র- ডেইলি মেইল