ইরানে হামলার পরিকল্পনা জোরদার করা হচ্ছে: ইসরায়েলি সেনাপ্রধান
ইরানের পরমাণু কর্মসূচির থামাতে শুধু নাশকতা চালিয়েই ক্ষান্ত নয় ইসরায়েল। বরং দীর্ঘদিন ধরে তেহরানের পরমাণু স্থাপনায় সামরিক হামলার যে হুমকি দিয়ে আসছে, সে সংক্রান্ত পরিকল্পনা বাস্তবায়নে জোরকদমে এগোচ্ছে।
সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের প্রতিদ্বন্দ্বী রাষ্ট্রটির সামরিক বাহিনীর প্রধান চিফ অব জেনারেল স্টাফ আভিভ কোহাভির কথাতে পাওয়া গেছে তাঁর সুস্পষ্ট ইঙ্গিত।
কোহাভি জানান, ইরানি পরমাণু স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা পরিচালনার পরিকল্পনাকে জোরদার করা হয়েছে। ইরানের সাথে বিশ্বশক্তিগুলোর চুক্তি দেশটির পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির সক্ষমতা কতখানি কমাতে পারছে- এ নিয়ে যখন সন্দেহ দেখা দিচ্ছে, তারমধ্যেই একথা জানালেন তিনি।
গতকাল সোমবার ইসরায়েলি গণমাধ্যম ওয়াল্লা নিউজে তাঁর এক সাক্ষাতকার প্রকাশিত হয়। সেখানে কোহাভি বলেন, 'এ লক্ষ্য অর্জনে ইতোমধ্যেই আমাদের প্রতিরক্ষা বাজেট বৃদ্ধি করার ব্যাপারে সম্মতি দেওয়া হয়েছে।'
তিনি আরও বলেন, "কাজটি অনেক বেশি জটিল। এখানে অনেক বেশি গোয়েন্দা কার্যক্রম পরিচালনার প্রয়োজন হবে, চাই সামরিক অপারেশন চালানোর বাড়তি সক্ষমতা ও অস্ত্রসম্ভার। আমরা এ সমস্ত দিক নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি।"
এছাড়া, সমগ্র মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে ইরানি মিত্রদের ক্ষমতা হ্রাস করার কাজ করছে ইসরায়েল, যোগ করেন জ্যেষ্ঠ এ জেনারেল।
"আমাদের প্রধান লক্ষ্য মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের (সামরিক) উপস্থিতি হ্রাস। এজন্য সিরিয়ার প্রতি বাড়তি মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে। তবে সমস্ত অঞ্চলজুড়েই বিস্তৃত আমাদের তৎপরতা। হামাস ও হিজবুল্লাহ'র মতো ইরান সমর্থিত গোষ্ঠীর বিরুদ্ধেও এমন প্রকাশ্য ও গোপনীয় অপারেশন চলছে।"
'আঞ্চলিক নিরাপত্তা শক্তিশালী করতে হবে'
এদিকে আজ মঙ্গলবার (৭ সেপ্টেম্বর) কাতারে এসে ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের ক্রমবর্ধমান সামরিক তৎপরতা আঞ্চলিক উত্তেজনা বৃদ্ধি করছে।
অস্টিন বলেন, "আমরা সবাই আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা চাই, কিন্তু বিভিন্ন গোষ্ঠীর কাছে ইরানের সরবরাহ করা মারণাস্ত্রের পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে। তাই আমরা নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধসহ আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা শক্তিশালীকরণে একযোগে কাজ করতে অঙ্গীকারবদ্ধ। ইরানের পরমাণু উচ্চাভিলাষে বাঁধা দেওয়াও এ লক্ষ্যের অন্তর্ভুক্ত।"
বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরে যাওয়া এবং এটিতে ফিরে আসার ব্যাপারে পরাশক্তিটির কালক্ষেপণ মধ্যপ্রাচ্যে সাম্প্রতিক সময়ে উত্তেজনা বেড়ে চলার প্রধান কারণ।
গত এপ্রিল থেকে এ চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে আনতে জার্মানি, ফ্রান্স, ব্রিটেন, রাশিয়া ও চীনের মতো বিশ্বশক্তিগুলোও চেষ্টা করছে। তবে বাইডেন প্রশাসন শক্তিশালী ইসরায়েলি লবি ও ডানপন্থী রাজনৈতিকদের কারণে চুক্তিতে ফিরে আসেনি। যদিও, ২০১৮ সালে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেওয়া এ সিদ্ধান্তকে ক্ষমতায় এলে পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন বাইডেন।
তবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়লের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করার দাবি বরাবরই অস্বীকার করেছে ইরান। তেহরান নিজেদের পরমাণু কর্মসূচিকে বিজ্ঞান গবেষণা ও শান্তিপূর্ণ কাজে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে পরিচালিত বলে উল্লেখ করে।
- সূত্র: আল জাজিরা