এবার সেনাবাহিনীতেও নিয়োগ পাবেন সৌদি নারীরা
গাড়ি চালানো,স্টেডিয়ামে বসে খেলা দেখার পর সৌদি নারীদের সেনাবাহিনীতে যোগদানের অনুমতি দেওয়া হলো। রাজ্যকে আধুনিকতার ছাঁচে সাজাতে এবার সশস্ত্র বাহিনীতে সৌদি নারীদের যোগদানের অনুমতি দিলেন সৌদি যুবরাজ। এখন থেকে সৌদি নারীদের দেশটির সেনাবাহিনী, বিমান বাহিনী, নৌবাহিনী, ক্ষেপানাস্ত্র বাহিনী ও সেনাবাহিনীর চিকিৎসা সেবায় কাজের সুযোগ থাকবে।
নির্দিষ্ট শর্তানুসারে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় উত্তীর্ণ হতে হবে আবেদনকারীকে। এছাড়া তাকে শারীরিকভাবে সুস্থ ও নির্ঞ্ঝাট কাগজপত্রের অধিকারী হতে হবে। তবে নারীদের ক্ষেত্রে আলাদা কিছু মানদণ্ডও জুড়ে দেওয়া হয়েছে।
২১ থেকে ৪০ বছরের যে কেউ সৈন্য ও সার্জেন্ট পদে যোগদান করতে পারবেন। উচ্চতা থাকতে হবে ১৫৫ সেন্টিমিটার। তবে তারা কোনো সরকারি কর্মকর্তা হতে পারবেন না। তারা সৌদি নাগরিকের বাইরে কাউকে বিয়ে করতে পারবেন না। সেনাবাহিনীর সৈনিক পদে যোগ দিতে চাওয়া নারীকে মাধ্যমিক পরীক্ষা পাস করতে হবে।
সৌদি নারীদের এখন দোকান, ওয়েটিং টেবিল ও কফি হাউসগুলোসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ক্যাশিয়ার-সহ বিভিন্ন পেশায় কাজ করতে দেখা যায়। কিছুদিন আগেও দেশটিতে এসব পেশায় নারীদের অংশগ্রহণকে বেআইনি বলে বিবেচনা করা হতো।
বিদেশের কাছে দেশের ভাবমূর্তি উন্নয়নের জন্য যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান সৌদি আরবে নারীদের ধীরে ধীরে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছেন। তবে এতসব সংস্কারের পরও নারীর অধিকার এখনো দেশটির একটি বড় মাথাব্যথার কারণ।
সৌদি আরবের অন্যতম আলোচিত নারী অধিকারকর্মী লুজাইন আল-হাথলুল প্রায় তিন বছর কারাভোগের পর সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছেন। ৩১ বছর বয়সী হাথলুল ছিলেন সৌদি আরবে মেয়েদের গাড়ি চালানোর অধিকারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের মধ্যে অন্যতম দাপুটে কর্মী। 'রাজনৈতিক ব্যবস্থা পরিবর্তনের এবং জনশৃঙ্খলা বিনষ্ট চেষ্টার' দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে একটি আদালত তাকে প্রায় ৬ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিলেন। এ সময় তাকে বন্দি অবস্থায় ইলেকট্রিক শক দেওয়া, চাবুক মারা এবং যৌন হয়রানি করা হয়।
মানবাধিকার আইনজীবী হেলেনা কেনেডি এক প্রতিবেদনে লিখেছেন, হাথলুলসহ আরও কয়েকজন নারী অধিকারকর্মীকে জোরপূর্বক যৌন সম্পর্ক করতে বাধ্য করা হয়েছিল। বলা হয়েছিল, এই নির্যাতনের কথা গোপন রাখলে তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে।
ধর্ষণের হুমকি, সিলিং থেকে ঝুলিয়ে মারধর করা এবং চিকিৎসার সময় বৈদ্যুতিক শক- এ সবকিছুই সহ্য করতে হয়েছিল তাদের।
আল-হাথলুলের মুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছে জাতিসংঘ। তবে জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক বলেছেন, 'গুরুত্বপূর্ণ হলো, তার মতো একই অবস্থায় থাকা অন্য ব্যক্তিদের মুক্তি নিশ্চিত এবং তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ বাতিল করা।'
পেন্টাগনে এক বক্তব্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, 'বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মীকে মুক্তি দেওয়ার জন্য সৌদি সরকারকে আমি স্বাগত জানাই।'
'তিনি নারী অধিকারের জন্য একজন শক্তিধর কর্মী; তাকে মুক্তি দেওয়াটাই সঠিক কাজ ছিল,' যোগ করেন বাইডেন।
প্রায় ৯ দশক ধরে সৌদি আরবের ক্ষমতায় থাকা বর্তমান রাজবংশের কেউই এই বিষয়গুলো নিয়ে ভাবেননি। শুধু নারী অধিকারের বিষয়েই নয়, অন্য কোনো বিষয়েও সংস্কারের পথে হাঁটেননি তারা। সেখানে মোহাম্মদ বিন সালমান অনেকটা নিজের মতো করে এগিয়ে যাচ্ছেন।
তেলভিত্তিক অর্থনীতি আর ধর্মীয় নেতাদের পরামর্শের ওপর ভর করে দেশ পরিচালনা সৌদি আরবের পুরোনো মডেল। কিন্তু সালমান তা ভেঙে নতুন মডেল প্রবর্তনের চেষ্টা করছেন। যে মডেলের মূলমন্ত্র জাতীয়তাবাদ ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন।
ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে এক ধরনের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল যুবরাজ সালমানের। ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া অস্ত্র ব্যবহারে ব্যাপক স্বাধীনতা দিয়েছিলেন সৌদি যুবরাজকে।
তবে জো বাইডেন ক্ষমতায় আসার পর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এখন কৌশলগত ও নিরাপত্তার সম্পর্ক বজায় রাখতে হলে সালমানকে হোয়াইট হাউসের নতুন চিন্তাধারাকে মেনে নিতে হবে এবং প্রয়োজনে স্বার্থত্যাগ করতে হবে। এদিকে,মার্কিন-সৌদি অংশীদারিত্ব পুনঃনির্ধারণের এবং মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক নীতির পক্ষে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বাইডেন।
- সূত্র: ডেইলি মেইল