কঙ্গোতে নতুন করে ইবোলার হানা
মধ্য আফ্রিকার প্রাকৃতিক সম্পদে পরিপূর্ণ দেশ কঙ্গো; গৃহযুদ্ধ, রাজনৈতিক সংঘাত ও উপনেবেশিক শক্তির শোষণে দারিদ্রপীড়িত এক ভূখণ্ড। করোনাভাইরাসের বিশ্ব মহামারি থেকেও মুক্তি পায়নি দেশটি। কোভিড-১৯ এর আগে থেকেই সেখানে চলছিল বিশ্বের সবচেয়ে বড় হামের মহামারি।
এই পরিস্থিতিকে আরও নাজুক করতেই যেন বিপর্যস্ত স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দেশটিতে দেখা দিয়েছে করোনার চেয়েও শতগুণ প্রাণঘাতী ইবোলা ভাইরাসের নতুন করে সংক্রমণ। এই তিন ভাইরাসের কবলে এখন দেশটিতে বিপুল সংখ্যক প্রাণহানির শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
কঙ্গোর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সাম্প্রতিক এক বিবৃতিতে জানায়, ইবোলা ভাইরাসের নতুন করে সংক্রমণে এখন পর্যন্ত চারজনের প্রাণহানি ঘটেছে। সবকয়টি মৃত্যুর ঘটনা ঘটে দেশটির পশ্চিম প্রান্তের ১২ লাখ বাসিন্দার শহর মবানডাকায়। খবর নিউইয়র্ক টাইমসের।
এদিকে জাতিসংঘের শিশু তহবিল-ইউনিসেফ গতকাল সোমবার আরও একজনের মৃত্যুর কথা নিশ্চিত করে।
অথচ মাত্র দুই মাস আগেই দেশটির পূর্বাংশে প্রায় দুই বছর ধরে চলমান ইবোলা মহামারি শেষ হওয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয় কঙ্গো। এই মহামারিতে মারা গিয়েছে দুই হাজার ২৭৫ জন। এরপরেই তুলনামূলক কম সংক্রমিত পশ্চিমাঞ্চলের একটি শহরে ইবোলার প্রকোপের কথা জানা গেল।
এরপর দুই দিন আগে নতুন করে এক ব্যক্তির ইবোলা সংক্রমণের কথা জানা যায়। এ অবস্থায় ইবোলার মহামারিকে কার্যত সমাপ্ত ঘোষণা করা যায় না। তবে দেশটির সরকারি কর্মকর্তারা ইবোলা শেষ পর্যায়ে রয়েছে এমন দাবি করছেন।
স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মীদের প্রশিক্ষণ না থাকায় ইবোলা শুধু কঙ্গো নয়, সমগ্র মধ্য আফ্রিকার অন্যান্য দেশের জনগোষ্ঠীর জন্যও ফের তার প্রাণসংহারক চেহারা নিয়ে ফিরতে পারে।
দেশটির পূর্ব প্রান্তের প্রায় দুর্বল হয়ে পড়া সংক্রমণ কেন্দ্র থেকে ৭৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মবানডাকা শহরে ইবোলা নতুন করে কিভাবে ছড়িয়েছে তার ব্যাখ্যা এখনও পাওয়া যায়নি।
সাব-সাহারা অঞ্চলের সবচেয়ে বড় দেশ কঙ্গোর প্রাক্তন নাম ছিল জাইরে। বর্তমানে সেখানে করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা চলছে।
দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনা সংক্রমণের অধিকাংশই ঘটেছে পশ্চিমাংশে অবস্থিত রাজধানী কিনহাসায়। পুরো দেশ মিলিয়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা তিন হাজার ৪৯ জন। আর মারা গেছেন ৭১ জন। তবে করোনা টেস্টের সীমাবদ্ধতার কারণে ঠিক কি পরিমাণ মানুষ প্রকৃতপক্ষে আক্রান্ত হয়েছেন তা নিরূপণ করাও সম্ভব নয়।
২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে চলমান তীব্র হামের মহামারিতে এখন পর্যন্ত কঙ্গোতে আক্রান্ত হয়েছেন সাড়ে তিন লাখ মানুষ। এদের মধ্যে সাড়ে ৬ হাজারের বেশি মারা গেছেন।
এই অবস্থায় ইবোলার নতুন সংক্রমণ নিয়ে নিজ উদ্বেগ ব্যক্ত করেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আফ্রিকা বিষয়ক আঞ্চলিক পরিচালক ডা. মাতশিদিশো রেবেকা মোয়েতি।
এক টুইট বার্তায় তিনি বলেছেন, ইবোলার নতুন সংক্রমণ আরেকটি চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করলেও তা মোকাবিলায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কঙ্গোর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং আফ্রিকান সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোলের সঙ্গে একযোগে কাজ করতে প্রস্তুত রয়েছে।
(ইবোলা মোকাবিলার) পূর্ব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে আরও দ্রুত এবং কার্যকরভাবে এবার তৎপরতা চালানো সম্ভব হবে বলেও জানান তিনি।