করপোরেট করের হার ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করলো ১৩৬ টি দেশ
করপোরেট করের হার কমপক্ষে ১৫ শতাংশ রাখার বিষয়ে সম্মতি দিয়েছে প্রায় ১৩৬ টি দেশ। এছাড়া, মুনাফা করের একটি সুষ্ঠু ব্যবস্থা তৈরির বিষয়েও একমত হয়েছে দেশগুলো।
বহুজাতিক কোম্পানিগুলো তাদের খরচ কমানোর জন্য কম করের এখতিয়ারের মাধ্যমে তাদের মুনাফা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করছে- এই উদ্বেগের জের ধরেই স্বাক্ষরিত হয় নতুন চুক্তিটি।
তবে, সমালোচকরা বলছেন এক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ হারও বেশ কম।
যুক্তরাজ্যের চ্যান্সেলর ঋষি সুনাক বলেন, 'আধুনিক যুগে বৈশ্বিক কর ব্যবস্থা উন্নত করবে' এই চুক্তি।
তিনি বলেন, "এখন আমাদের একটি সুষ্ঠু কর ব্যবস্থা রয়েছে। বিশ্বব্যাপী বড় প্রতিষ্ঠানগুলো যেখানেই ব্যবসা করুক না কেন, তাদেরকে একটি ন্যায্য অংশ দিতে হবে।"
গত এক দশক ধরে করের ন্যূনতম হার বিষয়ে আলোচনার নেতৃত্ব দিচ্ছে অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কোঅপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ওইসিডি)।
তারা বলে, এই চুক্তিটির মাধ্যমে বছরে অতিরিক্ত ১৫০ বিলিয়ন ডলার কর আয় করা যাবে। কোভিডের কবল থেকে অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধারে সাহায্য করবে এটি।
তবে, চুক্তিটি দেশগুলোর মধ্যে কর প্রতিযোগিতা "নির্মূল" করার জন্য করা হয়নি, বরং সেটি সীমাবদ্ধ করার জন্য স্বাক্ষরিত হয়েছে বলে উল্লেখ করে তারা।
করপোরেট করের এই নিয়ম শুরু হবে ২০২৩ সাল থেকে। নিজের দেশের সীমানার মধ্যে কর্মরত মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলোর উপর কর আরোপ করার সুযোগ থাকবে চুক্তি স্বাক্ষর করা দেশগুলোর।
এই পদক্ষেপ আমাজন এবং ফেসবুকের মতো ডিজিটাল জায়ান্টদেরকে প্রভাবিত করবে বলে আশা করা হচ্ছে। মূলত, ২০ বিলিয়ন ইউরো (১৭ বিলিয়ন পাউন্ড) এর উপরে বৈশ্বিক বিক্রয় এবং মুনাফা মার্জিন ১০ শতাংশের উপরে থাকা সংস্থাগুলোকে প্রভাবিত করবে এই চুক্তি।
যেসব দেশ থেকে কোম্পানি আয় করবে সেসব দেশকে নিজেদের ১০ শতাংশ থ্রেশহোল্ডের অতিরিক্ত মুনাফার এক চতুর্থাংশ অর্থ দিতে হবে।
ওইসিডির মহাসচিব ম্যাথিয়াস করম্যান বলেন, "এই সংস্কারের কার্যকর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে আমাদের এখন দ্রুত এবং অধ্যবসায়ী হয়ে কাজ করতে হবে।"
বিজয়ী ও পরাজিতরা
বিশ্বব্যাপী বড় কোম্পানিগুলোর উপর কর আরোপের পদ্ধতির ব্যাপক পরিবর্তন এ চুক্তি।
এতদিন ধরে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর কাছে আকর্ষণীয় চুক্তি উত্থাপনের উদ্দেশ্যে প্রায়শই একে অপরের সাথে প্রতিযোগিতা করতো বিভিন্ন দেশ। স্বাভাবিকভাবেই, এসব দেশে কোম্পানিগুলো নিজেদের কারখানা স্থাপনের মাধ্যমে কর্মসংস্থান তৈরি করে থাকে।
তবে, বর্তমানে সর্বনিম্ন কর যুক্ত দেশে নিজেদের মুনাফা সরিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে পারদর্শী হয়ে উঠেছে ডিজিটাল যুগের জায়ান্টরা।
এ চুক্তির মূল উদ্দেশ্য হলো মুনাফা পরিবর্তনের সুযোগ কমিয়ে আনা। সেই সাথে, যেসব দেশ থেকে মুনাফা অর্জন করা হচ্ছে, সেসব দেশে যাতে ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানগুলো কিছু কর প্রদান করে- সেটিও নিশ্চিত করা হয়েছে চুক্তিতে।
অর্থাৎ, নতুন চুক্তিটি 'কর স্বর্গের' জন্য সুখবর হলেও অন্য সবার জন্য খারাপ খবর।
জুলাই মাসে চুক্তির প্রস্তাব ঘোষণার সময় ১০০ টিরও বেশি দেশ চুক্তির প্রতি সমর্থন জানায়।
করপোরেট করের হার ১৫ শতাংশের নিচে থাকা- আয়ারল্যান্ড, হাঙ্গেরি এবং এস্তোনিয়া প্রথমে এর বিরোধিতা করলেও পরবর্তীতে চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। তবে কেনিয়া, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কা এখনো চুক্তিতে যোগ দেয়নি।
চুক্তিটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং ফ্রান্সের মতো দেশগুলোর মধ্যে চলমান বিতর্কেরও সমাধান করবে।
মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি জ্যানেট ইয়েলেন বলেন, "নিম্ন করপোরেট রেট বিষয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতার পরিবর্তে, আমেরিকা এখন কর্মী এবং উদ্ভাবনের দক্ষতার উপর প্রতিযোগিতা করবে।"
তবে, অক্সফাম জানিয়েছে, ১৫ শতাংশ করের হার খুব কম এবং 'ক্ষতিকর এই কর প্রতিযোগিতা থামাতে এটি তেমন কিছুই করতে পারবে না।'
তাদের মতে, সংস্থাগুলো যে দেশেরই হোক না কেনো, তাদের কমপক্ষে ২৫ শতাংশ কর দেওয়া উচিত।
- সূত্র: বিবিসি