করোনাভাইরাসের ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট বিশ্বের কাছে উদ্বেগের: ডব্লিউএইচও
করোনাভাইরাসের ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। ডব্লিউএইচও এর মতে, গত সাতদিনে ভারতে করোনা শনাক্তের গড় মান প্রমাণ করে যে, বিশ্বের কাছে এখন উদ্বেগের বিষয় ভারতের করোনা ভ্যারিয়েন্ট।
ভারতে করোনা আক্রান্ত হয়ে সোমবার অর্থাৎ গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে আরও ৩ হাজার ৮৭৬ জনের। এ সময়ে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন ৩ লাখ ২৯ হাজার ৯৪২ জন।
ভারতে মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৪৯ হাজার ৯৯২ জনে এবং শনাক্ত পৌঁছেছে ২ কোটি ২৯ লাখ ৯২ হাজার ৫১৭ জনে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, করোনায় দৈনন্দিন মৃতের সংখ্যা অনুসারে ভারত বর্তমানে শীর্ষে অবস্থান করছে; বিশ্বব্যাপী এ ভাইরাসে নিহত প্রতি তিনজনের মধ্যে একজন ভারতের।
গত সাত দিনের গড় হিসাব বলছে ভারতে করোনা শনাক্তের মান রেকর্ড ৩ লাখ ৯০ হাজার ৯৯৫ জন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, দেশটিতে সম্প্রতি শনাক্ত হওয়া করোনাভাইরাসের ভ্যারিয়েন্টটি (বি.১.৬১৭) সারা বিশ্বের কাছেই উদ্বেগের। প্রাথমিক কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে, এটি অনেক বেশি সংক্রামক।
সোমবার সংস্থাটির করোনা বিষয়ক কারিগরি দলের প্রধান মারিয়া ভ্যান কেরখোভ জেনেভায় অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, 'আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এই ভ্যারিয়েন্টকে আমরা উদ্বেগজনক হিসেবে চিহ্নিত করছি। আমাদের হাতে আসা কিছু তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে অনুমান করা হচ্ছে যে এই ভ্যারিয়েন্ট দ্রুত ছড়ায়'।
পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়াবহ কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত। এ সংকটে ভারতকে সমর্থন যোগাতে বিশ্বের বিভিন দেশ অক্সিজেন সিলিন্ডার এবং অন্যান্য মেডিকেল সামগ্রী নিয়ে এগিয়ে এসেছে। কিন্তু এখনো দেশটির সিংহভাগ হাসপাতাল জীবন রক্ষাকারী চিকিৎসা সামগ্রীর অভাবে লড়াই করছে।
আজ (১১ মে) ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশের তিরুপতির সরকারি হাসপাতালে কমপক্ষে ১১ জন করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু হয়েছে। তারা আইসিইউতে ভর্তি ছিলেন।
চিতোরের জেলাশাসক এম হরি নারায়ণ জানিয়েছেন, সরকারি রুইয়া হাসপাতালে অক্সিজেনের সিলিন্ডার ভর্তি করতে পাঁচ মিনিট দেরি হয়েছিল। কিছুক্ষণের জন্য কমে গিয়েছিল অক্সিজেনের চাপ। তার ফলে কমপক্ষে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে।
তিনি বলেন, 'পাঁচ মিনিটের মধ্যে আবারও অক্সিজেনের জোগান শুরু হয়ে গিয়েছিল। সেই কারণে আরও প্রাণহানি এড়ানো গিয়েছে।'
ভারতে সর্বাধিক মর্যাদাপূর্ণ আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বসবাসরত ষোলজন পরিচালনা পর্ষদ সদস্য এবং কয়েকজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মচারী করোনাভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন বলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় তরঙ্গের ভয়াবহতার মাঝেই ভারতে দ্বিগুণ আতঙ্ক হয়ে এসেছে মিউকরমাইকোসিস বা কালো ছত্রাকের (ব্ল্যাক ফাঙ্গাস) রোগ।
এটি সাইনাস, মস্তিষ্ক এবং ফুসফুসকে প্রভাবিত করে এবং ডায়াবেটিস বা মারাত্মক 'ইমিউনো কম্প্রোমাইজড' ব্যক্তি যেমন ক্যান্সারের রোগী বা এইচআইভি / এইডস আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য প্রাণঘাতী হতে পারে।
ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে করোনাভাইরাস শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক কমিয়ে দেয় এবং তারপরে করোনার চিকিৎসায় ব্যবহৃত স্টেরয়েড এ ছত্রাকঘটিত রোগটি বাড়িয়ে তোলে।
এদিকে দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য গুজরাটের অনেকে করোনা প্রতিরোধের আশায় গোশালায় গিয়ে গোবর এবং গরুর মূত্র শরীরে মাখছে।
অথচ করোনাভাইরাস নিরাময়ে গোবর উপকারী- এমন বিশ্বাসে এটি ব্যবহার করার বিরুদ্ধে সতর্ক করেছেন ভারতীয় চিকিৎসকরা। তাদের মতে, গোবরের কার্যকারিতার কোনও বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই বরং এর মাধ্যমে অন্যান্য রোগ ছড়ানোর ঝুঁকি রয়েছে।
ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ডা. জেএ জয়লাল বলেন, করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে গোবর এবং গোমূত্রের কার্যকারিতার কোনো শক্তিশালী বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই; এটা পুরোপুরি বিশ্বাসনির্ভর।
- রয়টার্স অবলম্বনে