করোনায় বিপাকে হাঙ্গেরির বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা
সাজিন আহমেদ কৌশিক একজন প্রবাসী বাংলাদেশি শিক্ষার্থী যিনি বুদাপেস্ট মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটিতে ডিজিটাল মার্কেটিং এর ওপর মাস্টার্স অব সায়েন্স সম্পন্ন করছেন। তার সাথে কথা বলে জানা গেল যে, দেশটির অর্থনীতিতে একটা বড় অংশ আসে বিভিন্ন ধরনের পর্যটন থেকে। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে এ বছর তেমনভাবে বাহিরের দেশগুলো থেকে হাঙ্গেরিতে পর্যটক আসতে পারেন নি।
এছাড়াও, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে হাঙ্গেরির অর্থনীতি তুলনামূলকভাবে দুর্বল এবং দেশটিতে ঘণ্টা হিসেবে মজুরি খুব একটা বেশি না। তাই বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে আসা অনেক শিক্ষার্থী লেখাপড়ার পাশাপাশি জীবনযাত্রার ব্যয় মেটাতে বিভিন্ন প্রকার পার্টটাইম চাকুরি করে থাকে।
কিন্তু কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে তাদের অনেকে দীর্ঘদিন্ ধরে কর্মহীন। বিশেষ করে দেশটিতে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশি বড় অংশ বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে কাজ করে তাদের প্রয়োজনীয় খরচ মেটানোর চেষ্টা করতো। করোনা পরিস্থিতির কারণে এ বছরের গ্ৰীষ্মকালে দেশটির পর্যটন শিল্প খুব বেশি আলোর মুখ না দেখায়, এসকল রেস্টুরেন্ট সেভাবে আর চাঙ্গা হতে পারে নি।
সাজিন আহমেদ কৌশিক আরও জানান, সব মিলিয়ে পূর্ব ইউরোপের দেশ হাঙ্গেরিতে দুইশ' থেকে তিনশ' বাংলাদেশির বসবাস রয়েছে যাদের বেশিরভাগ শিক্ষার্থী। তাদের মাঝে সুসংগঠিত কোনও কমিউনিটি না থাকায় এবং একই সাথে হাঙ্গেরিতে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের কেউই সামাজিক কিংবা অর্থনৈতিক দিক থেকে তেমন একটা উচ্চ অবস্থানে না থাকায়- এরকম পরিস্থিতিতে যে কেউ কারও পাশে থাকবে সে সুযোগও নেই।
এছাড়াও সেকেন্ড ওয়েভে করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বিদেশি নাগরিকদেরকে যাতায়াতের ব্যাপারে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তা বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ওপর এক ধরণের বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করবে বলে তিনি মনে করেন। প্রথমত হাঙ্গেরির ইউনিভার্সিটিগুলো এখনও পুরোপুরি সিদ্ধান্ত দিতে পারেনি যে আগামী সেমিস্টারের কার্যক্রম অনলাইনে চলবে নাকি সবাইকে স্বশরীরে উপস্থিত থেকে শিক্ষা কার্যক্রমে অংশ নিতে হবে।
বাংলাদেশ সরকারের সাথে হাঙ্গেরির সরকারের দ্বি-পাক্ষিক চুক্তির কারণে গতবছর থেকে প্রতি শিক্ষাবর্ষে ১০০ জন শিক্ষার্থী স্টাইপেনডিয়াম হাঙ্গেরিকাম নামক শিক্ষাবৃত্তির অধীনে দেশটির বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাচেলর, মাস্টার্স কিংবা পিএইচডির সুযোগ পেয়ে থাকে। পাশাপাশি বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে নিজ অর্থায়নে যাওয়া অনেকেই উচ্চশিক্ষার জন্য হাঙ্গেরিকে বেছে নিচ্ছেন।
তবে হাঙ্গেরি সরকারের সাম্প্রতিক যাতায়াত সিদ্ধান্ত তাদেরকে এক ধরনের অনিশ্চয়তার মধ্যে ঠেলে দিতে পারে বলে, তিনি জানিয়েছেন।
এছাড়াও, বাংলাদেশ কিংবা বাহিরের অন্যান্য দেশের আটকে পড়া শিক্ষার্থী যারা স্টুডেন্ট ভিসায় হাঙ্গেরিতে এসেছিলেন তাদের জীবনও এক ধরনের দোলাচলে আটকে গিয়েছে। বিশেষ করে, কারও যদি টেম্পোরারি রেসিডেন্ট পারমিটের মেয়াদ প্রায় শেষের দিকে হয়ে থাকে তাহলে তার ক্ষেত্রে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, সে বিষয়ে হাঙ্গেরির সরকার এখনও সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেয়নি।
দেশটিতে বাংলাদেশের কোনও দূতাবাস নেই এবং যে কোনও রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে সেখানকার প্রবাসী বাংলাদেশিদেরকে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনাতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের সাথে যোগাযোগ করতে হয়। তাই এ পরিস্থিতিতে কৌশিক মনে করেন, ভিয়েনার বাংলাদেশ দূতাবাসের উচিৎ হাঙ্গেরির সরকারের বিভিন্ন ঊর্ধ্বতন মহলের সাথে কূটনৈতিকভাবে আলোচনার মাধ্যমে দেশটিতে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা এ পরিস্থিতিতে যে সকল সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন, সেগুলো সমাধানে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া।
- লেখক: শিক্ষার্থী, ইউনিভার্সিটি অফ নোভা গোরিছা, স্লোভেনিয়া