করোনার টিকা মানুষকে ‘কুমির’ বানিয়ে দেবে: ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জইর বলসোনারো অভিযোগ তুলেছেন, করোনাভাইরাসের টিকা মানুষকে কুমির বানিয়ে দিতে পারে! শুধু এটুকুতেই তার ঠাট্টা সীমাবদ্ধ নেই! তিনি আরও বলেন, এই টিকা নিলে নাকি পুরুষেরা নারীকণ্ঠে কথা বলবে এবং নারীদের দাড়ি গজাবে!
এ কারণেই তিনি নাকি ভ্যাকসিন নেবেন না।
প্রথমে করোনাভাইরাস, আর এখন ভাইরাসের টিকা নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ শুরু করেছেন জইর বলসোনারো। এ নিয়ে পৃথিবীজুড়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা।
ব্রাজিলে মার্কিন ফার্মা জায়ান্ট ফাইজার ও জার্মান সংস্থা বায়োএনটেকের তৈরি ভ্যাকসিনের ট্রায়াল চলছে কয়েক মাস ধরে। ইতোমধ্যেই ভ্যাকসিনটি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সৌদি আরবের মতো দেশগুলোতে ব্যবহারের অনুমতি পেয়েছে। ব্রাজিলেও শুরু হয়েছে টিকাদান কর্মসূচি।
কিন্তু গত বৃহস্পতিবার দেশটির প্রেসিডেন্ট বলে বসেন, 'এই টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার জন্য আমরা কোনোভাবেই দায়ী নই।'
অথচ, গত জুলাইয়ে তিনি নিজেই কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়েছিলেন। সপ্তাহ তিনেক অসুস্থ থাকার পর সুস্থ হন বলসোনারো। তাতেও কোভিড নিয়ে তার তুচ্ছতাচ্ছিল্য বিন্দুমাত্র কমেনি।
বলসোনারো বলেন, 'আপনি যদি কুমিরে রূপান্তরিত হন, সেটা আপনার সমস্যা। যদি অতিমানবে (সুপারহিউম্যান) পরিণত হন, যদি কোনো মহিলার দাড়ি উঠতে শুরু করে, অথবা কোনো পুরুষ নারীকণ্ঠে কথা বলতে শুরু করে, তাহলে করার কিছুই থাকবে না।'
এদিকে, দেশটির সুপ্রিম কোর্ট বৃহস্পতিবার রুল জারি করেছেন, 'করোনা ভ্যাকসিন নেওয়া বাধ্যতামূলক; তবে কারোও ওপর জোর খাটানো চলবে না।' তার মানে, চাইলে ভ্যাকসিন না নেওয়ার জন্য জরিমানা বা বিভিন্ন জায়গায় প্রবেশের অনুমতি না দিলেও জোর করে ভ্যাকসিন দেওয়া যাবে না।
অথচ সুপ্রিম কোর্টের এই আদেশকে অনেকটা বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে জইর বলসোনারো বলেছেন, তিনি কখনোই করোনাভ্যাকসিন নেবেন না।
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট বলেন, 'অনেকেই বলবে, আমি বাজে উদাহরণ সৃষ্টি করছি। কিন্তু যারা এসব কথা বলে, সেই নির্বোধদের বলছি, আমি ইতোমধ্যেই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছি, আমার অ্যান্টিবডি রয়েছে। তাহলে আমি কেন ভ্যাকসিন নেব?'
অথচ, বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে বেশ কয়েকজন করোনা রোগী সুস্থ হয়ে ওঠার পর আবারও আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তাছাড়া, একবার আক্রান্ত হওয়ার পর রোগীর শরীরে যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়, সেটির প্রতিরোধী ক্ষমতা কতদিন থাকে, তা-ও অনিশ্চিত।
এর আগে গত বুধবার টিকাদান কর্মসূচি উদ্বোধন করেই ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট ঘোষণা দেন, এটা বিনামূল্যে হলেও বাধ্যতামূলক নয়।
করোনা মহামারিকে প্রথম থেকেই গুরুত্ব না দেওয়ায় এখনো খেসারত দিচ্ছে ব্রাজিলের মানুষ। এখন পর্যন্ত দেশটিতে ৭১ লাখ ৬৪ হাজার মানুষ করোনার শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ রোগী কোনো ভ্যাকসিন ছাড়াই সুস্থতা লাভ করলেও প্রাণহানি ঘটেছে ১ লাখ ৮৫ হাজারের বেশি।
- সূত্র: এনডিটিভি