কোভিড-১৯ উপশমে কাজ করে হাঁপানির ওষুধ বুডেসোনাইড: গবেষণা
বুডেসোনাইড নামের সহজলভ্য ও অপেক্ষাকৃত কম দামী একটি জেনেরিক ওষুধ কোভিডজনিত অসুস্থতা উপশমে কাজ করে। ব্রিটেনে পরিচালিত এক ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের ফলাফলে এমনটাই উঠে এসেছে।
এটি এক ধরনের করটিকোস্টেরয়েড ওষুধ যা সাধারণত হাঁপানি ও ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ নামের এক ধরনের ফুসফুসের রোগে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। রোগীরা ইনহেলার দিয়েই ওষুধটি নিয়ে থাকেন।
অন্যান্য স্টেরয়েডের মতো ওষুধটির প্রদাহ প্রশমনকারী (অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি) গুণ রয়েছে, একারণেই কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় এটি ব্যবহারের সুফল মিলেছে।
প্রাথমিকভাবে, কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদে মধ্যে ক্রনিক পালমোনারি ডিজিজে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কম থাকার বিষয়টির চিকিৎসকদের নজরে আসে। এ রোগে আক্রান্ত রোগীরা সাধারণভাবেই ফ্লুসহ অন্যান্য ফুসফুসের সংক্রমণ রোগে আক্রান্ত হওয়ার অধিক ঝুঁকিতে থাকেন।
পরবর্তী সময়ে গবেষণায় দেখা যায়, পেট্রি ডিশে বুডেসোনাইড কোভিড-১৯ রোগ সৃষ্টিকারী সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের প্রতিলিপনে বাধা দেয়। ভাইরাসের বংশবৃদ্ধির লাইটিক চক্রে ভাইরাসের পোশক দেহের কোষের সাথে সংযুক্ত হয়ে নিজের ডিএনএ পোষকের দেহ কোষের মধ্যে প্রবেশ করানোর মাধ্যমে ভাইরাসের বংশবিস্তারই প্রতিলিপন। অর্থাৎ, এই ওষুধ ব্যবহারে ভাইরাসের বংশবৃদ্ধি রোধ করা সম্ভব, ফলে গুরুতর অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কাও কমে আসে।
কোভিড-১৯ রোগীরা ঘরে বসেই কী কী চিকিৎসা নিতে পারেন তা অনুসন্ধানে পরিচালিত প্রিন্সিপাল নামের ট্রায়ালে এসব জানা গেছে। ট্রায়ালে কোভিড-১৯ এর উপসর্গ আছে এবং আক্রান্ত হয়ে গুরুতর অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা থাকা রোগীদের পর্যবেক্ষণ করা হয়। ট্রায়ালে অংগ্রহণকারীদের মধ্যে বিভিন্ন স্বাস্থ্যগত জটিলতা থাকা ৫০ বছর ও ততোর্ধ বয়সী এবং ৬৫ বছর ও ততোর্ধ বয়সীরা ছিলেন। দৈবক্রমে নির্বাচিত ৭৫০ জনকে সহজ ব্যবহারযোগ্য বুডেসোনাইডের ইনহেলার ব্যবহার করতে বলা হয়। তাদের সাথে সাধারণ চিকিৎসা পাওয়া (পেরাসিট্যামল নেওয়া, রক্তের অক্সিজেনের মাত্রা খেয়াল রাখা) এক হাজার রোগীর তুলনামূলক বিশ্লেষণ করা হয়। ট্রায়ালে যুক্ত হওয়ার আগে প্রতিজন স্বেচ্ছাসেবী গড়ে ৬ দিন অসুস্থ ছিলেন।
গবেষকরা ২৮ দিন ধরে তাদের পর্যবেক্ষণ করেন। সাধারণ চিকিৎসা পাওয়া রোগীদের সেরে উঠতে গড়ে সময় লাগে ১৪ দিন। অন্যদিকে, বুডেসোনাইড গ্রহণ করা রোগীদের সেরে উঠতে ৩ দিন কম সময় লাগে। দুটি গ্রুপের অংশগ্রহণকারীদের প্রতিদিনের জিজ্ঞাসায় জানা গেছে, বুডেসোনাইড গ্রহণকারীরা প্রতিদিন আগের চেয়ে ভালো বোধ করার কথা জানিয়েছেন। ট্রায়াল চলার ২৮ দিনের মধ্যে যারা ওষুধটি নেননি, তাদের ১০.৩ শতাংশ হাসপাতালে ভর্তি হন। দুটি গ্রুপের মানুষের পার্থক্যগুলো বিবেচনায় রেখে গবেষকরা সিদ্ধান্তে এসেছেন, ওষুধটি গ্রহণ করা রোগীদের মধ্যে হাসপাতালে ভর্তির হার ২.১ শতাংশ পয়েন্ট কম।
আসন্ন দিনগুলোতে চূড়ান্ত বিশ্লেষণ আশানুরূপ হলে, ওষুধটি কোভিড-১৯ আক্রান্ত প্রতি ৫ জন রোগীর ১ জনের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার আশঙ্কা কমাবে এমনটাই আশা করা হচ্ছে।
কম দামী এই জেনেরিক ওষুধটি বিশ্বের প্রায় সব দেশেই সহজলভ্য। "এটি কার্যত পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া মুক্ত," বলেন প্রিন্সিপাল ট্রায়ালের অন্যতম গবেষক অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিস বাটলার।
যুক্তরাজ্যে ইনহেলারসহ ওষুধটির দাম ১৪ পাউন্ড, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১৬৩২ টাকা। কোভিড-১৯ চিকিৎসায় ওষুধটি ব্যবহার শুরু হলে রোগীদের ভোগান্তি আরও কমে আসবে এমনটাই আশা গবেষকদের।