৫০ বছরে প্রথম হাঁপানি রোগের নতুন চিকিৎসা পদ্ধতি আবিষ্কার
৫০ বছরের মধ্যে এই প্রথম অ্যাজমা রোগের নতুন চিকিৎসা পদ্ধতি খুঁজে পেয়েছেন গবেষকরা। তবে এটি কোনো মুখে সেবনের ওষুধ নয়, একটি ইনজেকশন। খবর বিবিসির
এই ইনজেকশনটি শরীরের ইমিউন সিস্টেমের একটি অংশকে প্রতিরোধ করে, যা হাঁপানি এবং দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসকষ্টজনিত রোগ (সিওপিডি) সংক্রমণের সময় অতিরিক্ত সক্রিয় হয়ে যায়। এর ফলে, এই রোগগুলোর তীব্র সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
বেনরালিজুমাব নামক এই ওষুধটি ইতোমধ্যে গুরুতর অসুস্থ রোগীদের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে।
তবে নতুন গবেষণা অনুযায়ী, এটি যুক্তরাজ্যে প্রতি বছর প্রায় দুই মিলিয়ন হাঁপানি রোগীর চিকিৎসায় নিয়মিত ব্যবহার করা যেতে পারে।
কিংস কলেজ লন্ডনের একদল গবেষক এই গবেষণাটি করেছে।
তারা জানিয়েছে, ওষুধটি একটি 'গেম-চেঞ্জার' এবং এই রোগের চিকিৎসায় এটি বিপ্লব আনতে পারে।
গবেষণায় আরও জানা গেছে, সব হাঁপানি বা সিওপিডি সংক্রমণ এক রকম নয়, বরং বিভিন্ন রোগীর শরীরের ইমিউন সিস্টেমের ভিন্ন ভিন্ন অংশে এর বাড়তি প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।
কিংস কলেজের অধ্যাপক মোনা বাফাদহেল বলেছেন, 'এখন আমরা বুঝতে পারছি যে প্রদাহের ভিন্ন ভিন্ন প্যাটার্ন রয়েছে। তাই আমরা আরও বিচক্ষণতার সঙ্গে সঠিক রোগীকে সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা দিতে পারব।'
বেনারালিজুমাব এক ধরনের শ্বেত রক্তকণিকাকে লক্ষ্য করে কাজ করে, যাকে ইওসিনোফিল বলা হয়। এটি ফুসফুসে প্রদাহ এবং সংক্রমণ সৃষ্টি করতে পারে।
প্রায় অর্ধেক হাঁপানি সংক্রমণ এবং প্রায় এক তৃতীয়াংশ সিওপিডি সংক্রমণের ক্ষেত্রে দায়ী এই ইওসিনোফিল।
যদি নিয়মিত ইনহেলার দিয়ে শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, কাশি এবং বুকে চাপ প্রভৃতি নিয়ন্ত্রণ করা না যায়, তাহলে চিকিৎসকরা বর্তমানে স্টেরয়েডের একটি কোর্স দেন।
এই গবেষণাটি ১৫৮ জন রোগীর ওপর করা হয়েছিল। সংক্রমণের পরবর্তী তিন মাস এই রোগীদের পর্যবেক্ষণে রাখা হয়।
দ্য ল্যানসেট রেসপিরেটরি মেডিসিনে প্রকাশিত গবেষণার ফলাফল অনুসারে, নতুন ওষুধ বনাম স্টেরয়েড ব্যবহারের ক্ষেত্রে চিকিৎসায় ব্যর্থতার হার ছিল:
• ৭৪% স্টেরয়েড ব্যবহারে
• ৪৫% নতুন থেরাপি ব্যবহারে
নতুন থেরাপি ব্যবহার করা রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সম্ভাবনা কম, তাদের পুনরায় চিকিৎসার প্রয়োজন হতো না এবং তাদের মৃত্যুর ঝুঁকিও কম ছিল।
প্রফেসর বাফাদহেল বলেছেন, এটি অনেক মানুষের উপকারে আসবে। কারণ প্রতি বছর দুই মিলিয়ন মানুষ এই রোগে সংক্রমিত হয়, এটি 'কোনো ছোট সংখ্যা নয়'।
তিনি বলেন, 'এটি একটি গেম-চেঞ্জার, গত ৫০ বছরে আমাদের চিকিৎসায় কোনো পরিবর্তন আসেনি- গুরুতর অসুস্থ রোগীর চিকিৎসায় এটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে পারে।'
এই গবেষণায় অংশ নেওয়া স্বেচ্ছাসেবীরা নতুন ওষুধ ব্যবহারে তাদের ক্রমান্বয়ে সুস্থ হওয়ার লক্ষণ এবং জীবনযাত্রার গুণগত মানের উন্নতির কথা জানিয়েছেন।
অক্সফোর্ডশায়ারের বাসিন্দা অ্যালিসন স্পুনার (৫৫) এই গবেষণায় স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে অংশ নিয়েছিলেন। তিনি শৈশব থেকে হাঁপানিতে ভুগছেন, তবে গত পাঁচ বছরে তার অবস্থার অবনতি হয়েছে এবং তিনি তিনটি বড় অ্যাটাকের শিকার হয়েছেন।
তিনি বলেন, 'অবস্থা আরও খারাপ হতে শুরু করেছিল।'
অ্যালিসন বলেন, ইনজেকশন নেওয়ার পর তিনি 'একেবারে অন্যরকম' অনুভব করেছেন।
তিনি জানান, 'শুধু ডাক্তার বলেছেন বলে' এখনও তিনি ইনহেলার ব্যবহার করেন।
তিনি আরও বলেন, 'দুর্ভাগ্যজনক যে কোনো ওষুধেই হাঁপানি থেকে পুরোপুরি মুক্তি পাওয়া যায় না। তবে এবারের ওষুধে প্রায় সুস্থ হয়ে উঠেছি, আসলেই এটা অনেক বিস্ময়কর।'