জীবাণুনাশক দিয়ে ফুসফুস পরিষ্কারের পরামর্শ দিলেন ট্রাম্প
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিমত, করোনাভাইরাসে আক্রান্তের শরীরে ইঞ্জেকশন দিয়ে জীবাণুনাশক ঢুকিয়ে দিলে নাকি ফুসফুস জীবাণুমুক্ত হবে! অর্থাৎ সেরে যাবে করোনার সংক্রমণ!
বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসের দৈনিক সংবাদ সম্মেলনে এমন যুক্তি-বিবর্জিত উদ্ভট পরামর্শ দেন তিনি। এ সময়ে তিনি কথা বলেছেন রোগীর শরীরের ভেতরে আলো ঢুকিয়ে দেওয়ার প্রসঙ্গেও।
হোমল্যান্ড সিকিউরিটির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি গবেষণা বিভাগের প্রধান বিল ব্রায়ান্টের সঙ্গে এক বৈঠকের পর ট্রাম্প এমন মন্তব্য করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে বিলও ট্রাম্পের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে বিল তার বিভাগের এক গবেষণার কথা জানান। যা তিনি বৈঠকে ট্রাম্পকেও জানিয়েছিলেন। ওই গবেষণায় দেখা গেছে, অধিকতর উষ্ণ এবং আর্দ্র আবহাওয়ায় করোনাভাইরাসের জীবাণু বেশিক্ষণ বাঁচে না।
তিনি বলেন, সূর্যের তাপে বা প্রখর রোদে এই জীবাণু খুব তাড়াতাড়ি মারা যায়। খবর রয়টার্সের।
এই কথার সঙ্গে সঙ্গেই শরীরের ভেতরে আলো প্রবেশের ব্যবস্থা করে জীবাণু হত্যা করা সম্ভব কি না, তা জানতে চান ডোনাল্ড ট্রাম্প।
সংবাদ সম্মেলন চলাকালীন তিনি বিল ব্রায়ান্টের উদ্দেশে বলেন, তাহলে আমরা যদি (রোগীর) শরীরে উচ্চ তাপের ব্যবস্থা করি- যেমন তাকে যদি অতি বেগুনি রশ্মি কিংবা শক্তিশালী কোনো আলোর উৎসের সামনে আনি, তাহলে? আমার ধারণা, করোনা টেস্ট চলার কারণে আপনারা এটা নিয়ে পরীক্ষার সুযোগ পাননি বলেই আমাকে জানিয়েছিলেন।
ট্রাম্প আরও বলেন, তখন আমি আপনাদের বলেছিলাম, শরীরের ভেতরে আলোর ব্যবস্থা করতে হবে। চামড়ার ভেতর দিয়ে হোক বা অন্য কোনো পদ্ধতিতে। আমার মনে পড়ে, আপনি বলেছিলেন, আপনারা এসব পরীক্ষা করার জন্য বিবেচনা করবেন।
'আমার ধারণা জীবাণুনাশক দিয়ে এক মিনিটের ভেতর করোনার জীবাণু মেরে ফেলা সম্ভব। আপনারা কি এটা করতে পারবেন? মানে, ইঞ্জেকশন দিয়ে শরীরে এমন পরিষ্কারক (রাসায়নিক) ঢুকিয়ে দিয়ে বা তা দিয়ে সরাসরি (ফুসফুস) পরিষ্কার করে? আপনি ভালো করেই জানেন, এটা (কোভিড-১৯) ফুসফুসকে সংক্রমিত করে এবং এরপর ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত করার মাধ্যমে রোগীকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়। তাই আমার পরামর্শগুলো আপনাদের পরীক্ষা করে দেখা উচিত'- এসব কথাও বলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
তবে ঠিক কোন ধরনের জীবাণুনাশক শরীরে ঢোকানোর কথা তিনি বলছেন, তা নির্দিষ্ট করে উল্লেখ করেননি।
এ ব্যাপারে বিশ্বখ্যাত শ্বাসযন্ত্রের রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. ভিন গুপ্ত বলেন, 'জীবাণুনাশক ইনেজকশন দিয়ে বা তা রোগীকে খাইয়ে শরীরে ঢোকানোর চিন্তা খুবই বিপজ্জনক। এটা চরম দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্যও বটে। সাধারণত মানুষ যখন আত্মহত্যা করে, তখন তাদের এসব জিনিস খেয়ে মরতে দেখা যায়।'
ট্রাম্প অবশ্য বরাবরই চিকিৎসাবিজ্ঞানকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নানা উদ্ভট পরামর্শ দিয়ে চলেছেন। করোনাভাইরাস সারাতে টোটকা উপদেশ দেওয়াতেও তার জুড়ি মেলা ভার। এমনকি অপরীক্ষিত ওষুধকেও যুগান্তকারী বলে দাবি করছেন তিনি।
কিছুদিন আগেই হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন নিয়ে তিনি এমন অতি-উৎসাহী কথাবার্তা বলা শুরু করেছিলেন। তার প্রশাসনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা অপ্রমাণিত কোনো ওষুধকে এমন মহিমান্বিত করা থেকে ট্রাম্পকে বিরত থাকতে বললেও- তা তিনি কানে তোলেননি।