'টিকা না নিলে থাকতে হবে লকডাউনে'
পশ্চিম ইউরোপের দেশ অস্ট্রিয়ায় পাল্লা দিয়ে বাড়ছে করোনার সংক্রমণ। ফলে যারা এখনো করোনাপ্রতিরোধী টিকা নেননি, তাদেরকে লকডাউনে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অস্ট্রীয় সরকার।
পূর্ণ ডোজ টিকা না নেওয়া নাগরিকদের এ সংখ্যা প্রায় ২০ লাখ।
প্রাথমিকভাবে লকডাউন চলবে ১০ দিন।
সোমবার থেকে দেশটির উচ্চ প্রদেশ (আপার অস্ট্রিয়া) এই লকডাউন কার্যকর করবে বলে ঘোষণা দিয়েছে।
তবে ১২ বছরের কম বয়সী শিশু এবং যারা সম্প্রতি ভাইরাস থেকে সুস্থ হয়েছেন, তারা লকডাউনের আওতাভুক্ত নন।
দেশটির চ্যান্সেলর আলেকজান্ডার শ্যালেনবার্গ বলেছেন, যারা এখনো টিকা নেননি, তাদের জন্য এ লকডাউন 'অনিবার্য'।
তিনি বলেন, যারা টিকা নেবার বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি, তাদের জন্য দেশের বাকি দুই-তৃতীয়াংশ লোক ভুগতে পারে না।
এখন পর্যন্ত অস্ট্রিয়ার মোট জনসংখ্যার প্রায় ৬৫% টিকার সম্পূর্ণ ডোজ গ্রহণ করেছে, এটাই ইউরোপের পশ্চিমাংশে টিকাগ্রহণের সর্বনিম্ন হার।
অথচ দেশটিতে গত সাতদিনে প্রতি লাখে ৮০০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে, যা পুরো ইউরোপের মধ্যে সর্বোচ্চ।
আপাতদৃষ্টে মনে হচ্ছে, ইউরোপ আবারও মহামারি দ্বারা সবচেয়ে প্রভাবগ্রস্ত অঞ্চলের অন্যতম হতে চলেছে এবং ইতিমধ্যে এর অনেকগুলো দেশ অভ্যন্তরীণ করোনা নিষেধাজ্ঞা বাড়িয়ে তুলছে।
জার্মানি এবং চেক প্রজাতন্ত্রের সীমান্তবর্তী আপার অস্ট্রিয়ায় প্রায় দেড় মিলিয়ন লোকের বাস; দেশটির সর্বোচ্চ সংক্রমণ এবং সর্বনিম্ন টিকা দেওয়ার হার এই অঞ্চলেই।
যেসব অস্ট্রীয় নাগরিক টিকা নেননি, তাদের জন্য আগে থেকেই রেস্তোরাঁ, সিনেমা, স্কি লিফট এবং নাপিতের কাছে যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা ছিল। নতুন বিধি অনুযায়ী, এবার থেকে তাদের ঘরের বাইরে যাওয়াই মানা।
সবচেয়ে কঠোর লকডাউন পালন করবে আপার অস্ট্রিয়া। কেবলমাত্র কর্মক্ষেত্র বা খাবার কেনার মতো জরুরী প্রয়োজনেই বের হওয়া যাবে।
এই লকডাউনের ঘোষণায় শত শত মানুষ রাজধানী ভিয়েনায় চ্যান্সেলরের দপ্তরের বাইরে বিক্ষোভ করেছে, তাদের ব্যানারে লেখা ছিল- "দেহ আমাদের, সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতাও আমাদের।"
একজন নারী বিক্ষোভকারী জানান, তিনি তার অধিকারের জন্য লড়াই করছেন। কারণ, তাদের সাথে যা ঘটছে তা সম্পূর্ণ বৈষম্যমূলক।
সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মানুষের টিকা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে পাবলিক স্পটগুলোতে পুলিশ মোতায়েন করা হবে।
সংক্রমণ বাড়তে থাকলে অন্যান্য এলাকায় টিকাবিহীনদের জন্যও কঠোর লকডাউন চালু করা হতে পারে বলে কর্তৃপক্ষের মত।
তবে সমালোচকরা বলছেন, এই লকডাউন কার্যকর করা খুব একটা সহজ হবে না।
দেশটির ডানপন্থী বিরোধী দল ফ্রিডম পার্টি টিকা নিয়ে নাগরিকদের সংশয়কে কেন্দ্র করে এক ধরনের প্রচারণা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে, যা ইতিমধ্যেই অনেক অস্ট্রিয়ানের সমর্থন লাভ করেছে। তাদের যুক্তি হলো, এই ধরনের পদক্ষেপ দেশে 'সেকেন্ড ক্লাস সিটিজেন' এর মতো বিভাজন তৈরী করবে।
- সূত্র-বিবিসি