প্রিন্স ফিলিপের মৃত্যু নিয়ে গণমাধ্যমের প্রচারের বিরুদ্ধে লক্ষাধিক অভিযোগ
প্রিন্স ফিলিপের মৃত্যুর খবর গণমাধ্যমে প্রচারের মাত্রা নিয়ে যুক্তরাজ্যের প্রধান গণমাধ্যম বিবিসির কাছে এক লাখেরও বেশি অভিযোগ জমা পড়েছে বলে বৃহস্পতিবার একটি সূত্র জানায়।
বিবিসির প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা যায়, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত 'ডিউক অব এডিনবার্গের মৃত্যুর কভারেজ নিয়ে প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করে' ১ লাখ ৯ হাজার ৭৪১টি অভিযোগ তাদের কাছে জমা পড়েছে।
নিজেদের ওয়েবসাইটে এক বিবৃতিতে বিবিসি লিখেছে, 'ডিউক অব এডিনবার্গ, এইচআরএইচ প্রিন্স ফিলিপের মৃত্যু ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা যা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গন, উভয় ক্ষেত্রেই ব্যাপক আগ্রহের সৃষ্টি করে। কিন্তু এর ফলে স্বাভাবিক টিভি-রেডিও শোগুলো সাময়িক বিঘ্নিত হওয়ায় কিছু দর্শকের বিরক্তির খবর আমরা পেয়েছি।'
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, 'জাতীয় তাৎপর্যপূর্ণ কোনো ঘটনায় আমরা সবকিছু সতর্কভাবে বিবেচনা ছাড়াই এমন কোনো সিদ্ধান্ত নিইনা বা পরিবর্তন আনি না, যা জাতীয় গণমাধ্যম হিসেবে বিবিসির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে পারে।'
বিবিসির একজন মুখপাত্র এ-ও জানান, তারা জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে নিজেদের কভারেজ নিয়ে গর্বিত।
গত মাসে অপরাহ উইনফ্রের সঙ্গে হ্যারি ও মেগানের বিস্ফোরক সাক্ষাৎকার ও হিট টিভি সিরিজ 'দ্য ক্রাউন' প্রচারের পর থেকেই ব্রিটিশ রাজপরিবার নিয়ে সারা বিশ্বের মানুষের আগ্রহ তুঙ্গে। কিন্তু গত ৯ এপ্রিল প্রিন্স ফিলিপের মৃত্যুতে অন্তত ব্রিটেনে গণমাধ্যম সম্পৃক্তি একেবারে শিখরে ওঠে।
ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং করপোরেশন (বিবিসি) ওয়াল-টু-ওয়াল কভারেজ দিচ্ছে-এমন অভিযোগ আসার পর নিজেদের ওয়েবসাইটে একটি উৎসর্গমূলক প্রতিক্রিয়া পোস্ট করে বিবিসি।
রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের সারা জীবনের সঙ্গী ও ব্রিটিশ ইতিহাসের সবচেয়ে দীর্ঘদিনের সহচর প্রিন্স ফিলিপ ৯৯ বছর বয়সে গত ৯ এপ্রিল শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এ উপলক্ষে বিবিসি নিজেদের নিয়মিত টিভি ও রেডিও অনুষ্ঠান সরিয়ে দিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন ও শ্রদ্ধাজ্ঞাপনসূচক অনুষ্ঠান প্রচার করে। জনপ্রিয় টিভি শো 'ইস্টইন্ডার্স' ও রান্নার প্রতিযোগিতা 'মাস্টারশেফ'-এর মত অনুষ্ঠানও স্থগিত রাখা হয়। অন্যান্য চ্যানেলেও একই কাজ করা হয়।
এছাড়াও বাকিংহাম প্রাসাদ থেকে মৃত্যুসংবাদ প্রকাশের পর জাতীয় রেডিওও তাদের সবকিছুর সুর বদলে ফেলে। অন্যান্য মিউজিক প্রোগ্রাম সরিয়ে দিয়ে তারা দুঃখভারাক্রান্ত গান প্রচার করতে থাকে।
কিন্তু এই প্রক্রিয়ার ফলে বিবিসি তার বেশকিছু দর্শকও হারিয়েছে। বিবিসি ওয়ান-এ গত সপ্তাহের শুক্রবারে ৭টা থেকে ৮টা পর্যন্ত দর্শকসংখ্যা ২ দশমিক ৫৬ মিলিয়ন থাকলেও, এ সপ্তাহে তা ২ দশমিক ৪১ মিলিয়নে নেমে গেছে। অর্থাৎ তাদের প্রায় ৬ শতাংশ দর্শক কমে গেছে বলে জানিয়েছে 'ডেডলাইন'।
বিবিসি টু-এর দর্শকসংখ্যাও ৬৫ শতাংশ কমে গেছে বলে জানা যায়।
বিবিসি-ফোর ইংল্যান্ড নারী দলের ফুটবল খেলা প্রচারসহ তাদের সকল অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ায় অনলাইনে কড়া সমালোচনা করেছেন দর্শকরা।
বিবিসির প্রতিদ্বন্দ্বী গণমাধ্যম 'আইটিভি' প্রিন্স ফিলিপকে নিয়ে বিকেল ৫টায় একটি চলচ্চিত্র প্রচার করে। এছাড়াও তারা ৭টায় দুই ঘণ্টাব্যাপী বিশেষ সংবাদ প্রচার ও ৯টায় প্রামাণ্যচিত্র প্রচার করে ফিলিপকে নিয়ে। ফলে স্বভাবতই বিরক্ত হয়েছেন কিছু দর্শক। শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত আইটিভিরও রেটিং কমেছে ৬০%।
তবে প্রিন্স ফিলিপের মৃত্যুর ঘটনার তুলনামূলকভাবে কম কভারেজ দিয়েছে 'চ্যানেল ফোর'। তাদের রাত ৯টার শো 'গোগলবক্স' সেদিন রেকর্ড ৪ দশমিক ২ মিলিয়ন দর্শক দেখেছেন।
সকল টিভি দর্শকদের থেকে প্রাপ্ত লাইসেন্স ফি'র অর্থায়নে চালিত বিবিসি এক শতক ধরে যুক্তরাজ্যের কেন্দ্রীয় গণমাধ্যম হিসেবে বিবেচিত হলেও বর্তমানে শীর্ষে টিকে থাকার জন্য তাদের বেশ সংগ্রামই করতে হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বিবিসির ভবিষ্যৎ অর্থায়ন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
এছাড়াও নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন ও ইউটিউবের মতো নতুন ক্রেজ দর্শকদের বেশি আকর্ষণ করছে এবং বিবিসিকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে।
টিভি লাইসেন্স দিতে না পারা কোনো অপরাধ নয় বলে গণ্য করা দলটি শুক্রবার জানায়, অভিযোগ ফরম গঠন করা ছিল 'লজ্জাজনক' এবং তারা বিবিসিকে 'ব্রিটিশবিরোধী' বলে আখ্যা দেয়।
-
সূত্র: সিএনএন