বিনোদন পার্কে একদিনের ছুটি কাটাল রণক্লান্ত তালেবান যোদ্ধারা
দীর্ঘদিনের ক্লান্তিকর ব্যস্ততার পর গত শুক্রবার (৮ অক্টোবর) কাবুলের একটি জনপ্রিয় ওয়াটারসাইড বিনোদন পার্কে ছুটি উপভোগ করেছে শতাধিক তালেবান যোদ্ধা।
মধ্য-আগস্টে তালেবানরা আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের পর থেকেই নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করে আসছে এই যোদ্ধারা। এরও আগে মাসের পর মাস যুদ্ধে নিয়োজিত ছিল তারা।
ফলে শুক্রবার দিনভর যখন মেশিনগান হাতে অলসভাবে কারগায় অবস্থিত পার্কের এদিক-ওদিক ঘুরে বেড়াতে থাকে তালেবান সৈন্যরা, তা এক অভিনব দৃশ্যের অবতারণা ঘটায়।
'আমি কাবুলে এসে এবং প্রথমবারের মতো কারগায় ঘুরে বেড়াতে পেরে খুবই উৎফুল্ল বোধ করছি,' রয়টার্সকে জানান কেন্দ্রীয় ময়দান ওয়ারদাক প্রদেশ থেকে আসা ২৪ বছর বয়সী যোদ্ধা হালিমি। তবে তিনি নিজের পুরো নাম প্রকাশ করতে চাননি।
'এখানকার মানুষেরা আমাকে ও আমার সঙ্গীদেরকে একদম ভাইসুলভ আচরণে স্বাগত জানিয়েছে,' তিনি বলেন।
সশস্ত্র যোদ্ধারা পার্কে গিয়ে পার্কের জলাশয়ের কোল ঘেঁষে গড়ে ওঠা স্টল থেকে চা পান করে এবং বিভিন্ন স্ন্যাকস কেনে।
অনেককে আবার বিনোদন পার্কের বিভিন্ন রাইডে ওঠার জন্যও লাইন দিতে দেখা যায়। তারা পাইরেট শিপ ও ফ্লায়িং চেয়ার্স ক্যারাসেলের মতো রাইডে ওঠে।
হালিমির পেছনেই ছিলেন ময়দান ওয়ারদাক থেকে আসা আরেক যোদ্ধা, ২৫ বছর বয়সী জিয়াউল হক। ঘোড়ার পিঠে চড়তে পেরে দারুণ আনোন্দিত মনে হয় তাঁকে।
এই যোদ্ধাদের মধ্যে অধিকাংশই আগে কখনো কাবুলে আসেনি। তালেবানরা গত ১৫ আগস্ট রাজধানীর নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর থেকেই কাবুলে প্রবেশ করতে শুরু করে তারা। তাই তাদের অনেকেই আগ্রহী ছিল পুনরায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নিরাপত্তার দায়িত্বে ছড়িয়ে পড়ার আগে বিনোদন পার্ক ঘুরে দেখার।
'আমরা লড়াই করতে পেরে খুবই গর্বিত। এখন যে তারা (আমেরিকানরা) এদেশ ছেড়ে চলে গেছে, সেটিই আমাদের জীবনের সবচেয়ে আনন্দময় অভিজ্ঞতা,' হালিমি জানান।
এই পার্কে এসে হালিমি তাঁর এক চাচাতো ভাইয়েরও দেখা পান, এবং তাঁকে নিয়ে তালেবানদের প্রত্যাবর্তন উদযাপন করতে পিকনিক করেন।
আগস্টে প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি আফগানিস্তান ছেড়ে পালিয়ে গেলে, পশ্চিমা-সমর্থিত সরকারের বিরুদ্ধে তালেবানদের ২০ বছরের বিদ্রোহের অবদান ঘটে। এই সময়ের মধ্যে অধিকাংশ যোদ্ধাই লড়াই ছাড়া অন্য কোনো অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ পায়নি।
এই তালেবান যোদ্ধাদের উপর বর্তমানে দায়িত্ব বর্তেছে দেশব্যাপী নিরাপত্তা নিশ্চিত করার। তবে নিরাপত্তার বিষয়টি সাম্প্রতিককালে খুবই ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে। বিগত এক সপ্তাহেই অন্তত তিনটি আক্রমণ চালানো হয়েছে দেশটির ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর।
শুক্রবার উত্তর-পশ্চিম আফগানিস্তানের একটি মসজিদে আত্মঘাতি বোমা হামলায় কমপক্ষে ৪৬ জন নিহত হয়েছে। এছাড়াও আহত হয়েছে ১৪০ জনের বেশি।
হামলাটির দায় স্বীকার করেছে ইসলামিক স্টেট ইন খোরাসান (আইএস-কে)। খোরাসান নামটি নেয়া হয়েছে অধুনা আফগানিস্তানসহ আশপাশের অঞ্চলের প্রাচীন নাম থেকে।
- সূত্র : রয়টার্স