বিশ্ব মহামারি: সংক্রমিতের সংখ্যায় যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে যেতে পারে ব্রাজিল
দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ব্রাজিলে কোভিড-১৯ সংক্রমণের বিস্তার এখন মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। আনুষ্ঠানিকভাবে ১০ লাখের বেশি সংক্রমণ নিয়ে এখন যুক্তরাষ্ট্রের পরেই দ্বিতীয় স্থানে আছে দেশটি। আর মৃতের সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়েছে। অনাকাঙ্ক্ষিত এই অবস্থানে পৌঁছানোর মধ্যে দিয়ে ফুটবলের জন্য বিখ্যাত দেশটি এখন করোনার নরক হিসেবে কুখ্যাতি অর্জনের পথে।
গত শুক্রবার একদিনেই ৫৪ হাজার ৭৭১ জন আক্রান্তকে শনাক্ত করার কথা জানায় দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। একদিনে আক্রান্তের সংখ্যায় এই উল্লেখযোগ্য গতির কারণে মোট সংক্রমিতের সংখ্যা পৌঁছে যায় এক লাখ ৩২ হাজার ৯১৩ জনে।
সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ব্যাপার হচ্ছে, অন্য যে কোনো দেশের তুলনায় অনেক দ্রুত এবং ব্যাপকহারে ব্রাজিলে কোভিড-১৯ মহামারি ছড়িয়ে পড়ছে। সংক্রমণ হার কমার কোনো লক্ষ্মণ তো দেখাই যাচ্ছে না, বরং প্রতিনিয়তই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যাও। খবর সিএনএনের।
এই অবস্থার মধ্যেই অর্থনীতিকে সচল করার উদ্যোগ নিয়েছে কট্টর ডানপন্থি বলে পরিচিত প্রেসিডেন্ট জেইর বলসানারোর সরকার। প্রধান প্রধান শহরে শিথিল করা হয়েছে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার স্বাস্থ্য বিধি। খুলে দেওয়া হচ্ছে রেস্তোরা, পানশালা আর খুব জরুরি নয় এমন সেবাভিত্তিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
এসব কিছু মিলে দুর্যোগের কালো মেঘ আরও অন্ধকার কোণে ঠেলে দেবে ব্রাজিলকে, শঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। তাদের অনুমান, খুব শীঘ্রই ব্রাজিল যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে বিশ্বের শীর্ষ করোনা আক্রান্ত দেশে পরিণত হতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তায় অবশ্য কান দেওয়ার মানুষ নন জেইর বলসানারো। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির নামে উগ্র ডানপন্থি এই প্রেসিডেন্ট ইতোপূর্বে বিশ্বের বৃহত্তম বনরাজি অ্যামাজন ধ্বংসে মদত দিয়ে সমালোচিত হয়েছেন বিশ্ব গণমাধ্যমে।
চলমান মহামারির মাঝে সংক্রমণের ঝুঁকি খুবই কম এমন প্রচারণা অব্যাহত রেখেছেন তিনি। ব্রাজিলের সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করায় বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্য বিষয়ক নানা সংস্থাগুলির গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। বিরোধী রাজনৈতিক দলের সঙ্গে হাত মিলিয়ে তাকে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করা হচ্ছে, এমন অভিযোগ করছেন ব্রাজিলের চিকিৎসক ও বিজ্ঞানীদের উদ্দেশ্যে।
করোনা মহামারির সাম্প্রতিক ভয়াবহ অবস্থার জন্য ইতোমধ্যেই দায়ি বলসানারো।
শুরুর দিকে তিনি লকডাউনের পদক্ষেপ না নিয়ে বরং ব্রাজিলীয়রা করোনায় আক্রান্ত হবে না, এমন প্রচারণা চালিয়ে গেছেন।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি প্রথম ব্রাজিলে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত করা হয়। প্রথম রোগীটি ছিলেন ইতালি ফেরত এক নাগরিক। এর মাত্র এক মাস পর অর্থাৎ মার্চের শেষে ব্রাজিলে মোট ৩ হাজার মানুষ সংক্রমিত হন, প্রাণহানি ঘটে ৭৭টি।
এসময় প্রেসিডেন্ট বলসানারো করোনাভাইরাসকে সামান্য সর্দি-কাশি জনিত ফ্লু বলে অবহিত করেন। তার মতে এই ভাইরাস থেকে সুরক্ষিত থাকার প্রাকৃতিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা নাকি ব্রাজিলীয়দের রয়েছে।
'ব্রাজিলীয়দের কিচ্ছু হবে না… ইতোমধ্যেই তাদের শরীরে ভাইরাসটি মোকাবিলায় সমর্থ অ্যান্টিবডি রয়েছে।'
গত ২৬ মার্চের এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা আবারও বলেন।
এসময় বলসানারো বলেন, ব্রাজিলীয়দের নিয়ে গবেষণা হওয়া উচিৎ। কোনো ভাইরাস আমাদের পরাজিত করতে পারেনা। এখানে প্রতিনিয়ত মানুষ নর্দমায় ঝাঁপ দিচ্ছে, সাঁতার কাটছে, কিন্তু তাতে তাদের কিছুই হচ্ছে না।
সংবাদ সম্মেলন চলাকালে তিনি আরও জানান, ব্রাজিলীয়রা ইতোমধ্যেই সংক্রমণের শিকার হয়ে থাকতে পারেন। কিন্তু এর বিরুদ্ধে তাদের দেহে অ্যান্টিবডি গড়ে উঠেছে। ফলে ভাইরাসটি আর ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভ করতে পারবে না।