বৈরুত বিস্ফোরণ: বিশ্বের আর কোথায় অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট মজুদ আছে
গত ৪ আগস্ট লেবাননের বৈরুত বন্দরে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট বিস্ফোরণ ঘটে। এর ভয়াবহ পরিস্থিতি দেখে বিশ্বব্যাপী আর কোথায় কোথায় এটি মজুদ আছে তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অনেকেই।
নাইট্রোজেনের এই রাসায়নিক যৌগটি সারা বিশ্বে সার বা খনিতে বিস্ফোরক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তবে এটি কোথায়, কোন পরিবেশে সংরক্ষণ করে রাখা যেতে পারে এবং কতদিন পর্যন্ত সে সম্পর্কে কঠোর নিয়মকানুন রয়েছে।
বোমার মতো বিস্ফোরণের সম্ভাবনার কারণে এর অবস্থান প্রায়শই গোপন রাখা হয়।
ভারত
ভারতের অন্যতম প্রধান শহর চেন্নাইয়ের বাইরে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরের আবাসিক অঞ্চল থেকে প্রায় ৭৪০ টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট মজুদ অবস্থায় পাওয়া গেছে। ২০১৫ সালে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ৩৭ কন্টেইনার ভর্তি রাসায়নিক পদার্থটি আমদানি করে একটি সংস্থা। কৃষিকাজের জন্য এটি আমদানি করা হয়েছে বলে দাবি করে সংস্থাটি। গত ৫ বছর ধরে সংস্থাটির বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালিয়ে আসছে দক্ষিণ তামিলনাড়ু রাজ্যের কর্তৃপক্ষ।
এর চালান শুল্ক ছাড়পত্রও প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল। পরে তদন্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সংস্থাটি-
-
একটি অবৈধ ছাড়পত্র দিয়ে এই ৭৪০ টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট আমদানি করে
-
"অজ্ঞাতপরিচয়ধারী ব্যক্তি" এবং খনির কাজে সাথে জড়িত সংস্থাগুলোর কাছে এগুলো বিক্রি করা হচ্ছে
২০১৫ সালে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পরে অল্প পরিমাণে নিষ্পত্তি করা হয়েছিল। আর বাকি ৬৯৭ টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট নিলাম হয়ে পার্শ্ববর্তী রাজ্য তেলঙ্গানায় পাঠানো হচ্ছে।
ইয়েমেন
যুদ্ধবিধ্বস্ত ইয়েমেনের দক্ষিণে আদেন বন্দরে প্রায় ১০০টিরও বেশি পাত্রে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট মজুদ আছে- এমন প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে দ্রুত তদন্তের নির্দেশ দেয় দেশটির অ্যাটর্নি জেনারেল।
তদন্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, তিন বছর আগে রাসায়নিকটি আমদানি করা হয়। জাতিসংঘ-স্বীকৃত সরকারের সৌদি নেতৃত্বাধীন বাহিনী এটি জব্দ করে।
আদেনের গভর্নর তারিক সালাম বলেন: "বন্দরে মোতায়েন করা এই বাহিনীই এই বিপজ্জনক রাসায়নিক ভর্তি কার্গোটি মজুদ করার জন্য দায়বদ্ধ। এখানে ১৩০ টি শিপিং কনটেইনারে ৪ হাজার ৯০০ টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট আছে রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।"
তবে সরকারের ইয়েমেন উপসাগরীয় অ্যাডেন বন্দর সংস্থার পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, এই কন্টেইনারগুলো আসলে "কৃষি সার হিসেবে ব্যবহৃত জৈব ইউরিয়া সংরক্ষণের জন্য ব্যবহৃত হত। এগুলো বিস্ফোরক বা তেজস্ক্রিয় পদার্থ নয়। এবং এগুলো ব্যবহার বা সংরক্ষণ করাও নিষিদ্ধ নয়"।
ইরাক
লেবাননের এই ঘটনার পরপর ইরাকের সমুদ্রবন্দর ও বিমানবন্দরগুলোতে ঝুঁকিপূর্ণ পদার্থ মজুদ আছে কি না তা তাৎক্ষণিক পর্যালোচনা করার নির্দেশ দেয় দেশটির সরকার। এরপর বাগদাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট সংরক্ষিত অবস্থায় পাওয়া গেছে।
গত ৯ ই আগস্ট ইরাকের একজন সামরিক কর্মকর্তা টুইট পোস্টে বলেন, "ইরাকি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মিলিটারি ইঞ্জিনিয়ারিং অধিদপ্তর ... বাগদাদ বিমানবন্দরে বিমান-কার্গো বিভাগ থেকে যথাযথ নিরাপত্তা বজায় রেখে অত্যন্ত বিপজ্জনক উপকরণগুলো তাদের গন্তব্যস্থলে, সেনা প্রকৌশল অধিদপ্তরের গুদামে স্থানান্তরিত করেছে"।
অস্ট্রেলিয়া
নিউ সাউথ ওয়েলসের নিউক্যাসল শহরের কেন্দ্র থেকে ৩ কিলোমিটার দূরের একটি গুদামে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের একটি বড় মজুত আছে। বৈরুতের বিস্ফোরণের অনেক আগেই মজুদ থাকা অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের মজুদ সরানোর জন্য অনুরোধ করে আসছে শহরের বাসিন্দারা।
তবে খনি শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিস্ফোরক সরবরাহকারী সংস্থা ওরিকা জানায়, যে এগুলো "আগুন প্রতিরোধী এবং অদাহ্য উপকরণে নির্মিত" স্থানে বা এলাকায় নিরাপদে সংরক্ষণ করা হচ্ছে।
এদিকে দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তা নজরদারি করে এমন একটি সংস্থা সেফ ওয়ার্ক এসএ জানায়, পুরো অঞ্চলজুড়ে ১৭০টি এলাকায় অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট মজুদ আছে।
ইংল্যান্ডের বিভিন্ন বন্দর
ইমিংহামের লিংকনশায়ারের একটি বৃহৎ বন্দরসহ হাম্বার অঞ্চলের অন্যান্য এলাকায় অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট মজুদ আছে কি না সে বিষয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে।
বন্দরগুলো পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ করে এসোসিয়েটেড ব্রিটিশ পোর্টস (এবিপি)। সংস্থাটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, যুক্তরাজ্যের বন্দরগুলো কঠোর বিধিবিধান অনুসরণ করে। আমাদের এই ধরণের রাসায়নিক নিরাপদে সংরক্ষণ ও পরিচালনা নিশ্চিত করতে হয়।
যদিও পোর্টসমাউথের বন্দর পোর্টিকোতে অবস্থিত একটি সংস্থা অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট সংরক্ষণের জন্য আবেদন প্রত্যাহার করেছে, রাসায়নিকটি বন্দর এলাকা দিয়ে পরিবহন করা হবে না বলেও সংস্থাটির পক্ষ থেকে জানানো হয়। অথচ বৈরুত বিস্ফোরণের কয়েকদিন পরেই আবেদনটি প্রত্যাহার করে তারা। তবে ব্যবসায়িক কারণেই তারা এই সিদ্ধান্ত বলে জানায়।
সূত্র: বিবিসি