ভারতে করোনা: পূর্ণাঙ্গ লকডাউন দিতে পারে মহারাষ্ট্র
কোভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যা না কমলে রাজ্যে পূর্ণাঙ্গ লকডাউন দেওয়ার সতর্কবাণী দিয়েছেন ভারতের পশ্চিমের রাজ্য মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব থ্যাকারে।
তিনি বলেন, রাজ্যের মানুষ করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করতে ব্যর্থ হয়েছে। কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা 'অনুপযুক্ত' হয়ে উঠবে বলেও সতর্ক করেছেন তিনি।
গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত মহারাষ্ট্রে কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা ৪৭ হাজার ৮২৮। একই দিনে সমগ্র ভারতে মোট ৮১ হাজার ৪৬৬ জন নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন এবং মৃত্যু ঘটেছে ৪৬৯ জনের- যা ডিসেম্বর থেকে এখনো পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু।
একটি টিভি চ্যানেলে থ্যাকারে বলেন, 'ধরে নিন এটা একটা সতর্কবার্তা, আগামী কয়েকদিন যদি পরিস্থিতির উন্নতি না ঘটে তাহলে আমি রাজ্যে পুরোপুরি লকডাউন জারি করতে পারি।'
তিনি আরও জানান, ভ্যাকসিন নেওয়ার পরেও কিছু মানুষ করোনা আক্রান্ত হয়েছেন, কারণ তারা মাস্ক পরা বন্ধ করে দিয়েছিলেন।
গত রোববার তিনি পূর্ণাঙ্গ লকডাউনের একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন এবং বলেন, সাধারণ মানুষ যথাযথ নিরাপত্তাবিধি মানছে না।
কিন্তু নতুন করে বিধিনিষেধ জারির এই পরিকল্পনার বিরোধিতা করেছে বিরোধীদলগুলো। এমনকি গণপরিষদের সদস্যরা এবং সরকারের ভেতর থেকেও এর বিরুদ্ধে আপত্তি উঠেছে।
পুনে শহরে ইতোমধ্যেই কারফিউ জারি করা হয়েছে এবং ধর্মীয় স্থান, হোটেল, পানশালা, শপিংমল ও সিনেমা হলগুলো এক সপ্তাহের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
মহামারি সামাল দিতে সরকার পিসিআর ও র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টের খরচও কমিয়ে এনেছে।
মহামারির শুরু থেকে এখনো পর্যন্ত ভারতে ১২ দশমিক ২ মিলিয়ন মানুষ করোনা আক্রান্ত হয়েছে এবং মারা গেছে ১ লাখ ৬৩ হাজারেরও বেশি। যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রাজিলের পর ভারতই তৃতীয় সর্বোচ্চ করোনা আক্রান্ত দেশ।
তবে জানুয়ারিতে ভারতে প্রতিদিনকার করোনা আক্রান্তের হার কমে গিয়ে ১৫ হাজারে এসে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরিমাণ কমে যাওয়ায় এবং সুরক্ষাবিধি মেনে না চলায় মার্চে এসে আক্রান্তের হার অনেক বাড়তে থাকে।
বৃহস্পতিবার ভারত তাদের করোনাভাইরাস ভ্যাকসিন প্রদান প্রক্রিয়ার তৃতীয় ধাপ শুরু করেছে। এই পর্যায়ে তারা ৪৫ বছর বা এর বেশি বয়সীদের ভ্যাকসিন দেবে। প্রথম দুই ধাপে তারা ফ্রন্টলাইন কর্মী ও ৬০ বছরের বেশি বয়সীদের ভ্যাকসিন দিয়েছে।
এখনো পর্যন্ত ভারত ৬৮ মিলিয়ন ডোজ ভ্যাকসিন দিয়েছে। বিশ্বের সর্ববৃহৎ এই ভ্যাকসিন প্রদান প্রক্রিয়ায় তারা জুলাইয়ের মধ্যে ২৫০ মিলিয়ন মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, পরবর্তী সংক্রমণ বৃদ্ধি রোধ করতে এই প্রক্রিয়া আরও দ্রুতগতিতে এগিয়ে নিতে হবে।
অনেকেই ভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়ান্টের প্রভাবে সংক্রমণ বৃদ্ধির কথা জানালেও সরকার তা অস্বীকার করেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় তরঙ্গের পেছনে জনগণের অসতর্কতা এবং সরকারের নানামুখী বার্তাই মূলত দায়ী।
সংক্রমণের হার কমে যাওয়ায় ভারতের জনসাধারণের মধ্যে এক ধরনের প্রসন্নতা চলে এসেছিল। প্রায় এক বছর গৃহবন্দী থাকার পর ভারতীয়রা আবার বিয়ের অনুষ্ঠান ও পারিবারিক উৎসবে যোগ দিতে শুরু করে এবং বাজারগুলোতে ভিড় জমাতে শুরু করে।
এছাড়াও নির্বাচনী এলাকাগুলোতে হাজার হাজার মানুষ বিশাল নির্বাচনী র্যালিতেও যোগ দেয়।
- সূত্র: বিবিসি