মাত্র ১৬ দিনে! ৯৩ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ককে টিকা দিয়েছে ভুটান
কোভিড-১৯ টিকাদানের জাতীয় কর্মসূচি শুরুর পর প্রথম দিন থেকেই সার্বিক হারে এগিয়ে যাচ্ছিল ভুটান। কম জনসংখ্যা ও সঠিক ব্যবস্থাপনার ফলে এবার দেশটি ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, বাহারাইনসহ বিশ্বে টিকাদানে এগিয়ে থাকা অন্যান্য রাষ্ট্রকে পেছনে ফেলেছে।
রেখাচিত্রে দেখা যাচ্ছে ভুটানের সফলতা দেশটিকে বিশ্বের মধ্যে শীর্ষস্থানে তুলে ধরছে, অথচ দক্ষিণ এশিয়ার তুলনামূলক সম্পন্ন রাষ্ট্র ভারত, বাংলাদেশ বা পাকিস্তান অনেকগুণ পিছিয়ে।
সবচেয়ে বিস্ময়কর ব্যাপার হলো; যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত দেশগুলোর তাদের বর্তমান টিকাদানের হারে পৌঁছাতে কয়েক মাস সময় লেগেছে, সংক্রমণ সংখ্যা বৃদ্ধির মধ্যে কঠোর পরিশ্রম করতে টিকাদান চালিয়ে যেতে। তারপরও, তাদের জনসংখ্যার অনেকেই এখনও ভ্যাকসিনের ডোজ পাননি।
ভুটানের গল্পটা কিন্তু একেবারেই আলাদা, ভারত ও চীনের মধ্যেকার হিমালয় অঞ্চলের এই ছোট্ট দেশটি টিকা কর্মসূচি শুরু হওয়ার মাত্র ১৬ দিনের মধ্যেই লক্ষ্য অর্জনের পথে। গেল মার্চে শুরু হওয়ার পর এপর্যন্ত ৯৩ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যা টিকা পেয়েছেন সেখানে।
সব মিলিয়ে মোট ৮ লাখ জনসংখ্যার ৬২ শতাংশকে টিকা দিতে পেরেছে স্থানীয় জনস্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ।
অতিদ্রুত টিকা বণ্টনের এই সাফল্যে সেশেলসের পর স্থান পেয়েছে ভুটান। সেশেলসে এক লাখ অধিবাসীর ৬৬ শতাংশকে টিকা দেওয়া হয়েছে।
কম জনসংখ্যা ভুটানের অগ্রগতির প্রধান কারণ। তবে নাগরিক সমাজের স্বেচ্ছাসেবীরা এর পেছনে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন। তাছাড়া, দুর্গম ভৌগলিক অবস্থান ও সম্পদের স্বল্পতা নিয়েও ভ্যাকসিন সংরক্ষণ ও বণ্টনের জন্য দরকারি একটি কার্যকর হিমচক্র ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিল ভুটান সরকার।
গেল জানুয়ারিতে প্রতিবেশী ভারত থেকে অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিনের দেড় লাখ ডোজের প্রথম চালান পায় ভুটান। কিন্তু, টিকাদান শুরু হয় মার্চের শেষদিক থেকে, বৌদ্ধিক জ্যোতির্বিদ্যা পঞ্জিকা মতে নির্ধারিত একটি শুভদিনে।
প্রথম টিকার ডোজ পান একজন নারী, তার টিকাগ্রহণের সময়য় বৌদ্ধ ভিক্ষুরা মন্ত্রোচ্চারণ করেছিলেন।
টিকাগ্রহীতা ওই নারী স্থানীয় দৈনিক কুয়েনশেলকে সেমসয় বলেন, "আমার এই ছোট্ট পদক্ষেপ আমাদের সকলকে এই মহাব্যাধি থেকে রক্ষায় সাহায্য করবে বলে আশা করছি।"
দেশটির স্বাস্থ্য সচিব ড. পান্ডুপ শেরিং জানান, টিকা কর্মসুচি চলাকালে যারা পাননি, এখন তাদের মধ্যে দেওয়ার কাজ চলছে। সম্পূর্ণ জনসংখ্যাকে টিকাদানের জন্য পর্যাপ্ত ডোজের মজুত থাকার কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
ভুটানে এপর্যন্ত কোভিড-১৯ শনাক্ত হয়েছে ৯১০ জনের মধ্যে, আর মারা গেছেন ১ জন। মহামারির মধ্যে দেশটিতে আসা সকল ব্যক্তিকে ২১ দিনের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিন পালন করতে হয়। খোলা আছে সকল বিদ্যালয়সহ অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তবে সেখানে কোভিড-১৯ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা হচ্ছে কিনা তা সরকার ঘনিষ্ঠভাবে নজরদারিতে রেখেছে বলে জানান স্বাস্থ্য সচিব শেরিং।
হিমালয়ের শেষ বৌদ্ধ রাষ্ট্র ভুটান। ইতোপূর্বে, রাজা সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হলেও এখন গণতন্ত্র জোরদার করে দেশটি সাংবিধানিক রাজতন্ত্রে পরিণত হয়েছে।
- সূত্র: ব্লুমবার্গ