দূর্নীতির দায়ে মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের ১২ বছরের জেল
মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের বিরুদ্ধে তার শাসনামলে গঠিত বিশেষ উন্নয়ন তহবিল ওয়ানএমডিবি'র অর্থ আত্মসাৎ সংক্রান্ত সাতটি অভিযোগই আদালতে প্রমাণিত হয়েছে। দেশটির উচ্চ আদালত এ রায় দেওয়ার ফলে নাজিবের যাবজ্জীবন কারাবাসের সম্ভাবনা আরও বাড়লো।
আজ মঙ্গলবার (স্থানীয় সময়) সকালে রাজধানী কুয়ালালামপুরের উচ্চ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ নাজলান মোহাম্মদ গাজালী- রায় ঘোষণার সময় বলেন, '' বিচার প্রক্রিয়ায় উপস্থিত সকল তথ্য-প্রমাণ বিশ্লেষণের পর আমি এই সিদ্ধান্ত উপনীত হয়েছি যে, বাদিপক্ষের আনীত সকল অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে।''
নাজিবের উপস্থিতিতেই আদালত তাকে দোষী সাব্যস্ত করেন। এসময় তিনি মাস্ক পড়েছিলেন। আর আদালতের বাইরে জড়ো হওয়া তার সমর্থকদের সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে অপেক্ষা করার নির্দেশ দেন পুলিশ সদস্যরা।
আদালত দোষী প্রমাণিত হওয়ায় নাজিবকে ১২ বছরের কারাবাস এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের দায়ে ২১ কোটি রিঙ্গিত ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দেন।
উচ্চ আদালতের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবশ্য আপিল করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন নাজিব। গত সোমবার অর্থাৎ রায়ের আগের দিনই তিনি নিজের ফেসবুকে পোস্ট করা এক বিবৃতিতে সিদ্ধান্তের কথা জানান।
মূলত, আদালতে দোষী ঘোষণার আগেই আইনজীবীরা মামলার গতি-প্রকৃতি সম্পর্কে নাজিবকে জানিয়েছিলেন।
তাই সোমবার নাজিব লেখেন, ''আগামীকাল উচ্চ-আদালত যে সিদ্ধান্তই নিক না কেন, লড়াই এখানেই শেষ হবে না। আমরা এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আবার আপিল করব। এব্যাপারে আমি প্রস্তুত আছি।''
পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ এ আর্থিক কেলেঙ্কারিতে নিজের ভূমিকা বরাবরই অস্বীকার করে আসছেন নাজিব। মালয়েশিয়ার উন্নয়নে গঠিত এ বিশেষ তহবিল থেকে শত শত কোটি ডলার লুট করেন নাজিব ও তার সহযোগীরা। এই কেলেঙ্কারি মালয়েশিয়ার রাজনীতির ভিত্তিমূল ধরে নাড়া দেয়। রাষ্ট্রক্ষমতা থেকে নাজিবের অপসারণের পেছনে মূল প্রভাব রেখেছিল ওয়ানএমডিবি দুর্নীতি। জনমনে এতটাই বিরূপ প্রভাব পড়ে যে ৬১ বছর ক্ষমতায় থাকার পর প্রথমবারের মতো ক্ষমতার বাইরে চলে যায় নাজিবের উন্নাও পার্টি।
নির্বাচনে পরাজিত হয়ে নাজিবের অপসারণের পর পৃথিবীর নানা দেশে ওয়ানএমডিবি তহবিলের অর্থ পাচার সংক্রান্ত দুর্নীতির তদন্ত শুরু হয়। মালয়েশিয়ার কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ ব্যাংক গোল্ডম্যান সাক্সের বিরুদ্ধেও দুর্নীতিতে সহায়তার প্রমাণ পান। এরপর সম্প্রতি দেশটির সঙ্গে এক আপোষের মাধ্যমে ৩৯০ কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ দিতে সম্মত হয়েছে গোল্ডম্যান। ক্ষতিপূরণের বিনিময়ে গোল্ডম্যানের বিরুদ্ধে দুর্নীতিতে সহায়তার অভিযোগ প্রত্যাহার করবে মালয়েশিয়া।