রোমান সাম্রাজ্যের মতোই ধ্বংস হয়ে যেতে পারে বর্তমান মানবসভ্যতাও, হুঁশিয়ারি বরিস জনসনের
শুক্রবার ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে চলমান লড়াইয়ে বিশ্বনেতাদের এগিয়ে আসতেই হবে। তিনি বলেন, আরও পদক্ষেপ না দিলে মানবসভ্যতা প্রাচীন রোমান সাম্রাজ্যের মতোই ধ্বংস হয়ে যাবে।
শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট জি-২০-এর সম্মেলনে যোগ দিতে জনসন এখন ইতালির রোমে আছেন। দুই দিনব্যাপী সম্মেলন শুরু হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে এমন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, জলবায়ুকে পরিবর্তনকে নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারলে ক্ষুধা, সংঘাত ও গণ-অভিবাসনের ঝুঁকিতে পড়বে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম। জনসন মন্তব্য করেন, বৈশ্বিক তাপমাত্রা আর চার ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়লেই কঠিন সব ভূরাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু হবে।
তিনি বলেন, 'এমনটা হলে উৎপাদন কমে যাবে, বাড়বে মরুভূমির পরিমাণ। বিলীন হয়ে যাবে জনপদ, পানি আর খাদ্যের সন্ধানে যে যেখানে পারবে ছুটবে। আর এই ব্যপারগুলো রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করা ভীষণ কঠিন।'
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোমান সাম্রাজ্যের ক্ষয় ও পতন আপনারা দেখেছেন। এবং আমার আশঙ্কা, বর্তমানেও সেরকম কিছুই ঘটবে।
রোমান সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ ক্যালোসিয়ামের পাশে দাঁড়িয়ে জনসন সাংবাদিকদের মনে করিয়ে দেন, সভ্যতাটি যখন ধ্বংস হয়েছিল, তখনও এ ধরনের পরিস্থিতিই দেখা দিয়েছিল। রোমান সভ্যতা তাদের সীমান্তের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছিল, ব্যর্থ হয়েছিল অভিবাসন ঠেকাতে। প্রাচ্যের তো বটেই, সারা পৃথিবী থেকেই রোমে মানুষ ভিড় জমাতে শুরু করেছিল। এর ফলে গভীর আঁধারে ডুবে গিয়েছিল গোটা ইউরোপ।
জনসন আশঙ্কা প্রকাশ করেন, বর্তমানে জলবায়ু সংকটের কারণে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে, তাতে অচিরেই আবারও এমনটা ঘটতে পারে।
কোভিডের ধাক্কা থেকে অর্থনীতির শক্তিশালী পুনরুদ্ধার ও স্বাস্থ্যসংকটই এবারের জি-২০ সম্মেলনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয়। তবে গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমাতে এবং দরিদ্র দেশগুলোকে বৈশ্বিক উষ্ণতার বিরুদ্ধে সাহায্য করতে নেতারা কতটুকু কার্যকর পদক্ষেপ নেবেন, তা-ই এই সম্মেলনে সবচেয়ে বেশি আলোচিত হবে।
জি-২০-র সদস্য ব্রাজিল, চীন, ভারত, জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্র পৃথিবীর প্রায় ৮০ শতাংশ কার্বন নিঃসরণের জন্য দায়ী।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনসহ অনেক নেতাই রোম থেকে সরাসরি জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন কপ২৬-এ যোগ দিতে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে যাবেন ।
তবে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও রাশিয়ার ভ্লাদিমির পুতিন সশরীরে জলবায়ু সম্মেলনে যোগ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় এ সম্মেলন সফল হওয়ার আশা অনেকটাই মিইয়ে গেছে। এ দুই নেতে ভিডিও লিঙ্কের মাধ্যমে সম্মেলনে হাজিরা দীন।
এদিকে জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় আর্থিক বরাদ্দ পেতে প্রস্তাবিত একটি আইন কংগ্রেসে ডেমোক্রেটদের একাংশের সমর্থন আদায়ন করতে পারেননি জো বাইডেন। গত বৃহস্পতিবার জলবায়ু সংকট মোকাবিলার জন্য 'বিল্ড ব্যাক বেটার' আইনের প্রস্তাবনা আনেন বাইডেন। এ আইনে জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় ১ দশমিক ৭৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের বরাদ্দ দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল।
আইনটি পাস হলে জলবায়ু সম্মেলনে কার্বন নিঃসরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ৫০০ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিতে পারতেন বাইডেন। কিন্তু ডেমোক্রেটদের মতবিরোধের কারণে আইনটি এখনও পাস করতে পারেননি তিনি। ফলে কপ২৬ সম্মেলনে কার্বন নিঃসরণমুক্ত বিশ্ব গড়তে যুক্তরাষ্ট্রকে যে নেতৃত্বের ভূমিকায় রাখতে চেয়েছিলেন বাইডেন, তার সেই আশা ফিকে হয়ে গেছে।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোনো রকম আইনি বাধ্যবাধকতার প্রতিশ্রুতির মধ্যে না গিয়েই জি২০ নেতারা বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখতে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেবেন।