লাদাখ সীমান্তে ভারতের বিমান প্রতিরক্ষা মোতোয়েন, ভূমি দখলের অভিযোগ
অধিকৃত কাশ্মীরের পূর্ব লাদাখ অঞ্চলে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর চীনা যুদ্ধবিমান এবং সামরিক হেলিকপ্টারের গতিবিধি বেড়েছে বলে দাবি করছে ভারত। এই হুমকির মুখে শত্রুবিমান বা ক্ষেপণাস্ত্র তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়ায় ধ্বংসে সক্ষম সর্বাধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়েন করার কথা জানিয়েছে দেশটি।
বার্তা সংস্থা এএনআইকে ভারতীয় সামরিক কর্মকর্তারা জানান, 'আলোচিত সেক্টরে সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধির চলমান প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে সেনা এবং বিমান বাহিনীর অত্যাধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়েন করা হয়েছে। এর ফলে নিয়ন্ত্রণ রেখা অতিক্রম করে চীনা বিমান বাহিনীর যুদ্ধবিমান বা সেনা বাহিনীর হেলিকপ্টার ভারতের বিরুদ্ধে কোনো 'দুঃসাহসী' পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ পাবে না।'
ভারতীয় সেনা সূত্রটির দাবি, গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই চীন অত্যাধুনিক সুখই-৩০ ফাইটার জেট এবং বোমারু বিমান মোতায়েন করেছে নিজ সীমান্তের অগ্রবর্তী ঘাঁটিতে। সেখান থেকে উড়াল দিয়ে প্রায়ই নিয়ন্ত্রণ রেখা থেকে দশ কিলোমিটার দূরত্ব বজায় রেখে উড়ছে এসব বিমান। মূলত একারণেই আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়ার
অজ্ঞাত একটি মিত্র দেশ থেকে সংগৃহীত এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বিরোধপূর্ণ অঞ্চলে শত্রু বিমানের গতিবিধি নজরদারিতে সক্ষম বলে জানানো হয়।
এদিকে একইদিন পূর্ব লাদাখে ১৪ নম্বর টহল পয়েন্ট- যেখানে ১৫ জুন দুই দেশের সেনাদের মাঝে রক্তক্ষয়ী সংঘাত ঘটে, ঠিক তার কাছেই চীন একটি 'ভারতীয়' এলাকা দখল করেছে বলে জানিয়েছে ভারতের গণমাধ্যম।
দেশটির সেনা সূত্রের বরাতে জানানো হয়, নতুন পরিকাঠামো তৈরি না-করলেও, পয়েন্ট ১৪-সহ গোটা এলাকায় চীনা সেনার উপস্থিতির কারণে পেট্রোলিং পয়েন্ট ১০, ১১, ১১এ, ১২ এবং ১৩-এ পৌঁছতে পারছে না ভারতীয় সেনারা।
ইতোমধ্যেই লাদাখে নিজ পক্ষে ২০ সেনা নিহত হওয়ার ঘটনায় উত্তপ্ত ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গন। এই ইস্যুতে নরেন্দ্র মোদির প্রশাসন এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগ এনেছেন বিরোধীদলীয় নেতা রাহুল গান্ধি।
তার জবাবে শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এনসিপি দলের নেতা এবং প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রী শারদ পাওয়ার পাল্টা অভিযোগ করেন যে, ১৯৬২ সালের ভারত-চীন যুদ্ধের পর থেকেই চীন ভারতের ৪৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা দখল করে নিয়েছে। আর এই সময়ের সিংহভাগ সময়জুড়েই কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণ ছিল ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের হাতে।
চীনা আগ্রাসনের মুখে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভারতীয় ভূখণ্ড চীনের হাতে তুলে দিয়েছেন, কংগ্রেস নেতা রাহুলের এমন অভিযোগের জবাবে একথা বলেছেন তিনি ।
এসময় তিনি গালোয়ান উপত্যকার ঘটনায় সরাসরি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে ব্যর্থতার দায় দেওয়া যাবে না বলেও দাবি করেন।
শারদ পাওয়ার ১৯৯৯ সালে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস ত্যাগ করে নিজ দল এনসিপি গঠন করেছিলেন।
শারদ পাওয়ার বলেন, সীমান্তের পুরো ঘটনা অত্যন্ত স্পর্শকাতর। ভারতীয় সেনারা ভূখণ্ডে টহল দেওয়ার সময় চীনা সেনারা সেখানে অনুপ্রবেশ করে। চীনা সেনাদের অতর্কিত এই হামলার জন্য ভারতীয় সেনারা প্রস্তুত ছিল না। অনুপ্রবেশকারীরা যে কোনো সময় এ ধরনের ঘটনা ঘটাতে পারে। তাই এর জন্য প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে 'ব্যর্থতার' দায় দেওয়া উচিৎ হয়নি রাহুলের।
আজ শনিবারই লাদাখে দু'দিনের সফর শেষে দিল্লি ফিরে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহের কাছে সীমান্ত পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেন ভারতীয় সেনাপ্রধান এম এম নারভানে। এরপরে দেশটির প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের কথা রাজনাথের।
চীনে ভারতীয় রাষ্ট্রদূত বিক্রম মিশ্রও এদিন বলেন, 'পূর্ব লাদাখে সমস্যা মেটানোর পথ একটাই। বেজিংকে বুঝতে হবে স্থিতিশীলতা বদলের চেষ্টা হলে তার ফলও (চীনকে) ভুগতে হবে। ভারতীয় বাহিনীর স্বাভাবিক টহলদারির পথে বাধা দেওয়া বন্ধ হলেই কেবল সমস্যা নিরসনের পথে হাঁটা সম্ভব।'