সংক্রমণ বাড়ার পর ভারতের শ্মশানগুলোতে মরদেহের স্তুপ
বিগত দিনগুলোতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়তে শুরু করার পর থেকে ভারতের শ্মশান ও সমাধিস্থলে অতিরিক্ত সময় কাজ করছেন কর্মীরা।
গত সোমবার শনাক্তের হিসাবে ব্রাজিলকে ছাড়িয়ে গেছে ভারত, বর্তমানে করোনাভাইরাস শনাক্তের হিসাবে দেশটি বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে।
মঙ্গলবার দেশটিতে বিগত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হয় ১ লাখ ৬১ হাজার ৭৩৬ জন, মারা যায় ৮৭৯ জন। জানুয়ারি মাসের দৈনিক হিসাবের চেয়ে যা চার গুণেরও বেশি।
স্থানীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে স্তুপকৃত মরদেহ, অবিরাম মরদেহ পোড়ানোর চুল্লি থেকে ধোয়া নির্গত হওয়ার ভয়ানক চিত্র উঠে এসেছে।
ভারতের বিভিন্ন স্থানের ছয়টি শ্মশানঘাট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। কোভিডজনিত মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে বিষয়টি স্পষ্টভাবে চোখে পড়ছে বলেও জানান তারা।
গুজরাটের সুরাট শহরে শ্মশান পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ট্রাস্টের প্রেসিডেন্ট কমলেশ সেইলর বলেন, "আগে দিনে ১৫-২০টি মরদেহ আসতো, এখন দিনে ৮০-১০০টি মরদেহ আসছে,"
তিনি জানান, গত বছর ভারতে মহামারির ফার্স্ট ওয়েভে সংক্রমণ বৃদ্ধির পর শ্মশানঘাটগুলো কার্যক্ষমতা দ্বিগুণ করে ২৪ ঘণ্টা কাজ করার পরও বর্তমানে মৃতদের শেষকৃত্য শুরু করতে স্বজনদের অন্তত ২-৩ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
"শ্মশানে অপেক্ষাকৃতদের লম্বা সারি তৈরি হওয়ার বিষয়টিও উদ্বেগজনক, এতে সংক্রমণ ছড়ানোর সম্ভাবনাও বাড়ে। দেশজুড়ে হাসপাতালগুলোতেও জায়গা নেই, সামনের দিনগুলোতে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যেতে পারে, " বলেন তিনি।
আশঙ্কাজনক হারে সংক্রমণ ও মৃতের সংখ্যা বৃদ্ধিতে মহামারির নতুন ওয়েভ নিয়ন্ত্রণে নরেন্দ্র মোদি সরকার কতোটা অপ্রস্তুত ছিল তাই প্রতীয়মান হয়। দেশটিতে বিগত মাসগুলোতে নির্বাচনী র্যালি, উৎসব ও ধর্মীয় উদযাপন উপলক্ষে বিপুল জনসমাগম দেখা যায়।
আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশিত দেশটির এই মৃত্যুহারও অনেক কম, এ হিসাবে প্রকৃত মৃত্যুহার উঠে আসেনি এমনটাই আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশটিতে কোভিডজনিত মৃত্যুর মাত্র ২০-৩০ শতাংশ কোভিডজনিত মৃত্যু হিসেবে নথিভুক্ত হয়েছে।
দিল্লি ও মুম্বাই ভিত্তিক বেসরকারি শেষকৃত্য সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান অন্তিম যাত্রার প্রধান কার্য নির্বাহী নম্রতা সিং বলেন, "জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মাসে কোভিডজনিত মৃত্যুর সংখ্যা কমে আসে, তবে বিগত তিন সপ্তাহে আশঙ্কাজনকভাবে এ সংখ্যা বাড়ছে,"
দুই মাস আগেও দিল্লির সর্ব বৃহৎ সমাধিস্থল দৈনিক ৮-৯টি কোভিডজনিত মৃত্যুর হিসাব জানায়। গত সোমবার শহরটিতে সর্বোচ্চ ১১ হাজার শনাক্ত হওয়ার পর বড় প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা।
যমুনা নদীর তীরে অবস্থিত এই শ্মশানঘাটের কর্তৃপক্ষ বিগত দিনগুলোতে কাঠের চিতার সংখ্যা বাড়ানোর ও জনবল বাড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন নর্থ দিল্লি মিউনিসিপ্যাল করপোরেশনের মেয়র জয় প্রকাশ।
এ সংকট নিরসনে হাইকোর্ট গুজরাটের স্থানীয় সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে দুই দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছে।
সরকারের কাছে সুরাটের কোভিডজনিত মৃত্যুর 'সঠিক হিসাব' প্রকাশের আহ্বান জানিয়েছেন কমলেশ সেইলর।
"কোভিডজনিত মৃত্যু ও কোভিডজনিত কারণে মৃত্যু হয়েছে এমন আশঙ্কা করা সব মৃত্যুর সংখ্যা প্রকাশ করা উচিৎ। প্রকৃত চিত্র দেখে জনসাধারণ এর ভয়াবহতার ব্যাপারে আরও স্পষ্ট ধারণা পাবেন, বেশি সতর্ক থাকবেন," বলেন তিনি।
- সূত্র: ব্লুমবার্গ