হেলমন্দ প্রদেশে দাড়ি কামানো নিষিদ্ধ করেছে তালেবান
আফগানিস্তানের হেলমন্দ প্রদেশে গ্রাহকদের দাড়ি কামানো বা ছেঁটে ফেলা নিষিদ্ধ করেছে তালেবান। তালেবানদের মতে, এটি তাদের ইসলামী আইনের ব্যাখ্যার লঙ্ঘন।
তালেবান ধর্মীয় পুলিশ জানিয়েছে, কেউ নিয়ম ভঙ্গ করলে তাকে শাস্তি দেওয়া হবে। এদিকে, রাজধানী কাবুলের কিছু নাপিতও অনুরূপ আদেশ পেয়েছে বলে জানা গেছে।
এ নির্দেশনা নব্বইয়ের দশকে তালেবানের কঠোর শাসন পুনর্গঠনের দিকেই ইঙ্গিত দেয়। অথচ, গত আগস্টে আফগানিস্তান দখলের পর তালেবান জানিয়েছিল যে তারা আগের মতো কঠোর ইসলামী অনুশাসন চালাবে না।
এমনকি, তাদের বিরোধিতাকারীদেরকেও কঠোর শাস্তি দিচ্ছে তালেবান। শনিবার তারা চার অভিযুক্ত অপহরণকারীকে গুলি করে হত্যা করে তাদের মৃতদেহ হেরাত প্রদেশের রাস্তায় ঝুলিয়ে রাখে।
এমন পরিস্থিতিতে চুল কাটা এবং দাড়ি রাখার জন্য হেয়ারড্রেসারদের শরিয়া আইন মেনে চলার নির্দেশ আসলো। দক্ষিণ হেলমন্দ প্রদেশের সেলুনে জারি করা একটি বিজ্ঞপ্তিতে তালেবান কর্মকর্তারা এ সতর্কবার্তা দেন।
বিবিসির দেখা সেই নোটিশে লেখা ছিল, "কারো কোনো অভিযোগ করার অধিকার নেই।"
এ বিষয়ে কাবুলের এক নাপিত বলেন, "তালেবান যোদ্ধারা বারবার এসে আমাদেরকে দাড়ি ছাঁটা বন্ধ করার নির্দেশ দিচ্ছে। তাদের মধ্যে একজন আমাকে এটিও বলেছিল যে, তারা আমাদের ধরার জন্য গোপন ইনসপেক্টর পাঠাতে পারে।"
কাবুলের অন্যতম বড় সেলুন পরিচালনাকারী আরেকজন হেয়ারড্রেসার জানিয়েছেন, নিজেকে সরকারি কর্মকর্তা দাবি করা একজন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি তাকে ফোন করেছিলেন। তাকে 'আমেরিকান স্টাইল অনুসরণ করা' এবং কারো দাড়ি কামানো বা ছেঁটে ফেলা বন্ধ করতে নির্দেশ দেয় ঐ ব্যক্তি।
১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তালেবানদের প্রথম ক্ষমতা চলাকালীন সময় রংবেরঙের চুলের স্টাইল নিষিদ্ধ করে পুরুষদেরকে দাড়ি রাখতে জোর দিয়েছিল এই কট্টরপন্থী ইসলামী দল।
কিন্তু ২০০১ এর পর থেকে আফগানদের কাছে ক্লিন-শেভ চেহারা জনপ্রিয় হয়ে উঠে। সেই সাথে অনেক আফগান পুরুষই চুলের ফ্যাশনেবল কাটে আগ্রহী হয়ে ওঠেন।
দেশটির নাপিতরা বলছেন, নতুন এসব নিয়ম তাদের জীবিকা নির্বাহ কঠিন করে তুলছে।
তাদের একজন বিবিসিকে বলেন, "অনেক বছর ধরেই আমার সেলুনে তরুণরা তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী এবং ট্রেন্ডের সাথে তাল মেলানোর স্টাইলে শেভ করতেন। এখন আর এই ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার কোন মানে নেই।"
আরেকজন বলেন, "সেলুনের ব্যবসা এখন নিষিদ্ধ ব্যবসা হয়ে উঠেছে। ১৫ বছর ধরে আমি এ পেশায় আছি। কিন্তু, আমার মনে হয় না তা আর চালিয়ে যেতে পারবো"।
এদিকে হেরাতের এক নাপিত বলেন, "গ্রাহকেরা তাদের দাড়ি না কামানোর কারণ হচ্ছে রাস্তায় তালেবানের লক্ষ্যবস্তু হওয়া থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখা"।
এদিকে চুল কাটার দাম কমানো সত্ত্বেও, তার ব্যবসার অবস্থা এখন শোচনীয়। "কেউ তাদের চুলের স্টাইল বা ফ্যাশন নিয়ে এখন আর চিন্তা করছে না," বলেন তিনি।
- সূত্র- বিবিসি