ইরাক যুদ্ধের গোপন নথি 'পুড়িয়ে ফেলার নির্দেশ' দিয়েছিলেন টনি ব্লেয়ার
২০০৩ সালের আলোচিত ইরাক আক্রমণ 'অবৈধ প্রমাণিত হতে পারে' এমন এক নথি নিজের প্রতিরক্ষা সচিবকে পুড়িয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছিলেন সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী (১৯৯৭-২০০৭) টনি ব্লেয়ার। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য ডেইলি মেইলের প্রতিবেদন অনুযায়ী, তৎকালীন দেশটির প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার দায়িত্বপ্রাপ্ত সচিব জিওফ্রে উইলিয়াম হুন নিজেই এ কথা জানিয়েছেন।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ব্লেয়ারকে নতুন বছরে যুক্তরাজ্যের অন্যতম সর্বোচ্চ সম্মানজনক 'নাইটহুড' উপাধিতে ভূষিত করেন ব্রিটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ। গত শুক্রবার তাকে 'ব্রিটিশ অর্ডার অফ শিভালরি'-এর 'মোস্ট নোবেল অর্ডার অফ দ্য গার্টার'-এর নাইট কম্প্যানিয়ন নিযুক্ত করেন দেশটির রানী। এটি ব্রিটেনের ইতিহাসে সবচেয়ে প্রাচীনতম সম্মাননা। তবে, ব্লেয়ারকে এই সম্মাননা দেওয়ার ব্যাপারটি মেনে নিতে পারছেন না অনেকেই। দেশটির জনসাধরণের এক অংশের দাবি, সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী যুদ্ধাপরাধী। ইরাক যুদ্ধে সরাসরি জড়িত থাকার কারণে তাকে যেকোনো সার্বজনীন সম্মাননা পাওয়ার ক্ষেত্রে 'সর্বনিম্ন যোগ্য ব্যক্তি' হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন তার নিজের দেশেরই সাধারণ মানুষ।
এমনি নাইট উপাধি ফিরিয়ে নিতে পিটিশন স্বাক্ষরেরও আয়োজন করা হয়েছে। গত তিনদিনে, মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ৬ লাখ ৭০ হাজারেরও বেশি মানুষ স্বাক্ষর করেছেন ওই পিটিশনে।
সাধারণ মানুষের এই দাবিতে আরও গতি এনে দিয়েছে সাবেক প্রতিরক্ষা সচিব জিওফ্রে হুনের গোপন নথি পুড়িয়ে ফেলার চাঞ্চল্যকর তথ্য।
২০১৫ সালে যখন এই একই প্রশ্ন উঠেছিল, তখন স্যার টনি ব্লেয়ার বলেছিলেন, 'এ ধরনের দাবি ভিত্তিহীন'। তবে যুদ্ধ শুরু হওয়ার সময় প্রতিরক্ষার দায়িত্বে থাকা জিওফ্রে হুন এখন জোর দিয়েই বলছেন, অভিযোগটি সত্য ছিল। তার এই দাবি ১০ নং ডাউনিং স্ট্রিটকে বেশ বেকাদায় ফেলেছে।
হুন বলেছেন, তার প্রধান ব্যক্তিগত সচিবকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ব্লেয়ারের চিফ অফ স্টাফ জোনাথন পাওয়েল নথিটি পড়া মাত্রই 'পুড়িয়ে ফেলার' নির্দেশ দিয়েছিলেন। এই আদেশে তারা গভীরভাবে শঙ্কিত হয়েছিলেন এবং নথিটি পুড়িয়ে ফেলার পরিবর্তে নিরাপদে তালাবদ্ধ করে রেখেছিলেন।
দ্য ডেইলি মেইলের প্রতিবেদন অনুযায়ী সাবেক প্রতিরক্ষা সচিব হুন আরও জানান, ইরাক যুদ্ধ শুরু হওয়ার প্রায় এক বছর আগে স্যার টনি ব্লেয়ার ও সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ 'ঠান্ডা মাথায়' একটি চুক্তি করেছিলেন। এছাড়া, ১০ নং ডাউনিং স্ট্রিটের প্রেস অফিসের বিরুদ্ধে তিনি ইরাকের প্রয়াত নেতা সাদ্দাম হোসেনের সামরিক বাহিনীর হুমকিকে 'অতিরঞ্জিত' করে উপস্থাপন করার অভিযোগও আনেন।
এমনকি, স্যার টনি ব্লেয়ার যুদ্ধের দায় এড়াতে তাকে বরখস্ত করেছিলেন বলেও অভিযোগ করেন সাবেক এই প্রতিরক্ষা সচিব।
টনি ব্লেয়ারের ঘনিষ্ঠতম ও রাজনৈতিক সহযোগীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন জিওফ্রে হুন। ফলে তার কাছ থেকে আসা এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য ভাবমূর্তি একটু বেশিই ক্ষুণ্ণ করেছে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর। হুন তার স্মৃতিকথা 'সি হাউ দে রান'-এ ইরাক যুদ্ধের বেশ কিছু অজানা তথ্য তুলে ধরেছেন। বইটিতে তিনি লিখেছেন, যুদ্ধের বৈধতা সম্পর্কে অ্যাটর্নি জেনারেল লর্ড গোল্ডস্মিথের কাছ থেকে আসা গোপন পরামর্শকেও ধ্বংস করতে বলা হয়েছিল তাকে। কারণ লর্ড গোল্ডস্মিথ বলেছিলেন, 'যুদ্ধ বেআইনি হতে পারে'। তবে, যুদ্ধ শুরু হওয়ার কয়েক দিন আগে তিনি তার মন পরিবর্তন করে বলেছিলেন, যুদ্ধটি 'বৈধ'।
- সূত্র: দ্য ডেইলি মেইল