রাশিয়াকে যুদ্ধে টেনে নিতে চাইছে যুক্তরাষ্ট্র: পুতিন
যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়াকে ইউক্রেন যুদ্ধে টেনে নেওয়ার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
কয়েক সপ্তাহ ধরে চলতে থাকা ইউক্রেন সংকট নিয়ে প্রথমবারের মতো এই গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেন তিনি। পুতিন বলেছেন, রাশিয়ার ওপর আরও নিষেধাজ্ঞা চাপানোর অজুহাত হিসেবে এই সংকটকে ব্যবহার করাই আমেরিকার উদ্দেশ্য।
ইউরোপে ন্যাটো জোটকে কেন্দ্র করে রাশিয়ার উদ্বেগকেও যুক্তরাষ্ট্র উপেক্ষা করেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এদিকে, ইউক্রেন সীমান্তের কাছাকাছি রুশ সেনা মোতায়েনকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা বেড়েই চলেছে। সম্প্রতি ট্যাঙ্ক ও আর্টিলারি থেকে শুরু করে অত্যাধুনিক গোলাবারুদ, এমনকি বিমানশক্তি সবকিছুতে সজ্জিত করে প্রায় ১ লাখ সৈন্য ইউক্রেন সীমান্তে মোতায়ন করেছে রাশিয়া। আর একে ইউক্রেনে আক্রমণ চালানোর প্রস্তুতি হিসেবে আখ্যা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র তথা পশ্চিমাবিশ্ব। তবে, পশ্চিমাদের এমন অভিযোগকে সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছে রাশিয়া।
এর আগে ২০১৩ বা ২০১৪ সালের দিকে ইউক্রেনের রুশপন্থী সরকারের বিরুদ্ধে জনসাধারণের প্রচণ্ড বিক্ষোভ দেখা দেয়। সেই বিক্ষোভে ইউক্রেনের তৎকালীন সরকারের পতন হয়, এবং তার জায়গায় ক্ষমতায় আসে তীব্র রুশবিরোধী ও পশ্চিমাপন্থী সরকার। ইউক্রেনে রুশ ভাষা নিষিদ্ধকরণসহ নানাধরণের রুশবিরোধী পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়ায় ২০১৪ সালের মার্চে ক্রিমিয়া দখল করে নেয় রাশিয়া।
পূর্ব ইউক্রেনের একাংশ নিয়ন্ত্রণকারী রুশপন্থী বিদ্রোহীরাও ক্রিমিয়া দখলের ব্যাপারটিকে সমর্থন করে। ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া দখলের সময় রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর প্রকাশ্য হস্তক্ষেপে অন্তত ১৪ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল এবং কমপক্ষে ২ মিলিয়ন মানুষ তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছিল।
এদিকে, ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতি ভলোদিমির জেলেনস্কি মঙ্গলবার সতর্ক করেছেন, রাশিয়া আক্রমণ করলে এটি শুধু 'ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যকার যুদ্ধ হবে না' বরং এটি সমগ্র ইউরোপে 'পূর্ণ মাত্রার' একটি যুদ্ধ হবে।
অন্যদিকে, মস্কোতে হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবানের সঙ্গে আলোচনার পর প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেছেন, "আমার মনে হচ্ছে, ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র উদ্বিগ্ন নয়... বরং রাশিয়ার উন্নয়নকে আটকে রাখাই তাদের প্রধান লক্ষ্য। সম্ভবত ইউক্রেন যুক্তরাষ্ট্রের সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর একটি হাতিয়ার।"
পুতিনের দাবি, পূর্ব ইউরোপে ন্যাটোর আরও সম্প্রসারণের বিষয়ে রাশিয়ার আপত্তিকে উপেক্ষা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই অঞ্চলে আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক নিরাপত্তার নিশ্চয়তা না দিয়ে মস্কোর ওপর অযাচিত অভিযোগ আনছে তারা।
সেইসঙ্গে পুতিন সতর্ক করেছেন, ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগদানের ইচ্ছা যদি পূরণ হয়, তাহলে সেটি অন্যান্য সদস্যদেরকেও রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে টেনে আনতে পারে।
তিনি বলেন, "কল্পনা করুন ইউক্রেন একটি ন্যাটো সদস্য এবং (ক্রিমিয়া পুনরুদ্ধারের জন্য) দেশটি সামরিক অভিযান শুরু করল... আমরা কি তাহলে ন্যাটোর সঙ্গে যুদ্ধ করতে যাচ্ছি? কেউ কি এই বিষয়ে চিন্তা করেছেন? মনে হচ্ছে তারা এ চিন্তা করেননি।"
- সূত্র: বিবিসি