রাশিয়ার প্রতিরক্ষা শিল্পের উপর 'উল্লেখযোগ্য’ প্রভাব ফেলবে না মার্কিন নিষেধাজ্ঞা : বিশ্লেষক
রাশিয়ার অস্ত্র উন্নয়ন এবং উৎপাদন কোম্পানিগুলোর উপর উল্লেখযোগ্য খরচ আরোপ করার লক্ষ্যে সম্প্রতি রাশিয়ার প্রতিরক্ষা শিল্পের উপর নতুন নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর ধারণা, রাশিয়ার আয়ের একটি প্রধান উৎস, অস্ত্র ব্যবসাকে প্রভাবিত করতে পারে এই নিষেধাজ্ঞা।
কিন্তু বিশ্লেষকদের মতে, মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আদতে তেমন কার্যকর নয়। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা খাত ইতোমধ্যেই স্বাধীনভাবে নিজেদের কাজ পরিচালনা করে। পশ্চিমা প্রযুক্তির উপর নির্ভরশীল নয় তারা।
বিশ্লেষকরা বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার অস্ত্রের প্রধান ক্রেতা ভারতকেও নিষেধাজ্ঞা দেবে। মূলত, চীনের উপর চাপ সৃষ্টি করতে ভারতকে ব্যবহার করতে চায় তারা।
মার্কিন মিডিয়া আউটলেট ডিফেন্স নিউজ বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, বাইডেন প্রশাসনের স্টেট ডিপার্টমেন্টের নিষেধাজ্ঞাগুলো ২২টি রাশিয়ান সংস্থাকে লক্ষ্য করে দেওয়া হয়েছে। যুদ্ধ বিমান, পদাতিক যুদ্ধের যান, ইলেকট্রনিক যুদ্ধ ব্যবস্থা, ক্ষেপণাস্ত্র এবং রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর জন্য মনুষ্যবিহীন আকাশযান তৈরি করে এই সংস্থাগুলো।
হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, রাশিয়ার প্রতিরক্ষা খাতের উপর নিষেধাজ্ঞা 'রাশিয়ান অস্ত্র উন্নয়ন এবং উৎপাদন কোম্পানিগুলোর উপর উল্লেখযোগ্য পরিমাণ খরচ আরোপ করবে'।
শুক্রবার গ্লোবাল টাইমসকে চীনা সামরিক বিশেষজ্ঞ এবং টিভি ভাষ্যকার সং ঝংপিং বলেন, মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আসলে রাশিয়ার উপর বিধ্বংসী আঘাত হানতে পারবে না।
মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় অস্ত্র ও সরঞ্জামের দাম বাড়লে সেটি হবে মুদ্রাস্ফীতির ফলাফল।
ডিফেন্স নিউজের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, মার্কিন নিষেধাজ্ঞা রাশিয়ার অস্ত্র রপ্তানিকে প্রভাবিত করতে পারে।
উল্লেখ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পর বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অস্ত্র রপ্তানিকারক দেশ রাশিয়া। কংগ্রেসনাল রিসার্চ সার্ভিসের মতে, এই খাতে রাশিয়ার বার্ষিক বিক্রির গড় ১৩ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি।
বুধবার, মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের একজন কর্মকর্তা আইন প্রণেতাদের বলেন, রাশিয়া নতুন বিক্রয় করতে বা বিদ্যমান সিস্টেমে গ্রাহকদের মেইন্টেনেন্স সুবিধা দিতে সক্ষম হবে, এমন কোনো সম্ভাবনা নেই।
এছাড়া, রাশিয়ার একজন বিশ্লেষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে গ্লোবাল টাইমসকে বলেন, "আমাদের সামরিক নিষেধাজ্ঞাকে অনেক দিক থেকে বিবেচনা করতে হবে। ক্যাটাগরি, গন্তব্যস্থল এবং বন্দোবস্তের পদ্ধতি বাছাই করে আমরা রাশিয়ার সামরিক এবং বৈদেশিক বাণিজ্যের উপর এর প্রভাব বিশ্লেষণ করতে পারি।"
"কিন্তু সামগ্রিকভাবে খুব বেশি প্রভাব পড়া উচিত নয়," বলেন তিনি।
রাশিয়ার অস্ত্র মূলত ভারত, তুরস্ক এবং ইরানে বিক্রি হয়। বিশ্লেষক বলেন,ন্যাটোর সদস্য তুরস্ক ছাড়া ভারত ও ইরান যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে নেই।
"ইরান সুইফটের অধীনে না থাকায় রাশিয়ার সাথে তাদের সামরিক বাণিজ্য অবশ্যই অন্য উপায়ে স্থাপিত হয়েছে। এটি মার্কিন নিয়ন্ত্রণে নেই," বলেন তিনি।
তার মতে, রাশিয়ার বৈদেশিক বাণিজ্যের প্রায় ৫০ শতাংশ আসে জ্বালানি বাণিজ্য থেকে। দেশটির রাজস্ব আয়ের ৪০ শতাংশও আসে এই খাত থেকে।
অন্যদিকে সং বলেন, রাশিয়ান অস্ত্র আন্তর্জাতিক বাজারে আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারে।
যুদ্ধ হল অস্ত্রের পারফরম্যান্স প্রদর্শনের সর্বোত্তম এবং একমাত্র উপায়। যুদ্ধে নিজেদের অস্ত্র প্রদর্শন রাশিয়াকে তার আন্তর্জাতিক অস্ত্রের বাজার হারাতে দেবে না, বরং আরও সফলতা এনে দিবে, বলেন তিনি।
ইউক্রেন সংকটের আগেও, ক্রেতাদের অনুমোদনের মাধ্যমে রাশিয়ার অস্ত্র রপ্তানিকে ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
বেইজিং-ভিত্তিক একজন সামরিক বিশেষজ্ঞ নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তাদের এই পদক্ষেপ কিছুটা কার্যকর হলেও তা রাশিয়ান অস্ত্রের উচ্চ চাহিদা বন্ধ করতে পারেনি।
২০১৭ সালে পাশ হওয়া কাউন্টারিং আমেরিকান অ্যাডভারসারিজ থ্রু স্যাংশানস আইনের অধীনে রাশিয়ান প্রতিরক্ষা বা গোয়েন্দা খাতের সাথে লেনদেনের উপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার অনুমোদন দেওয়া হয়।
কিন্তু, এতে একটি মওকুফ কর্তৃপক্ষ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
ইউক্রেন সঙ্কটের মধ্যে বাইডেন প্রশাসনের নজর এখন ভারতের দিকে। রাশিয়ার সামরিক সরঞ্জামের মজুদ এবং নির্ভরতার জন্য ভারতের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে কিনা তা বিবেচনা করছে তারা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন বিশেষজ্ঞ বলেন, ভারত সম্ভবত রাশিয়ার সাথে তাদের ঐতিহাসিকভাবে তৈরি ঘনিষ্ঠ সামরিক সম্পর্ক ছিন্ন করবে না। এই অবস্থায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে নিষেধাজ্ঞা দিলে এর প্রভাব পড়বে চীনের বিরুদ্ধে মার্কিনদের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলে।
- সূত্র- গ্লোবাল টাইমস