এক গৃহহীন পাকিস্তানির সুইস ব্যাংক হিসাবে ৪০০ কোটি রুপি এলো কী করে!
পাকিস্তানি নাগরিক মোহাম্মদ জাভেদ জানতেন না তার নাম-পরিচয় দিয়ে সুইস ব্যাংকে খোলা হয়েছে অ্যাকাউন্ট। আর তাতে জমা আছে শত শত কোটি টাকা। অথচ তিনি হতদরিদ্র, মাথা গোঁজার ঠাইও নেই। বহু কষ্টে দিন গুজরান করেন। খোদ নিজ দেশ পাকিস্তানেই নেই তার ব্যাংক হিসাব। কেন্দ্রীয় আয়কর বিভাগেও সংগত কারণেই তিনি নিবন্ধিত করদাতাও নন।
জাভেদের নাম-পরিচয় ব্যবহার করে একটি নয়, সুইস একটি ব্যাংকে খোলা হয় দুই দুটি অ্যাকাউন্ট। তাতে রাখা হয় ৪০০ কোটি রুপি! শুনতে অবিশ্বাস্য হলেও, এমনটাই ঘটেছে। পাকিস্তানি ব্যাংকগুলোতে জাল হিসাব খোলার ঘটনা নতুন না হলেও, এবার জানা গেল সুইস ব্যাংকগুলোও এই চর্চার বাইরে নয়।
জাল অ্যাকাউন্ট দুটির তথ্য জার্মানির সুডেস্টসে জেইটাং সংবাদপত্রের কাছে ফাঁস করেছেন একজন হুইসেলব্লোয়ার। তার সূত্রে দৈনিকটি জানিয়েছে, ২০০৬ সালে অ্যাকাউন্ট দুটিতে সর্বশেষ ৪০১ মিলিয়ন রুপি সমপরিমাণ অর্থ জমা পড়ে। আর ওই বছরই সেগুলো বন্ধ করা হয়।
দৈনিকটি এ ঘটনাকে তাদের সংগঠিত অপরাধ ও দুর্নীতির খবর রিপোর্টিং প্রকল্পের আওতায় প্রকাশ করেচে। এই প্রকল্পে যুক্ত আছে আরও ৪৬টি অন্যান্য গণমাধ্যম।
জানা যায়, ২০০৩ সালে জাভেদের বয়স যখন মাত্র ২৬ তখনই তার নামে ক্রেডিট সুইসে ব্যাংকে প্রথম কর্পোরেট অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। অথচ তখন কারখানা শ্রমিক জাভেদের দৈনিক আয় ছিল মাত্র ২০০-৩০০ রুপি। এমনকি দেশের বাইরে যাওয়ার কোনো পাসপোর্টও ছিল না।
এরপর ২০০৫ সালে অ্যাকাউন্ট দুটির ব্যালান্স ৩৪০ কোটিতে পৌঁছায়। এর মাত্র এক সপ্তাহ আগে জাভেদ নিজের প্রথম পাসপোর্ট করান এবং মালয়েশিয়ায় কর্মী হিসেবে যেতে নিবন্ধন করান। কিন্তু, রিক্রুটিং এজেন্ট এজন্য তার কাছে দেড় লাখ রুপি দাবি করেন, যা দিতে পারেননি হতদরিদ্র জাভেদ, একটু বাড়তি আয়ের জন্য মালয়েশিয়াও আর যাওয়া হয়নি। পরবর্তীতে তিনি নিজের পাসপোর্টও আর নবায়ন করাননি।
অর্থাৎ তিনি বিদেশে যাওয়ার পাসপোর্ট করানোর আগেই বিশ্বের প্রভাবশালী একটি ব্যাংকে তার নামে অ্যাকাউন্ট খোলা হয়।
তার নাম-পরিচয় ব্যবহার করে অসাধু কোনো ব্যক্তি/গোষ্ঠী শত শত কোটি টাকা লেনদেন করেছে, জানার পর দারুণ মর্মাহত হয়েছেন এ পাকিস্তানি। তিনি বুঝে উঠতেই পারছেন না কে তার পরিচয় দিয়ে একাজ করতে পারে।
তিনি বলেন, "সুইস ব্যাংকে হিসাব খোলার সামর্থ্য থাকলে, আজ এই স্যুয়ারেজ ড্রেনের ওপর আমাকে থাকতে হতো না। হয়তো অভিজাত কোনো আবাসিক এলাকায় আমার বাড়ি থাকতো।"
পাকিস্তানি গণমাধ্যম যখন জাভেদের ঘিঞ্জি ঠিকানায় পৌঁছায়, তখন চারপাশে ছিল ধবংসস্তূপ। মাস কয়েক আগেই সেখানে গড়ে ওঠা বস্তিটি গুঁড়িয়ে দিয়েছে লাহোর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। তার মধ্যে বসেই গণমাধ্যমকে এসব কথা বলেন জাভেদ। তিনি এ নিষ্ঠুর পরিহাসে যেমন বিস্মিত, তেমনি ব্যথিত।
পাকিস্তানি গণমাধ্যম দ্য নিউজ জানাচ্ছে, লাহোরের গুলবার্গে পয়োনিষ্কাসন নালার ওপর ছিল জাভেদের বস্তি। তার দাদা ছিলেন ভারত অধিকৃত কাশ্মীরের জম্মুবাসী। ১৯৪৭ সনে দেশভাগের সময় তিনি উদ্বাস্তু হয়ে লাহোরে আসেন। তখন থেকেই দারিদ্র্য পরিবারটির সদস্যদের নিত্যসঙ্গী।
জাভেদ তার বর্তমান দুর্দশার কথা জানিয়ে আক্ষেপ করে বলেন, তারা (নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ) আমাদের বস্তিটি গুঁড়িয়ে দিয়েছে। আমরা ক্ষমতাহীন, খেটে খাওয়া মানুষ। আমরা দুর্নীতি করি না, তার জন্য দায়ীও নই। তাই মাত্র ১০ মিনিটের নোটিশে আমাদের ঘর ভেঙে ফেলা হয়। আমরা তাদের যথাযথ নোটিশ দেওয়ার অনুনয়ও করি। কিন্তু, তারা আমাদের কথা কানেই তোলেনি। এখন আমি গৃহহীন। আমার জিনিসপত্র ভাঙা ঘরের ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছে। সেখান থেকেই দু-একটি জিনিস উদ্ধার করতে পেরেছি।"
- সূত্র: দ্য নিউজ ডটকম ডটপিকে