রাশিয়ার তেল কেনায় ভারতের ওপর কেন নাখোশ যুক্তরাষ্ট্র?
রাশিয়া-ইউক্রেনের চলমান যুদ্ধে মস্কোর বিরুদ্ধে যেখানে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, সেখানে রাশিয়ান তেলের উচ্চ আমদানি নয়াদিল্লিকে একটি 'বড় ঝুঁকির' মুখে ফেলতে পারে। মার্কিন প্রশাসনের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার বক্তব্যে উঠে এসেছে এটি।
রাশিয়ার বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান নিষেধাজ্ঞা অনুযায়ী অন্যান্য দেশের রাশিয়ার তেল কিনতে কোনো বাধা নেই। কিন্তু, ভারতের বিষয়ে দেওয়া এই সতর্কবার্তা দেখে বোঝা যাচ্ছে, অন্য দেশের আমদানিকে সীমাবদ্ধ করার চেষ্টা করবে ওয়াশিংটন।
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের নয়াদিল্লিতে দু'দিনের সফরের আগেই মার্কিন কর্মকর্তার এই মন্তব্য পাওয়া গেল।
বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম তেল আমদানিকারক এবং ভোক্তা ভারতের শোধনকারীরা ২৪ ফেব্রুয়ারি যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে স্পট টেন্ডারের মাধ্যমে রাশিয়ান তেল কিনে নিচ্ছে।
২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ভারত কমপক্ষে ১৩ মিলিয়ন ব্যারেল রাশিয়ান তেল কিনেছে। অথচ, ২০২১ এ পুরো বছর জুড়ে তারা তেল কিনেছিল ১৬ মিলিয়ন ব্যারেল।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই সূত্র জানিয়েছে, "ভারত যদি ছাড়ে রাশিয়ার তেল কেনে এবং গত বছরের তুলনায় আমদানির পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে না বাড়ায়, তাহলে সে ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোনো আপত্তি নেই।"
তবে, আমদানি 'কিছুটা বাড়ানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছে' বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এছাড়া, একজন মুখপাত্র বলেন, তেল কেনার বিষয়ে রাশিয়া ও ভারতের মধ্যে আলোচনার বিষয়ে স্টেট ডিপার্টমেন্ট অবগত।
জ্বালানি বাজারে রাশিয়ান জ্বালানির উপর নির্ভরতা কমানোর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপকে উৎসাহ দিচ্ছে বাইডেন প্রশাসন, বলেন তিনি।
তবে, মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চায়নি। অন্যদিকে, হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদও এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
প্যারিস-ভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সির অনুমান অনুযায়ী, রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা এবং ক্রেতাদের অনীহার ফলে এপ্রিল থেকে বৈশ্বিক বাজারে রাশিয়ান ক্রুড প্রতিদিন ৩ মিলিয়ন ব্যারেল করে কমতে পারে।
সূত্রটি আরও বলে, "সব নিষেধাজ্ঞা মেনেই রাশিয়ার সাথে তাদের লেনদেন চালাতে হবে। তা না হলে নিজেদেরকে একটি বড় ঝুঁকির মধ্যে ফেলবে ভারত।"
ইউক্রেনের উপর আক্রমণের পর সুইফট গ্লোবাল ব্যাংক মেসেজিং সিস্টেম থেকে রাশিয়াকে বিচ্ছিন্ন করা এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লেনদেন সীমাবদ্ধ করাসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা হচ্ছে রাশিয়ার ওপর।
এমনকি তেলসহ রাশিয়ান জ্বালানির মার্কিন আমদানিও নিষিদ্ধ করেছে বাইডেন প্রশাসন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত অন্যান্য দেশে রাশিয়ার তেল ও গ্যাস রপ্তানির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেনি তারা।
এদিকে, ইউক্রেনে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানালেও মস্কোর পদক্ষেপের ওপর নিন্দা জানায়নি ভারত। যুদ্ধের বিষয়ে জাতিসংঘের একাধিক প্রস্তাবে ভোট দেওয়া থেকে বিরত ছিল তারা।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, রাশিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করার ক্ষেত্রে 'কিছুটা নড়বড়ে অবস্থান' ছিল ভারতের।
এ বিষয়ে মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, "আমরা শীঘ্রই নিষেধাজ্ঞা আরও জোরদার করতে যাচ্ছি। আমরা বিশ্বের সর্বত্র, সবাইকে বলছি, আপনারা যে নিষেধাজ্ঞা মেনে চলছেন তা নিশ্চিত করুন।"
- সূত্র: রয়টার্স