আমেরিকার নিষেধাজ্ঞার পরও যেসব দেশের কোম্পানি রাশিয়া থেকে তেল কিনছে
ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আমেরিকাসহ বেশ কয়েকটি পশ্চিমা দেশ। জার্মানিসহ ইউরোপের প্রধান অর্থনীতিগুলো জ্বালানি পেতে রাশিয়ার ওপর বড় মাত্রায় নির্ভরশীল। তাই এখনও তারা সম্পূর্ণরূপে আমদানি নিষেধাজ্ঞার পথ বেঁছে নেয়নি, এই সিদ্ধান্ত ইউরোপিয় ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলোর মধ্যে মস্কোর বিরুদ্ধে আরও কঠোর অবস্থানে যাওয়ার বিষয়ে মতভেদকেও তুলে ধরেছে।
অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ব্রিটেন ও আমেরিকা যুদ্ধ শুরুর কিছুদিন পরই আমদানি নিষেধাজ্ঞার পথ বেঁছে নেয়।
কিন্তু, ২৭ সদস্য রাষ্ট্রের জোট ইইউ এবিষয়ে কোনো ঐক্যমত্যে পৌঁছাতে পারেনি। জোটের অর্থনৈতিক শক্তিকেন্দ্র জার্মানির কর্মকর্তারা বলেছেন, এই মুহূর্তে চটজলদি কোনো সিদ্ধান্ত নিলে তাতে বাড়বে জ্বালানি কেনার খরচ। অর্থনীতিতে মন্দা দেখা দেবে। ইইউ সদস্য হাঙ্গেরিও আমদানি নিষেধাজ্ঞার বিপক্ষে।
আর ইইউয়ের সকল সদস্যের সর্বসম্মতি ছাড়া এমন নিষেধাজ্ঞা আরোপ সম্ভব নয়। যদিও ইউরোপের কিছু আমদানিকারক কোম্পানি আমেরিকান নিষেধাজ্ঞার আইনি জটিলতায় পড়ার ঝুঁকি মাথায় রেখে স্ব-উদ্যোগে রাশিয়ার অপরিশোধিত জ্বালানি বর্জন করছে।
অন্যদিকে, ইউরোপের বড় কমোডিটি বা নিত্যপণ্য ও কাঁচামাল ক্রেতা সংস্থা- ট্রাফিগুরা ও ভিটল রাশিয়ার সাথে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিবদ্ধ থাকায় তেল কেনা অব্যাহত রেখেছে।
তবে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু পর দুটি কোম্পানিই বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে রাশিয়ার সাথে নতুন চুক্তিতে না যাওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানায়।
রাশিয়ার আগ্রাসনকে নিন্দা জানাতে অস্বীকার করা এবং এশীয় বাজারের বৃহৎ দুই ক্রেতা দেশ- ভারত ও চীনও রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল (ক্রুড) কেনা বন্ধ করেনি।
বিভিন্ন দেশের রাশিয়ার তেলের বড় ক্রেতা কোম্পানি:
নেফতোহিম বুরগাস:
বুলগেরিয়ার এই জ্বালানি শোধনাগার রুশ কোম্পানি লুকওয়েলের মালিকানাধীন। এখানে শোধিত তেলের ৬০ শতাংশই আসে রাশিয়া থেকে। কোম্পানিটি রুশ ক্রুডের আমদানি ও শোধন অব্যাহত রেখেছে।
মিরো:
জার্মানির সবচেয়ে বড় জ্বালানি শোধনাগার কোম্পানি মিরোর ১৪ শতাংশ সরবরাহ উৎস রাশিয়ার ক্রুড। এতে রুশ কোম্পানি রসনেফটের রয়েছে ২৪ শতাংশ মালিকানা।
পিসিকে শোয়েদ:
জার্মানির এই শোধনাগারে রসনেফটের মালিকানা ৫৪ শতাংশ। এখানে রাশিয়া থেকে দ্রুজবা পাইপলাইন দিয়ে ক্রুড আসে।
পেরটামিনা:
ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত জ্বালানি সংস্থা পিটি পেরটামিনা তাদের আধুনিকায়িত পরিশোধনাগারের জন্য রাশিয়া থেকে ক্রুড কেনার বিষয়ে ভাবছে।
হেলেনিক পেট্রোলিয়াম:
গ্রীসের সবচেয়ে বড় জ্বালানি শোধনাগারটি তাদের মোট সরবরাহের ১৫ শতাংশের জন্য রাশিয়ার ক্রুডের ওপর নির্ভরশীল। চলতি মাসের শুরুতে কোম্পানিটি সৌদি আরব থেকেও অতিরিক্ত চালান কেনার ঘোষণা দেয়।
ইসাব:
ইতালির সবচেয়ে বড় এ রিফাইনারির মালিকানা রাশিয়ার লুকঅয়েল। এটি সুইজারল্যান্ডভিত্তিক লিটাসকো এসএ কোম্পানির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত। ইসাব রাশিয়ার ক্রুড ও নন ক্রুড (আংশিক শোধিত) উভয় ধরনের জ্বালানি প্রক্রিয়াকরণ করে।
মোল:
হাঙ্গেরির এই জ্বালানি তেল বাণিজ্য গ্রুপের মালিকানায় হাঙ্গেরি, ক্রোয়েশিয়া ও স্লোভাকিয়ায় তিনটি শোধনাগার রয়েছে। এসব কোম্পানি এখন দ্রুজবা পাইপলাইনের তেল কিনছে। হাঙ্গেরি রাশিয়ার তেল ও গ্যাসের ওপর আমদানি নিষেধাজ্ঞারও বিরোধী।
জিল্যান্ড রিফাইনারি:
নেদারল্যান্ডসের এ রিফাইনারির ৪৫ শতাংশ মালিকানা রয়েছে লুকঅয়েলের। কোম্পানিটি রাশিয়ার ক্রুড কেনার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি বলে জানিয়েছে আল জাজিরা।
রটারড্যাম রিফাইনারি:
এটির মালিকানা আমেরিকার বহুজাতিক কোম্পানি এক্সন মোবিলের। কোম্পানিটি সেখানে রাশিয়ার তেল ব্যবহারের বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি আল জাজিরার কাছে।
হিন্দুস্তান পেট্রোলিয়াম:
ভারতের এই রাষ্ট্রায়ত্ত রিফাইনারিও রাশিয়ার ক্রুডের বড় ক্রেতা। আগামী মে মাসে ব্যবহারের জন্য তারা এরমধ্যেই ২০ লাখ ব্যারেল ক্রুড কিনেছে।
ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন:
ভারতের এ শীর্ষ রিফাইনারি গত ২৩ মার্চ আগামী মে মাসের জন্য ৩০ লাখ ব্যারেল রাশিয়ার ক্রুড কিনেছে। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর রাশিয়া থেকে দ্বিতীয়বারের মতো অপরিশোধিত তেল কেনার এ চুক্তি করেছে কোম্পানিটি।
অন্যান্য বড় সংস্থা:
ভারতের বেসরকারি শোধনাগার নায়ারা এনার্জি কিনছে ১৮ লাখ ব্যারেল। তেল শিল্পের ব্রিটিশ জায়ান্ট রসনেফটে তাদের অংশীদারিত্ব বিক্রির উদ্যোগ নিলেও, রাশিয়ার বন্দর থেকে তেল লোডিংয়ের কিছু চুক্তি করেছে।
এছাড়া, পূর্বে কেনা চালান আগামী এপ্রিল পর্যন্ত গ্রহণ করবে জাপানের সবচেয়ে বড় শোধনাগার ইনিওস।
ফিনল্যান্ডের শোধনাগার নেস্তে জানিয়েছে, চলতি বছর রাশিয়ার তেলের বিদ্যমান চুক্তিগুলোর মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তারা নতুন করে কোনো চালান কিনবে না।
- সূত্র: আল জাজিরা