প্রতিদিন সোয়া দুই বিলিয়ন কাপ কফি
প্রতিদিনের ২.২৫ বিলিয়ন কাপ কফিতে যাদের এক দু'কাপের অংশীদারিত্ব আছে আমি তাদের একজন। আপনিও কি একজন নন?
কথাটা কার মনে করতে পারছি না, কিন্তু কফিখোরদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ: কফির কারণেই তো সকালে ঘুম থেকে উঠি।
কফিতে ক্যাফেইন থাকবেই। ক্যাফেইন আতঙ্ক যাদের তাদের জন্য বাজার ডিক্যাফিনেটেড কফি সরবরাহ করে। অজ্ঞাতনামা মণিষীর কথা: ডিক্যাফিনেটেড কফি লোমছাড়া বিড়ালের মতো। একালের একজন রসিক ক্যাফেইনযুক্ত কফি আর ডিক্যাফিনেটেড কফির এমন তুলনা দিয়েছেন: প্রথমটি রক্তমাংসের কিম কার্দাশিয়ান আর পরেরটি কিম কার্দাশিয়ানের ম্যানিকিন।
কফি না চা?
দিন যতই যাচ্ছে চা উপেক্ষা করে কফির দিকেই বেশি হাত উঠছে। দুটো হিসেব দেখলাম: ২০২০ সালে বিশ্বজুড়ে কফির বাজার ৪৬৪ বিলিয়ন ডলারের আর চায়ের ২০০ বিলিয়ন ডলার। তা হোক, জনপ্রিয়তায় এখনো চা এগিয়ে।
উৎপাদন যাদের, ভোগ তাদের নয়
২০১৯ সালের হিসেব, কোন দেশ কতটুকু জমিতে কফি চাষ করেছে: ব্রাজিল ১.৮৫ মিলিয়ন হেক্টর, ইন্দোনেশিয়া ১.২৬ মিলিয়ন হেক্টর, আইভরি কোষ্ট প্রায় ১ মিলিয়ন হেক্টর, কলম্বিয়া ০.৮৫, ইথিওপিয়া ০.৭৬, মেক্সিকো ০.৬৩, ভিয়েতনাম ০.৬, উগান্ডা ০.৪৭, হন্ডুরাস ০.৪২ এবং ভারত ০.৪১ মিলিয়ন হেক্টর। এই তালিকাটি বড় করতে থাকলে একেবারে শেষের দিকে বাংলাদেশের নামও আসবে। গ্লোবাল কফি ম্যাপে বিন্দুবৎ হলেও বাংলাদেশ ওঠে আসবে। ২০২০ সালের হিসেবে গ্রিন কফির বৈশ্বিক উৎপাদন ১৭৫.৬৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন। এর মধ্যে ব্রাজিলের একক ভাগ ৬৯ মিলিয়ন টন। পরবর্তী ছটি দেশ হচ্ছে: ভিয়েতনাম ২৯ মিলিয়ন, কলম্বিয়া, ১৪.৬ মিলিয়ন ইন্দোনেশিয়া ১২.৪ মিলিয়ন, ইথিওপিয়া ৭.৪ মিলিয়ন, হন্ডুরাস ৬.৯ মিলিয়ন এবং ভারত ৫.৭ মিলিয়ন টন।
জমির পরিমাণে কিংবা উৎপাদনের ওজনে যারা শীর্ষে, ভোগের হিসেবে তাদের কেউই উপরের দিকে নেই। বার্ষিক মাথা পিছু কফি পানে কোন দেশের নাগরিক কতো কিলোগ্রাম কফি পান করে থাকেন তার ২০১৮ সালের হিসেবটি দেখুন।
ফিনল্যান্ড - ১২.০ কেজি
নরওয়ে - ৯.৯ কেজি
আইসল্যান্ড - ৯.০ কেজি
ডেনমার্ক - ৮.৭ কেজি
নেদারল্যান্ডস- ৮.৪ কেজি
সুইডেন - ৮.২ কেজি
সুইজারল্যান্ড- ৭.৯ কেজি
বেলজিয়াম - ৬.৮ কেজি
লুক্সেমবার্গ - ৬.৫ কেজি
কানাডা - ৬.৫ কেজি
বলা আবশ্যক ওজনটা কফি পাউডারের, তৈরি গরম কিংবা ঠাণ্ডা কফির নয়।
কফি বীজ ব্রাজিলে প্রথম পৌঁছে ১৭২৭ সালে। ১৮ শতকের শেষ ভাগ পর্যন্ত হেইতিই ছিল কফির প্রধান রফতানিকারক। ফ্রান্সের বিরুদ্ধে হেইতির স্বাধীনতা যুদ্ধ তাদের কফি উৎপাদনে প্রভাব বিস্তার করে। প্লান্টাররা সরে আসেন ব্রাজিলে। ১৭৭৯ সালে ব্রাজিলের কফি সমুদ্রগামী জাহাজে বিদেশ যায়, প্রথমবারের রফতানি ১৯ ব্যাগ। ১৮০৬ সালে রফতানি বেড়ে ২০ হাজার ব্যাগে পৌঁছে। ইতালি, স্পেন, পর্তুগাল ও জাপানের অভিবাসীরা কফিচাষ শ্রমিক হিসেবে দলবেধে যোগ দেয়। সাও পাওলো নগর গড়ে উঠে মূলত কফির টাকাতে। বন্দর পর্যন্ত কফি পরিবহনের জন্য রেল লাইন স্থাপিত হয় (আসাম-বেঙ্গল রেলওয়ে লাইন স্থাপনের পেছনেও ব্রিটিশ বণিকদের চা বাণিজ্য কাজ করেছে), ১৮০০ থেকে ১৯২৯ পর্যন্ত টানা ১৩০ বছর কফিই হয়ে ওঠে ব্রাজিলের আয় ও সম্পদের প্রধান উৎস। তখন আদর করে কফি বিনকে ডাকা হতো সবুজ সোনা। ১৯২৯-এ মহামন্দার শুরুতে নিউ ইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জ ধ্বস ব্রাজিলের কফি বাজারেও ধ্বস নামালো, ব্রাজিল সরকার ৭১০০০ ব্যাগ কফি পুড়িয়ে ফেলতে বাধ্য হলো। ব্রাজিল নতুন করে কফি উৎপাদন মানচিত্র প্রণয়ন করে। অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে ১৯৯৯ সালে রফতানি করে ২ কোটি ৩০ লক্ষ ব্যাগ। সাম্প্রতিক উৎপাদন প্রায় ৩ কোটি ৭০ লক্ষ ব্যাগ।
১৮৩০ সালে ব্রাজিলের ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা শোর তুলে, স্বর্ণ নয় কফি। কফির জন্য তারা রাষ্ট্রকেও বিনিয়োগে বাধ্য করে। ১৮৬০ থেকে ১৮৮৫ সালের মধ্যে ৭০০০ কিলোমিটার রেললাইন বসে, কফির সাথে সাথে অন্যান্য বাণিজ্য, শ্রমিক পরিবহন সহজসাধ্য হয়ে ওঠে। ১৯২০ এর দশকে কফির একচেটিয়া বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করে ব্রাজিল, পৃথিবীর মোট রফতানির ৮০ ভাগই সরবরাহ করে ব্রাজিল।
ঘন রঙ রোষ্ট কফি বা ডার্ক কফিতে বেশি ক্যাফেইন থাকে-এমন একটি মিথ বছরের পর বছর ধরে চলে আসছে, বেশি ক্যাফেইন এড়াতে কেউ কেউ হালকা রঙ কফি পছন্দ করেন। বাস্তবতা একেবারে ভিন্ন। কফি বিন যত রোষ্ট করা হয়, রঙ তত গাঢ় হয় এবং ক্যাফেইনসহ তার অনেক ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র উপাদান উবে যেতে থাকে। কিন্তু রোষ্ট করার প্রক্রিয়ার শুরুতে ক্যাফেইনসহ অন্যান্য উপাদান দৃঢ় থাকে।
ফ্রিজে রাখলে কফি বিন তাজা ও কড়া থাকে।
এটি সত্যি নয়। বাতাস, জলীয় বাষ্প এবং উষ্ণতা এই তিনটিই তাজা কফির শত্রু। ঠান্ডা ও অন্ধকার জায়গায় কফির স্বাদ অনেকটাই অক্ষুন্ন থাকে। কিন্তু ফ্রিজের অভ্যন্তরীণ পরিবেশ ও শীতল বাষ্পবিন্দু কফির স্বাদ ও ঘ্রাণকে প্রভাবিত করে। ফ্রিজের পরিবেশ কফিকে স্যাতস্যাতে করে ফেলতে পারে।
বরং সূর্য, অন্য কোনো আলো ও তাপের উৎস এবং জলীয় বাষ্প থেকে দূরে বায়ু নিরোধক পাত্রে কফি সবচেয়ে ভালো থাকে।
জ্বালানির পর কফিই দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক পণ্য!
বিশ্ববাণিজ্য পরিসংখ্যানের দিকে না তাকিয়ে বিশিষ্ট কফিভক্তরা এই দাবিটিকে প্রায় প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছেন। এমন কি ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটে সাক্ষ্য দিতে এসে ষ্টারবাকসের প্রতিনিধিও একই তথ্য উপস্থাপন করেন।
কার্যত ২০১৭ সালে অশোধিত তেলের রফতানি বাণিজ্যের পরিমাণ ৭৯২ বিলিয়ন ডলার আর পরিশোধিত পেট্রোলিয়াম ৫৭৩ বিলিয়ন ডলার। এর পাশে কফির বাণিজ্যের আকার তেলের একাংশ মাত্র। বাণিজ্যের আকার বিবেচনায় কফির অবস্থান ১০৭ তম। যদি কেবল কৃষিপণ্য বিবেচনায় আনা হয় তাতেও সবার আগে সয়াবীজ ও সয়া পন্য (৫৮.১ বিলিয়ন ডলার), তার পরের অবস্থান গমের (৪২.৬ বিলিয়ন ডলার) এমনকি পাম অয়েলের বাণিজ্যও কফির চেয়ে ৩ বিলিয়ন ডলার বেশি। সম্ভবতঃ মানুষের কফিভক্তিই এই মিথটি প্রতিষ্ঠা করতে বেশি ভূমিকা রেখেছে। এটাও সত্যি কফির বাজার দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে।
ক. কফি পঞ্চদশ শতকে অটোমান রাজত্বে স্বামীকে তালাকের একটি আইনগত ভিত্তি প্রদান করেছিল। পুরোনো দিনে আরব স্বামী যদি সকালে পান করার জন্য ভালো মানের তাজা কফি সংসারে সরবরাহ করতে না পারত তাহলে স্ত্রী এমন 'অপদার্থ স্বামীকে' তালাক দেবার একটি যুক্তিসম্মত কারণ পেয়ে যেত।
এটাও স্মরণ রাখতে হবে ইথিওপিয়ায় কফি আবিষ্কৃত হবার কিছুকাল পর ১৫১১ সালে মক্কাতে কফি নিষিদ্ধ করা হয়। তখন বিশ্বাস করা হতো কফি মানুষের বিপ্লবী চিন্তা ও আলস্যকে প্ররোচিত করে।
খ. ১৯৩২ সালের লসএঞ্জেলস অলিম্পিকে খেলোয়াড় পাঠানো এবং তাদের ব্যয় নির্বাহ করার মতো অর্থ ব্রাজিল সরকারের হাতে ছিল না। সুতরাং ব্রাজিল কফি ভর্তি এক জাহাজে খেলোয়াড়দের উঠিয়ে দিল। পথে তারা কফি বিক্রি করে অলিম্পিকে অংশগ্রহণ ও অবস্থান ও প্রত্যাবর্তনের খরচ তুলে নিল।
৪. সপ্তদশ শতকের শেষ দিকে লেখালেখি কিংবা রাজনৈতিক আলোচনার জন্য বিলেতিরা লন্ডনের কফি শপে জমায়েত হতে থাকে। ধীরে ধীরে বিভিন্ন পেশার লোকজনও আসতে শুরু করে। তাদের একটি বড় সময় কাটে ক্যাফেতে। ক্ষুব্ধ স্ত্রীরা স্বামীদের বিরুদ্ধে একটি লিফলেট ছাড়ে। স্বামীদের বিরুদ্ধে বলা ঠিক হবে না, বরং কফির বিরুদ্ধে। তাতে বলা হয় নারী যখন দাম্পত্য জীবনে বিছানার কাছে আসবে, সে কথা বলবে তার অন্তরের সাহসের শিখা নিয়ে, কিন্তু তখন দেখে তার কফিভক্ত স্বামী কেবল হাড়গোড় হয়ে বিছানায় পড়ে আছে। একটি নেহায়েত অপ্রয়োজনীয় লাশকে তার আলিঙ্গন করার কি প্রয়োজন?
নেপোলিয়নিক যুদ্ধের পর রুশ সৈন্যরা প্যারিস দখল করে নেয়। রেস্তোরায় ও শুঁড়িখানায় রুশ সৈন্যরা তাদের মাতৃভাষায় ওয়েটারকে ডাকে, খাবার ও পানীয় নির্দেশ করে বলে, বিস্ত্রো। মানে তাড়াতাড়ি করো। অতিথি খাওয়ার পর তাড়াতাড়ি যে সব ক্যাফে, রেস্তোরা শুঁড়িখানা খাবার দেয় সেগুলো বিস্ত্রো নামে পরিচিত হয়ে ওঠে।
প্যারিসের ক'টি বিস্ত্রো বিশ্বখ্যাত সাহিত্যিকদের স্মৃতিলালন করে। এমন একটি Café La Rotonde, এখানেই আসতেন আর্নেস্ট হেমিংওয়ে, স্কট ফিটজেরাল্ড, গারট্রুড স্টেইন এবং টিএস এলিয়ট। হেমিংওয়ের দ্য সান অলসো রাইজেস উপন্যাসে এই ক্যাফেটির উল্লেখ রয়েছে। প্যারিসের মপারনাসের এমনকি ভিন্ন নামের কোনো ক্যাফেতে পৌঁছে দেবার জন্য ট্যাক্সি ড্রাইভারকে বলা হলে ড্রাইভার যাত্রীকে এই ক্যাফেতে এনেই হাজির করত।
Le Deux Magots ক্যাফেতে বসতেন জ্য পল সার্ত্রে, জ্য জিরাদু এবং সিমন দ্যু বুভেয়োর। ১৯৩৩ সালে এই ক্যাফের নামে গোকুর সাহিত্য পুরস্কারের প্রতিদ্বন্দ্বী একটি সাহিত্য পুরস্কার প্রদান করা শুরু হয়।
Café de Flore -এ এসে বসতেন পাবলো পিকাসো, জ্য পল সার্ত্রে সিমন দ্যু বুভোয়ার, আর্নেস্ট হেমিংওয়ে। ১৯৯৪ সাল থেকে এই ক্যাফের নামেও প্রি ডি ফ্লোর সাহিত্য পুরস্কার দেওয়া শুরু হয়েছে।
La Closerue des Lilas এই ক্যাফেতে আসতেন হেমিংওয়ে, ফোর্ড ম্যাডক্স ফোর্ড এবং স্কট ফিটজেরাল্ড।
কাফে মমার্ত-এ আসতেন চেক লেখক ম্যাক্স ব্রড এবং তার বন্ধু ফ্রানৎজ কাফকা।
শিল্পী, বুদ্ধিজীবী এবং রাজনীতিবিদদের পছন্দ ব্রাসারি লিপ। পঞ্চাশের দশকে এখানে নিয়মিত আসতেন মার্ক শাগাল এবং আলবেয়ার কাম্যু।
আরো ক্যাফে
হিটলারও ক্যাফেতে বসেই ইহুদি নিধনের পরিকল্পনা করেছেন।
বিউলেস অন গ্র্যাফটন স্ট্রিট: প্যারিসের ক্যাফের অনুসরণে করা এই ক্যাফের লেখক খদ্দেরদের মধ্যে ছিলেন জেমস জয়েস, স্যামুয়েল বেকেট, সিন ও'ক্যাসি ও প্যাট্রিক কাভানাগ।
লিটারেরি ক্যাফে, সেইন্ট পিটার্সবার্গ: ফিওদর দস্তয়েভস্কি এবং নিকোলে চেরনিশেভস্কির প্রিয় ক্যাফে। দ্বন্দ্বযুদ্ধে মৃত্যুর আগে এই ক্যাফেই ছিল আলেকজান্ডার পুশকিনের লাস্ট স্টপেজ।
এন্টিকো ক্যাফে গ্রেকো: রোম শহরের সবচেয়ে পুরোনো এই ক্যাফেতে এসেছেন লর্ড বায়রন, শেলি, হান্স ক্রিশ্চিয়ান অ্যান্ডারসন এবং জন কিটস। জন কিটস থাকতেন এই ক্যাফের খুব কাছাকাছি।
ল্য বিইলা ক্যাফে আর্জেটিনায় বুয়েনস আইরেস শহরে বুদ্ধিজীবীদের আড্ডার কেন্দ্রস্থল। লেখক শিল্পী বৃদ্ধিজীবী ও রাজনীতিবিদ সবারই এটি নিত্যকার তীর্থ। লেখক অ্যাদলফো সিজারের জন্য বরাবরই বরাদ্দ কুড়ি নম্বর টেবিল। এটি তাঁর পছন্দের টেবিল। তাঁর বন্ধু হোর্হে লুই বোরহেস প্রায় নিয়মিতই এখানে আসতেন। একজন লেখক টানা বারো বছর এখানে বসেই লিখেছেন।
হোটেল কাস্তেলার কাফের কৌলিন্য ও নীরবতা মুগ্ধ করেছে ফেদেরিকো গার্সিয়া লোরকাকে। ১৯৩৩ সালে বুয়েনস আইরেস এসে এখানে কয়েকটি বক্তৃতা দিয়েছিলেন।
কাফেটেরিয়া লন্ডন সিটির টেবিলেই হুলিয়ো কোর্তাজার প্রথম উপন্যাসের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ লিখে ফেলেছেন।
কায়রোর ক্যাফে রিচে: শুরুটা ১৯০৮-এ, নতুন ফরাসি এক ক্রেতা এটিকে ফরাসি ধাঁচের কাফেতে পরিণত করেন। বিংশ শতকের অন্যতম হটস্পট এই ক্যাফে ইতিহাসের অন্যতম সাক্ষী। নোবেল বিজয়ী নাগিব মাহফুজ তাঁর রুটিন-বাঁধা জীবনের একটি বড় অংশ কাটিয়েছেন এই ক্যাফেতে। এমনকি নিজের জীবনের রুটিন বদলাতে হবে ভেবে নোবেল পুরস্কার গ্রহণ করতে সুইডেন যাননি। নাগিব মাহফুজের যত দেখা-সাক্ষাৎ সবই এখানে। বলা হয় একটি জীবন তিনি ক্যাফেতেই কাটিয়ে দিয়েছেন। বিখ্যাত কণ্ঠশিল্পী উম্মে কুলসুম-মরুভূমির কোকিল এখানে গান গেয়েছেন। কায়রোর দ্য ক্যাফেও সংস্কৃতির অন্যতম কেন্দ্র।
কফি চেইন শপ
২০২০ সালের হিসেবে শীর্ষে রয়েছে স্টারবাকস। তারপর যথাক্রমে কোস্টা কফি (দ্বিতীয়), টিম হর্টনস (তৃতীয়), ডানকিন ডোনাটস (চতুর্থ) পিট'স কফি (পঞ্চম), টুলিস (ষষ্ঠ) ম্যাককাফে (সপ্তম), ক্যারিবু কফি (অষ্টম), লাভাজা (নবম) এবং গ্লোরিয়া জিনস (দশম)।
স্টারবাকসে শুরুটা ১৯৭১ সালে আমেরিকার সিয়াটলে। এর প্রতিষ্ঠাতা তিনজন কিছু বিনিয়োগ সমর্থন পাবার জন্য ধনী ব্যবসায়ীদের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন। আর এখন সেই স্টারবাকসের প্রায় ৩৩ হাজার ক্যাফে দেখে নিশ্চয়ই তাদের হা-পিত্যেশা করতে হচ্ছে। সেপ্টেম্বর ২০২০ পর্যন্ত পৃথিবীর ৮৩টি দেশে ৩২৬৬০টি স্টারবাকস ক্যাফে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। প্রথম দুজন শিক্ষক, তৃতীয় জন লেখক- জোর বন্ডউইন, জেভ সিগল এবং গর্ডন বাউকার সিয়াটলের পাইক প্রেস মার্কেটে প্রথম ক্যাফে প্রতিষ্ঠা করন; ১৯৮০-র দশকে তারা হাওয়ার্ড শুলজ-এর কাছে বেচে দেন। তারই হাতে স্টারবাকস এর বিশ্বায়ন ঘটে। ১৯৯৬ সালে স্টারবাকসের জাপান যাত্রা দিয়ে বিশ্বায়ন শুরু করে, তারপর ফিলিপিন্স, তারপর ব্রিটেন, ভারতে আসে ২০১১ সালে, টাটা কফির সাথে যৌথ উদ্যোগ গ্রহণ করে।
স্টারবাকসে পাঁচ ধরনের কফি কাপ: শর্ট (২৪০ এমএল) টল (৩৫০ এমএল) গ্র্যান্ডে (৪৭০ এমএল), ভেন্টি (৭৭০ এমএল) এবং ট্রেনটা (৮৯০ এমএল)।
দ্বিতীয় অবস্থানের কোস্টা কফি আসলে কোকা কোলা কোম্পানির সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান এটিও ১৯৭১ সালে যাত্রা শুরু করে। সদর দফতর ইংল্যান্ডে। তৃতীয় অবস্থানের টিম হর্টন কানাডিয়ান প্রতিষ্ঠান। ২০১৮ সালের হিসেবে স্বদেশ ও ১৪টি বিদেশ মিলিয়ে টিম হর্টন ৪৮৪৬টি ক্যাফে পরিচালনা করছে।
ব্ল্যাক কফি
ব্ল্যাক কফি-মূলত আগাথা ক্রিস্টির নাটক। মঞ্চের জন্য এটাই ক্রিস্টির প্রথম নাটক। চার্লস অসবর্ন এই নাটকের কাহিনী নিয়ে আগাথা ক্রিস্টির মৃত্যুর (১৯৭৬) পর একই নামে একটি উপন্যাস রচনা করেন। লেখক হিসেবে তাতে ক্রিস্টি ও অসবর্ন দুজনেরই নাম। বিজ্ঞানী স্যার ক্লদ অ্যামোরি নতুন যে বিস্ফোরক উদ্ভাবন করতে যাচ্ছেন তার ফর্মুলা চুরি হয়ে যাওয়ার সাথে সাথেই তিনি আগাথা ক্রিস্টির বিখ্যাত গোয়েন্দা এরকিউল পোয়ারোকে জানান, পোয়ারো জানান তার সহযোগী হ্যাস্টিংসকে। তারা পৌঁছতেই ব্ল্যাক কফিতে মেশানো বিষের প্রতিক্রিয়ায় স্যার অ্যামোরির মৃত্যু হয়। পোয়ারো নিশ্চিত ফর্মুলা চোর এবং স্যার অ্যামোরির ঘাতক তার আশেপাশেরই একজন। তিনি যখন একজন একজন করে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করছিলেন এবং তীক্ষ্ন নজর রেখে তার নীরব তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছিলেন তাকেও ব্ল্যাক কফি পরিবেশন করা হয়। কফি খেয়ে এক সময় এই বিখ্যাত গোয়েন্দা যখন মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন ফর্মুলা চোরও ঘাতক স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে স্বরূপে আত্মপ্রকাশ করতেই আড়ালে লুকোনো হ্যাস্টিংস অপরাধীকে ধরে ফেলেন। ততক্ষণে গা ঝাড়া দিয়ে উঠে দাঁড়ান এরকিউল পোয়ারো।
বিষ মেশানো কালো কফির কাপটি হ্যাস্টিংসের সহায়তায় তিনি আড়াল করে একই ধরনের ভিন্ন একটি কাপের কালো কফি চুমুক দিয়ে যখনই মৃত্যুবরণের অভিনয়টি করেন সে ফাঁদে পা দেয় অতি সতর্ক ফর্মুলা চোর ও ঘাতক।
ব্ল্যাক কফি একাধিকবার সিনেমা হয়েছে, নাট্য মঞ্চে উঠেছে বহুবার।
যুগপৎ কফি ও গ্রন্থপ্রেমিকদের জন্য কয়েকটি সেরা কফি নন-ফিকশন:
ক. ব্রিটা ফলমারের দ্য ক্রাফট অব সায়েন্স অব কফি
খ. জেসিকা ইস্টোর ক্র্যাফট কফি
গ. জেমস হফম্যানের দ্য ওয়ার্ল্ড এটলাস অব কফি
ঘ. জেমস ফ্রিম্যানের দ্য ব্লু বটল ক্রাফট অব কফি
ঙ. অ্যানেট মল্ডভারেরের কফি অবসেশন
চ. স্টুয়ার্ট লি অ্যালেনের দ্য ডেভিলস কাপ
ছ. সুসান জিমারের লাভ কফি
জ. ড্যানিয়েল জ্যাফির ব্রুইং জাস্টিস
ঝ. হাওয়ার্ড শুলজের হার্ড স্টারবাকস ফট ফর ইটস লাইফ
ঞ. নিনা জর্জের লিটল ফ্রেঞ্চ বিস্ত্রো