আরেকটি হারে বিবর্ণ সেমি-ফাইনাল স্বপ্ন
টানা দুই হারে কোণঠাসা অবস্থা। আরেকটি দুই ম্যাচ বাকি থাকতেই সেমি-ফাইনাল স্বপ্ন হয়ে উঠবে বিবর্ণ কিংবা বিদায় নিশ্চিত। এমন সমীকরণে বাংলাদেশের কাঁধে চাপের পাহাড় ছিল, সেটা বলাই বাহুল্য। এমন সময়ে ঘুরে দাঁড়াল মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দল। বল হাতে যথেষ্ট দাপট দেখানো গেল, কিন্তু ব্যাট হাতে সেটা পারা গেল না।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে রোমাঞ্চ ছড়ানো ম্যাচে হেরে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সেমি-ফাইনাল খেলার স্বপ্ন বিবর্ণ হয়ে উঠলো বাংলাদেশের। শুক্রবার শারজাহতে সুপার লিগে ১ নম্বর গ্রুপে নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে ক্যারিবীয়দের কাছে ৩ রানে হেরে গেছে বাংলাদেশ।
জয়ের পথেই ছিল বাংলাদেশ। খারাপ সময় পেছনে ফেলে ব্যাট হাতে নেতৃত্ব দিয়েছেন লিটন দাস, শেষ দিকে দারুণ ইনিংস খেলেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। কিন্তু শেষের রোমাঞ্চ জিতে ম্যাচ নিজেদের করে নেন গেইল পোলার্ডরা।
শেষ ২৪ বলে জয়ের জন্য বাংলাদেশের দরকার ৩৩ রান। এই ওভারে ডোয়াইন ব্রাভোর নিশ্চিত তিনটি ওয়াইড ডেরিভারি বলে রূপান্তরিত করে নিজেদের ওপর চাপ বাড়ান লিটন-মাহমুদউল্লাহ। শেষ ওভারে গিয়ে প্রয়োজন দাঁড়ায় ১৩ রানের। কিন্তু মাহমুদউল্লাহ ৯ রানের বেশি তুলতে পারেননি। শেষ বলে ৪ চার রান দরকার পড়লে মাহমুদউল্লাহ ব্যাটে-বলেই করতে পারেননি।
সুপার লিগে পাওয়া প্রথম এই জয়ে সেমি-ফাইনাল স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ। অন্যদিকে বাংলাদেশের বিদায় অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে গেল। পরের দুই ম্যাচে জিতলেও তা যথেষ্ট হবে না, মেলাতে হবে জটিল হিসাব। অথবা সহজ হিসাবে বেজে যাবে মাহমুদউল্লাহদের বিদায় ঘণ্টা।
টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নেমে বাংলাদেশের দারুণ বোলিংয়ের বিপক্ষে ধুঁকেছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটসম্যানরা। কিন্তু শেষের দিকে সেটা পুষিয়ে দেন ম্যাচ সেরা নিকোলাস পুরান। তার ক্যামিও ইনিংস ও ওপেনার রস্টন চেসের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে ৭ উইকেটে ১৪২ রান তোলে ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানরা।
জবাবে উদ্বোধনী জুটিতে পরিবর্তন এনেও লাভ হয়নি বাংলাদেশের। খারাপ শুরুর পর একটা সময়ে লিটন দাস ও মাহমুদউল্লাহ হাল ধরে দলকে জয়ের পথে রাখলেও শেষ অংশে হাসি ফোটাতে পারেননি তারা। লিটনের ৪৪ ও মাহমুদউল্লাহর অপরাজিত ৩১ রানের পরও ৫ উইকেটে ১৩৯ রানে থামে বাংলাদেশের ইনিংস।
উদ্বোধনী জুটিতে বদল এনে জয়ের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নামে বাংলাদেশ। এদিন লিটন দাসের জায়গায় নাঈমের সঙ্গে ইনিংস উদ্বোধন করেন সাকিব আল হাসান। জাতীয় দলের এটাই তার প্রথম অভিজ্ঞতা। ফিল্ডিংয়ের সময় থেকেই খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটা সাকিব ব্যাট হাতেও অস্বস্তিতে ছিলেন। সাবধানী শুরুর পর আন্দ্রে রাসেলকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে আউট হন ৯ রান করা সাকিব।
কিছুক্ষণ পর থামেন ১৭ রান করা নাঈম শেখও। এরপর কিছুটা সময় দলকে পথ দেখান লিটন দাস ও সৌম্য সরকার। ১৩ বলে ১৭ রান করে বাজে শটে আউট হন সৌম্য। মুশফিকুর রহিম আরও হতাশার ব্যাটিং করেন। এক বল আগেই চার মেরে রামপালের একটি স্লোয়ারে স্কুপ খেলতে গিয়ে বোল্ড হন ৮ রান করা ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান।
তখনও ঠিক পথেই ছিল বাংলাদেশ। লিটনের সঙ্গে যোগ দিয়ে চাওয়া মাফিকই ব্যাটিং করতে থাকেন মাহমুদউল্লাহ। এই জুটিতে জয়ের স্বপ্ন ভালোভাবেই বাঁচিয়ে রাখে বাংলাদেশ। কিন্তু ১৭ ওভারে চাপ বাড়া ও ১৯তম ওভারে লিটনের বিদায়ে ম্যাচ প্রায় হাত থেকে ফসকে যায় বাংলাদেশের। মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে ৪০ রানের জুটি করা লিটন ৪৩ বলে ৪টি চারে ৪৪ রান করে আউট হন।
এখানেই মূলত পিছিয়ে পড়ে বাংলাদেশ। এরপর আফিফ হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে মাহমুদউল্লাহ চেষ্টা চালিয়েও দলকে জয় এনে দিতে পারেননি। ২৪ বলে ২টি চার ও একটি ছক্কায় ৩১ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। ওয়েস্ট হয়ে বোলিং করা পাঁচ বোলার রবি রামপাল, জেসন হোল্ডার, আন্দ্রে রাসেল, আকিল হোসেন ও ডোয়াইন ব্রাভো একটি করে উইকেট নেন।
এর আগে বল হাতে অসাধারণ শুরু হয় বাংলাদেশের। দলীয় ১২ রানে এভিন লুইসকে ফিরিয়ে দেন মুস্তাফিজুর রহমান। নিজের দ্বিতীয় ওভারে ক্রিস গেইলের স্টাম্প উপড়ে নেন দারুণ বোলিং করা শেখ মেহেদি হাসান। দুই ওপেনারই রান তুলতে ধুঁকছিলেন। ৪.২ ওভারে ১৮ রানে ২ উইকেট হারানো ক্যারিবীয়দের বিপদ আরও বাড়ান মেহেদি। নিজের তৃতীয় ওভারে শিমরন হেটমেয়ারকে সাজঘর দেখিয়ে দেন ডানহাতি এই অফ স্পিনার।
রস্টন চেসের সঙ্গে যোগ দিয়ে দলকে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা শুরু করেন অধিনায়ক কাইরন পোলার্ড। এ দুজন উইকেট পতন সামলালেও রান তুলতে পারছিলেন না। একেবারে ধীর গতিতে এগোচ্ছিল তাদের ইনিংস। ১৩তম ওভারে গিয়ে স্বেচ্ছায় মাঠ ছাড়েন পোলার্ড। উইকেটে যান আন্দ্রে রাসেল। কিন্তু পরের বলেই রান আউট হয়ে থামে তিনি।
এরপর উইকেটে গিয়ে নিজেদের ইনিংসের চেহারা মুহূর্তেই পাল্টে দেন পুরান। ব্যাট হারে রীতিমতো ঝড় তোলেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। শরিফুল ইসলামের বলে আউট হওয়ার আগে মাত্র ২২ বলে একটি চার ও ৪টি ছক্কায় ৪০ রানের ক্যামিও ইনিংস খেলেন পুরান। পরের বলে রস্টন চেসের স্টাম্প ভাঙেন শরিফুল। ফেরার আগে ৪৬ বলে ২টি চারে ৩৯ রানের মহাগুরুত্বপূর্ণ এক ইনিংস খেলেন ক্যারিবীয় এই ওপেনার।
এ দুজনই মূলত দলের হয়ে রান করেন। শেষের ৫ ওভারে ৫৮ রান তোলে ক্যারিবীয়রা। গেইল ৪, লুইস ৬, হেটমেয়ার ৯, পোলার্ড ১৪* ও রাসেল ০, ডোয়াইন ব্রাভো ১ ও জেসন হোল্ডার ১৫* রান করেন। মেহেদি হাসান, মুস্তাফিজুর রহমান ও শরিফুল ইসলাম দুটি উইকেট নেন। উইকেট না পেলেও দারুণ বোলিং করেন তাসকিন আহমেদ। ডানহাতি এই পেসার ৪ ওভারে মাত্র ১৭ রান খরচা করেন, ম্যাচে তিনি সবচেয়ে কম রান খরচা করেছেন।