এক নারীকে আক্রমণ করেছিল টাইসনের পোষা বাঘ
রিংয়ে উঠেই ঝড় তুলতেন। মুহূর্তেই প্রতিপক্ষের চেহারা পাল্টে দিতেন আমেরিকান কিংবদন্তি বক্সার মাইক টাইসন। অসংখ্য লড়াই জেতা টাইসন রিংয়ের বাইরেও ছিলেন 'আক্রমণাত্মক'। তার রিংয়ের বাইরের জীবনও ছিল ক্লাইম্যাক্সে ভরপুর। তাই তো কুকুর কিংবা বিড়াল নয়, বাসায় তিনটি বাঘ পুষতেন তিনি। সেখান থেকে একটি বাঘ একবার এক নারীকে আক্রমণ করে ক্ষত-বিক্ষত করে দিয়েছিল।
সম্প্রতি আমেরিকান র্যাপার ফ্যাট জোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই তথ্য জানিয়েছেন টাইসন। ঘটনাটি সাম্প্রতিক নয়, নব্বই দশকের। তখন টাইসনের বয়স সবে ২৬ বছর। এর কয়েক বছর আগে পেশাদার বক্সার হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেন আমেরিকার এই অবিসংবাদিত বক্সার।
ফ্যাট জোয়ের প্রোগ্রাম 'ফ্যাট জো শো'তে টাইসন জানান, তার সম্পত্তির সীমানায় অনধিকার প্রবেশ করা এক নারীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল তার পোষা বাঘ। অনুমতি না নিয়ে প্রবেশ করলেও বাঘের হামলার শিকার হওয়ায় মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন ওই নারী। বাঘের আক্রমণে ওই নারীর নাজেহাল অবস্থা দেখে তাকে আড়াই লাখ ডলার (২ কোটি ১৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা) দিয়েছিলেন টাইসন।
১৯৯২ থেকে ১৯৯৫ সালের মধ্যে ঘটনাটি ঘটে। টাইসন তখন জেলে ছিলেন। জেলে থাকা অবস্থাতেই পোষ্য প্রাণীর জন্য অর্ডার করেন টাইসন। শাবক অবস্থা থেকে বাঘগুলোকে বড় করে তোলার কথা জানান তিনি। কিন্তু বাঘ যে কখনও পুরোপুরি পোষ মানে না, সেটা বেশ পরে এসে বুঝতে পারেন তিনি।
টাইসন বলেন, 'কেউ একজন বেড়া টপকে আমার সম্পত্তির সীমানায় ভেতরে ঢুকে পড়েন। যেখানে আমার পোষা বাঘ ছিল। বাঘের সঙ্গে সে খেলতে শুরু করে। ওই নারীকে বাঘ চিনতে না পারায় মারাত্মক এক দুর্ঘটনা ঘটে যায় সেখানে।'
টাইসন জানান, মামলা করার চেষ্টা করেন ওই নারী। কিন্তু ওই নারী অবৈধভাবে টাইসনের সম্পত্তিতে ঢুকেছে, এটা প্রমাণ হওয়ায় মামলাটি বাদ হয়ে যায়। টাইসন বলেন, 'আমি দেখেছিলাম ওই নারীর কী অবস্থা করেছিল বাঘ। আমার অনেক অর্থ ছিল, আমি তাকে আড়াই লাখ ডলার দিয়ে দিই। আর যাই হোক, তার অবস্থা খুবই খারাপ ছিল।'
বাঘকে পুরোপুরি পোষ মানানো যে সম্ভব নয়, তখনই সেটা বুঝতে পারেন টাইসন। ৫৩ বছর বয়সী সাবেক এই বক্সার বলেন, 'আমি জানতাম না যে একজন মানুষের মাংসের জন্য বাঘ কী করতে পারে। আমার কোনও ধারণাই ছিল না।'
ওই ঘটনা থেকে পাওয়া শিক্ষা নিয়ে টাইসন বলেন, 'আপনি জানেন ওখান থেকে আমি কী শিখেছিলাম? আমি বোকা হয়ে গিয়েছিলাম। বাঘকে শতভাগ পোষ মানানোর কোনো রাস্তা নেই। এমন কোনো উপায় নেই, যে উপায়ে এটা করবেন। তাদের ইচ্ছা না থাকলেও দুর্ঘটনাবসত তারা আপনাকে মেরে ফেলবে। দুর্ঘটনাবসতই এটা করে তারা।'
ওই ঘটনার পর টাইসন নিজের ভুল বুঝতে পারেন। তার মনে হয় কোনোভাবেই বাঘের বাচ্চাগুলো বাড়িতে রাখা উচিত হয়নি। তিনি বলেন, 'আপনি যখন তাদের সাথে বাজেভাবে খেলবেন, তাদের ঘুষি দেবেন, তারাও আপনাকে ঘুষি ফিরিয়ে দেবে। তাতে আপনি শেষ হয়ে যাবেন। আমি তাদের ভালোবাসতাম, একসাথে ঘুমানোয় অভ্যস্ত ছিলাম। কিন্ত আমি খুশি যে আমি শিক্ষা নিতে পেরেছি। তাদেরকে বাসায় রাখা উচিত হয়নি। আমি ভুল ছিলাম।'
১৯৮৫ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত; ২০ বছর রিং দাঁপিয়ে বেড়িয়েছেন মাইক টাইসন। ইতিহাসের সর্বকনিষ্ঠ বক্সার হিসেবে মাত্র ২০ বছর চার মাস ২২ দিন বয়সে হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ন হন টাইসন।