এমবাপ্পের হ্যাটট্রিকে বিধ্বস্ত মেসির বার্সা
কিলিয়ান এমবাপ্পেকে এখনও মনে আছে আর্জেন্টিনার। হয়তো চিরকালই মনে থাকবে। ২০১৮ বিশ্বকাপে ফ্রান্সের ১৯ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ডের গতির কাছে অসহায় হয়ে পড়েছিল মেসি-ম্যারাডোনাদের দেশ, ম্যাচ হেরেছিল ৪-৩ গোলে। এমবাপ্পের বিপক্ষে বার্সেলোনারও একই রকম অভিজ্ঞতা হলো, ফরাসি ফরোয়ার্ড এবার আরও ক্ষীপ্ত।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ ষোলোর প্রথম লেগে এমবাপ্পের হ্যাটট্রিকে বার্সেলোনাকে ৪-১ গোলের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে প্যারিস সেইন্ট জার্মেই (পিএসজি)। এই জয়ে শেষ আটের পথে এগিয়ে রইলো পিএসজি। ঘরের মাঠ ন্যু ক্যাম্পেই করুণ দশা হওয়া বার্সাকে শেষ আটের টিকেট পেতে গড়তে হবে ইতিহাস। অথচ লিওনেল মেসির গোলে বার্সাই শুরুতে এগিয়ে যায়। কিন্তু দ্রুতই দলকে সমতায় ফিরিয়ে পরে আরও দুটি গোল করেন এমবাপ্পে। পিএসজির হয়ে বাকি গোলটি মোইজে কিনের।
অসাধারণ এমবাপ্পের বিপক্ষে বার্সাকে রীতিমতো অসহায় দেখিয়েছে। যেমন অসহায় দেখিয়েছিল ২০১৮ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনাকে। প্রতিপক্ষের ওপর এমবাপ্পের চড়ে বসার সময়েও মিল আছে। আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ৬০ মিনিটের পর দুটি গোল করেছিলেন এমবাপ্পে। এই ম্যাচেও তার পরের দুটি গোল ৬৫ ও ৮৫তম মিনিটে। প্রথম গোলটি ৩২তম মিনিটে করেন পিএসজি ফরোয়ার্ড।
অথচ সমালোচনার বোঝা নিয়ে বার্সার বিপক্ষে মাঠে নামতে হয় এমবাপ্পেকে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের নক আউট পর্বে তার অনুজ্জ্বল পারফরম্যান্স নিয়ে কম কাটা-ছেঁড়া হচ্ছিল না। গ্রুপ পর্বের আগের ৯ ম্যাচে মাত্র একটি গোল ছিল তার। বার্সার মাঠে জ্বলে উঠবেন এমবাপ্পে, এমন আশাও হয়তো করা হয়নি। কিন্তু এক ম্যাচ দিয়েই সব সমালোচনা ঝেরে ফেললেন ফরাসি এই তারকা ফুটবলার।
এমন হারের পর বার্সা ভক্তরা হয়তো ২০১৬-১৭ মৌসুমেই ফিরে যাচ্ছেন, আশায় বুক বাধছেন। ওই আসরে শেষ ষোলোর প্রথম লেগে ঘরের মাঠে বার্সাকে ৪-০ গোলে হারায় পিএসজি। কিন্তু ফিরতি লেগে ঘরের মাঠে বার্সা হয়ে ওঠে অপ্রতিরোধ্য, ৬-১ গোলের জয় তুলে নিয়ে শেষ আটে পৌঁছায় কাতালানরা। এবার কোয়ার্টার ফাইনালের টিকেট কাটতে পিএসজির মাঠে ইতিহাস গড়তে হবে বার্সেলোনাকে।
ম্যাচের শুরুটা দেখে বোঝার উপায় ছিল না, এভাবে বিধ্বস্ত হতে যাচ্ছে বার্সেলোনা। ২৭তম মিনিটে এগিয়েও যায় তারা। ডি-বক্সে ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ং ফাউলের শিকার হলে পেনাল্টির বাঁশি বাজার রেফারি। স্পট কিক থেকে গোল করে দলকে এগিয়ে নেন চলতি আসরে চতুর্থ গোলের দেখা পাওয়া মেসি।
এর পরের সময়টাতে কেবলই পিএসজি আর এমবাপ্পের শাসন। গোল হজম করে যেন বিগড়ে যায় দলটি। একের পর এক আক্রমণ সাজাতে থাকে তারা। ৩২তম মিনিটে গোলের দেখাও মিলে যায়। ডি-বক্সে মার্কো ভেরাত্তির দারুণ পাস থেকে বল পান এমবাপ্পে। বক্সের ছয় গজ বাইরে থেকে জোরালো শটে বার্সার জালে বল পাঠান তিনি।
প্রথম গোলের পর শাসন জারি রেখে খেলতে থাকে পিএসজি। ৬৫ তম মিনিটে দ্বিতীয় গোলের দেখা পান এমবাপ্পে। এ সময়ে আলেসান্দ্রো ফ্লোরেন্সির ক্রস ঠেকাতে ব্যর্থ হন বার্সার গোলরক্ষক টের স্টেগেন। দলকে বিপদমুক্ত করতে ছুটে যান পিকে। কিন্তু তার পায়ে লেগে বল চলে যায় এমবাপ্পের কাছে। সুযোগ কাজে লাগিয়ে গোল আদায় করে নেন তিনি।
৫ মিনিট পর আবারও গোল উৎসবে মাতে পিএসজি। এবার গোলদাতা মোইজে কিন। ৭০তম মিনিটে লেয়ান্দ্রো পারদেসের ফ্রি-কিকে হেড করে বল জালে জড়ান ইতালিয়ান এই ফরোয়ার্ড। শেষটা করেছেন এমবাপ্পে। ৮৫তম মিনিটে ডি-বক্সে ঢুকে কোনাকুনি শটে গোল করে হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেন তিনি।