করোনার বিরতিতে কী করবেন ক্রিকেটাররা
করোনাভাইরাস সতর্কতায় স্থগিত হয়ে গেছে দেশের সব খেলাধুলা। আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত যেকোনো ধরনের খেলা আয়োজনে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বাংলাদেশ সরকার। খেলাহীন অবস্থায় আগামী এই কয়েকদিন কীভাবে কাটবে, সেটা নিয়ে ভাবছেন ক্রিকেটাররা। যাদের বাড়ি ঢাকার বাইরে, তাদের বেশিরভাগ ক্রিকেটার বাড়িতে যাবেন বলে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার পর্যন্তও সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলেন না ক্রিকেটাররা। কারণ সরকার আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত সব খেলাধুলা স্থগিত করলেও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) প্রথমে সেটা করেনি। বঙ্গবন্ধু ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগের দ্বিতীয় রাউন্ডের খেলা স্থগিত করে বিসিবি। বৃহস্পতিবার বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন জানিয়েছেন, অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত থাকবে দেশের সব ধরনের ক্রিকেট।
এই ঘোষণার জন্যই অপেক্ষা করছিলেন জাতীয় দল ও ঘরোয়া ক্রিকেটাররা। বাধ্যতামূলক ছুটি মিলে যাওয়ায় বাড়ি যাওয়ার কথা জানালেন বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার। তবে আছে ব্যতিক্রমও। কেউ কেউ মনে করেন, বাড়িতে গেলেই যে নিরাপদে থাকবেন, তেমন নয়। বরং ঢাকায় থাকলে ভালো চিকিৎসা পাওয়া সম্ভব।
বাড়িতে ফিরতে চাইলেও অনুশীলন থেকে দূরে থাকতে চান না ক্রিকেটাররা। ফিটনেস ঠিক রাখতে যা যা করা দরকার, সেসব চালিয়ে নিতে চান তারা। এ সময় ফিটনেসের বাইরে অন্য কোনো কিছু নিয়ে কাজ করার সুযোগ আছে বলে মনে করেন না তারা।
কিছুদিন আগেই ওয়ানডের অধিনায়কত্ব ছাড়া মাশরাফি বিন মুর্তজা নড়াইলে নিজের বাড়িতে আছেন। ফিরবেন ২১-২২ মার্চের দিকে। দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে তিনি বলেন, 'পারিবারিক কাজে বাড়িতে আছি। ২১-২২ মার্চ ঢাকা ফিরব। খেলা না হওয়াটা তো কারও হাতে নেই। এ সময় ফিটনেস নিয়ে কাজ করা যেতে পারে। আর অবশ্যই করোনা নিয়ে বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে সবাইকে।'
গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের হয়ে প্রিমিয়ার লিগ খেলছেন বিশ্বজয়ী যুবা অধিনায়ক আকবর আলী। পরের কয়েক রাউন্ডের খেলা স্থগিত হওয়ায় দেশের বাড়িতে যাবেন তিনি। আকবর বলেন, 'খেলা বন্ধ হলে স্বাভাবিকভাবে বাড়ি ফিরতে হবে। বাসায় ফিরে ফিটনেসটা ঠিক রাখলেই হবে। আমার মনে হয় না ব্যাট-বল নিয়ে কিছু করার মতো পরিস্থিতি হবে। জিম বা মাঠে গিয়ে রানিং করে ফিটনেস ধরে রাখতে হবে।'
জাতীয় দলের দুই সিনিয়র ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও দেশের বাড়িতে যাবেন। তরুণ অলরাউন্ডার সাইফউদ্দিন বুধবারই বাড়ি চলে গেছেন। তিনি বলেন, 'আজ আমি বাড়ি চলে এসেছি। বাড়িতে এলাম, দুই-একদিন পরিস্থিতি দেখি। ফিটনেস নিয়ে কাজ করব। খুব ভোরে মাঠে গিয়ে দৌড়াব। এখানে একটা মাঠ আছে, সুযোগ থাকলে একা একা অনুশীলন করব। না খেললেও অনুশীলন তো চালিয়ে যেতে হবে।'
বুধবার দুপুরে একসঙ্গে মিরপুরের একাডেমি মাঠে ঢোকেন সিলেটের তিন টেস্ট ক্রিকেটার আবু জায়েদ রাহি, এবাদত হোসেন ও খালেদ আহমেদ। এই তিন পেসারই বাড়ি যাওয়ার পরিকল্পনা করেছেন। এবাদত হোসেন বলেন, 'যেহেতু স্থগিত হয়ে গেছে, বাড়ি যাব। তবে সিলেটে গেলে কাজ করতে হবে। অনেকদিন পর এমন সুযোগ হয়েছে। তো আমি রাহি ও খালেদ সিলেটে কাজ করব।'
ইনজুরিতে লম্বা সময়ের জন্য দল থেকে ছিটকে যাওয়া খালেদ আহমেদও বাড়িতে সময় কাটাতে চান। ডানহাতি এই পেসার বলেন, 'খেলা না থাকলে কী আর করব এখানে, বাড়িতে যাব। বাড়িতে গিয়ে পরিবারকে সময় দেওয়া, ফিটনেস নিয়ে কাজ করা যাবে। সিলেটে ভালো জায়গা আছে, ফিটনেস নিয়ে কাজ করা যাবে।'
বাঁহাতি পেসার মুস্তাফিজুর রহমানও দেশের বাড়ি সাতক্ষিরায় যেতে যান। তিনি বলেন, 'বাড়িতে মা বাবা আছে। দেখি যদি সবকিছু ঠিকঠাক থাকে তাহলে যাব। বাড়িতে গেলেও রানিং করতে হবে। অন্য কিছু করতে হলে ৪-৫ জন লাগে। বোলিং করতে হলেও কাউকে লাগবে। চেষ্টা করব রানিং, কিছু ব্যায়াম আছে, ওসব করে ফিটনেসের কাজটা করার।'
শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের অধিনায়কত্ব করা নুরুল হাসান সোহান বলেন, 'এমন ছুটি তো অনেক দিন পাইনি। তাই এখনও চিন্তা করিনি। খুলনা যেতে পারি। করোনায় দেশের যে সার্বিক অবস্থা, যেখানেই যাই সতর্ক থাকতে হবে। আমার বাচ্চাটাও ছোট। সব মিলিয়ে কিছুটা চিন্তাও হচ্ছে যে, কীভাবে কী হবে। আবার দুই-একদিন মাঠে না গেলে অস্থিরতাও কাজ করে। এমন অবস্থায় কখনও পড়িনি বলে নতুন নতুন লাগছে।'
মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের হয়ে খেলা তাসকিনের আহমেদের পরিবারের সবাই ঢাকা থাকেন। ডানহাতি এই পেসার তাই ঢাকাতেই থাকবেন। খেলা না হলে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করে ফিটনেস নিয়ে কাজ করতে চান তিনি। ডানহাতি এই পেসার বলেন, 'একদিনও বাসায় বসে থাকার সুযোগ নেই। ফিটনেস নিয়ে কাজ করতে হবে। যতটা সতর্ক থেকে জিম, রানিং করা যায়, করে যাব।'
ব্যতিক্রম মোহাম্মদ মিঠুনের বেলায়। জাতীয় দলের মিডল অর্ডার এই ব্যাটসম্যান ঢাকাকেই নিরাপদ মনে করেন। মিঠুন বলেন, 'এখন তো কোনো জায়গাই নিরাপদ নয়। বাড়ি গেলেই নিরাপদ থাকব, সেটা তো নয়। বরং ঢাকাতেই চিকিৎসা ব্যবস্থা ভালো। ঢাকাতেই যতটুকু সচেতন থাকা যায়, ততটুকু সচেতন থাকার চেষ্টা করব।'