আমরাও বিশ্বের সেরা দলগুলোর একটি: ইরানের কোচ কার্লোস কুইরোজের সাক্ষাৎকার
কার্লোস কুইরোজ বেশ ভালোভাবেই জানতেন সেপ্টেম্বরে কি হতে চলেছে তার সাথে। ইরানের জাতীয় দলের কোচ হিসাবে নতুনভাবে ইরানে ফিরে যেতে রাজি হয়েছেন তখন তিনি। এর আগে আট বছরের দায়িত্ব পালন শেষ করেছিলেন ইরানের কোচ হিসেবে। তিন বছর পর, আবার ৫০ হাাজার ডলারের চুক্তিতে তিন মাসের জন্য ইরানের কোচ হয়ে এসেছেন কার্লোস কুইরোজ।
১৯৭৯ সালে ইরানের ইসলামী বিপ্লবের পর থেকে আমেরিকা এবং ইংল্যান্ডের সাথে ইরানের সম্পর্ক শত্রুতা ছাড়া আর কোনো সংজ্ঞায় ফেলা যাবে না, এত বছরেও দুই দেশের সঙ্গে সম্পর্কের কোনা উন্নতি হয়নি। বরং ইউক্রেন যুদ্ধে সর্ম্পকের আরো অবনতি ঘটেছে। কুইরোজ নিজে পর্তুগিজ বংশদ্ভূত মার্কিন নাগরিক, ফুটবল কোচ হয়ে ইরানের সাথে দলের ভার নেওয়াটা ছিল- তার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। এবারও একইরকম পরিস্থিতি তার জন্য কাতার বিশ্বকাপে অপেক্ষা করছে। তাই কূটনীতিক ও কোচের দ্বৈত ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন কুইরোজ। ইরানের বিশ্বকাপ অভিযান তিনি যতটা সম্ভব, নির্বিঘ্নে ও কৌশল খাটিয়ে এগুতে চান।
নতুন চুক্তিতে ইরানে ফিরে এসেই তিনি হিজাব নিয়ে ইরানীদের উত্তাল আন্দোলন প্রত্যক্ষ করেছেন। দেখলেন ইরানের সাবেক ও বর্তমান ফুটবলারদের কেউ কেউ এই আন্দোলনের সাথে একাত্মতাও ঘোষণা করেছেন।
টিম মেলি - ফার্সী ভাষায় ইরানের জাতীয় দলকে তারা এ নামে ডাকে। টিম মেলিকে বিশ্বকাপে দেখতে চায়নি ইউক্রেন। তাদের দাবি, ইরান রাশিয়াকে যুদ্ধে সামরিক সহযোগিতা করছে। তবে সব রকম প্রতিকূলতা ছাপিয়ে কার্লোস ও তার দল এখন কাতারে, আজ সোমবার (২১ নভেম্বর) সন্ধ্যা সাতটায় ইংল্যান্ডকে হারাতে নামবেন। কি ভাবছেন তিনি? কুইরোজকে ইরানের পরিস্থিতি সম্পর্কেও জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, তার সপাট উত্তর ছিল, "আমার এ বিষয়ে কিছুই বলার নেই।"
ফুটবল খেলায় ভূ-রাজনৈতিক সংকট নিয়ে তার কোনো উদ্বেগ না থাকতেই পারে। "বি"- গ্রুপে অন্য দুই দল যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েলস। সাক্ষাৎকারটি নেওয়া হয়েছে ইসএসপিন থেকে।
প্রশ্ন: ফিফা বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে ইরানের বর্তমান অবস্থান ২০তম। একই গ্রুপের অন্য দল ওয়েলস (১৯) এবং যুক্তরাষ্ট্র (১৬)- আপনাদের থেকে র্যাঙ্কিংয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে। অপ্রত্যাশিতভাবে আপনারা এই গ্রুপে খেলছেন, বিষয়টা কি আপনার জন্য বাড়তি কোনো অনুপ্রেরণা?
কুইরোজ: কখনই না। আমি কখনই সেভাবে ভাবি না, কারণ অন্য লোকেরা আমাদের নিয়ে কী ভাবছে- তা নিয়ে আমি চিন্তিত নই। আমরা আমাদের নিয়ে ভাবছি। আমাদের শক্তিমত্তা এবং যোগ্যতা আছে, একইসাথে আমাদের অবশ্যই কিছু দুর্বলতা আছে, যেমনটা সব দলেরই থাকে। কোনো দলই নিখুঁত নয়। সঠিক সময়ে মাঠের খেলায় তা প্রমাণ হবে। আসলে কোনো মন্তব্যই এখন তেমন গুরুত্ব রাখে না। দিন শেষে ম্যাচে যেটা গুরুত্বপূর্ণ, সেটা হল- দুর্দান্ত পারফর্ম করা, ভালো ফুটবল খেলা এবং ফলাফল কী হবে- তা ঈশ্বরের হাতে ছেড়ে দেওয়া।
প্রশ্ন: ইরান কখনোই বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্ব থেকে বাদ পড়েনি, তাই কাতার বিশ্বকাপে প্রত্যাশা কী থাকবে?
কুইরোজ: এটা বলতে আমার কোনো দ্বিধা নেই যে খেলায় চাপ আমাদের আছে। বাড়তি চাপ মোকাবিলা করতে আমরা নিজেদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। কিন্তু, গ্রুপের ভেতরে আমাদের ভালো করার প্রত্যাশা- অন্য সবার মতো ঠিক একই স্তরে থাকবে। আমরা এগিয়ে যেতে চাই, আরও ভালো খেলতে চাই। এটা আমাদের তৃতীয় বিশ্বকাপ। বিশ্বকাপের দ্বিতীয় পর্বে পৌঁছাতে এবারেও আমাদের প্রত্যাশা রয়েছে।
প্রশ্ন: আপনাদের প্রথম ম্যাচ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে, তারা এই বিশ্বকাপে অন্যতম পছন্দের দলও বটে। আপনারা তাদের কেমন শক্তিশালী দল মনে করেন?
কুইরোজ: আমি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলতে পেরে আনন্দিত। আমরা ইরানি ফুটবলে পর্তুগাল বা স্পেনের সাথে খেলতে পেরে এরকমই উৎসাহ পাই। বিশ্বের সেরা দলগুলোর সাথে খেলতে পেরে আমরা খুশি, কারণ আমরাও বিশ্বের সেরা দলগুলোর একটি। এবং আমরা বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়দের মধ্যে থাকতেই খেলি। আমাদেরকে ছোট দল বা কম শক্তিশালী দল ভাবার কোনো কারণ নেই। মনে রাখতে হবে, আমরা বিশ্বের সেরা ৩২ দলের একটি।
প্রশ্ন: ইংল্যান্ডে আপনি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সাথে কাজ করেছেন, আপনি জানেন ফুটবলের বিষয়ে তারা কেমন মরিয়া হয়ে থাকে, তবে আপনি তো তাদের আগে অনেকবার ব্যর্থ হতেও দেখেছেন। এই বিষয়ে আপনার মতামত কি?
কুইরোজ: ইংল্যান্ড নিঃসন্দেহে শীর্ষ দলগুলোর একটি। বিগত কয়েক বছরে আন্তর্জাতিক ফুটবলে ইংল্যান্ড আরও ভালো প্রস্তুতি নিয়ে এসেছে। স্পষ্টতই তারা দল হিসেবে বড়- তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এটা তাদের মাঠের ফলাফলেও স্পষ্ট।
ব্যর্থতা খেলার একটি অংশ। তবে আমি কখনোই বলবো না- ডেভিড বেকহামের সময়ে দল আরও ভালো ছিল। তাদের সময়ের খেলার ধরন এবং এখনকার মাঠের খেলা বেশ ভিন্ন। দিনে দিনে তারা আরও উন্নতি করবে। তাদের খেলায় ধারাবাহিকতা আছে।
প্রশ্ন: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে খেলাটি গ্রুপের শেষ খেলা। দুই দলের যোগ্যতাও নির্ধারিত হয়ে যাবে ততদিনে। আপনি ১৯৯০-এর দশকে নিউইয়র্ক/নিউজার্সি মেট্রোস্টারের সাথে এমএলএস-এ কোচিং করেছেন। মার্কিন দল এবং ফুটবলে দেশটির অগ্রগতিকে আপনি কীভাবে দেখেন?
কুইরোজ: সব জায়গায় আমি ফুটবলের অগ্রগতিকেই আগে দেখছি। অধিকাংশ মানুষ এটা আগে দেখতে পায় না, কিন্তু পেশাদার ফুটবলার হিসেবে এটা আমার চোখে পড়ে। ফুটবলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এগিয়ে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের ফুটবল খেলোয়াড়রা দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে- এতে বিশ্বের অন্যান্য দেশ এবং অন্যান্য মহাদেশের খেলোয়াড়দের সাথে আলোচনায় আসছে।
প্রশ্ন: ইরান কি কাতার বিশ্বকাপে মানুষকে চমকে দিতে পারবে?
কুইরোজ: বিশ্বকাপে আমরা যা আশা করি তা হল- দুর্দান্ত খেলা, দুর্দান্ত ম্যাচ, দুর্দান্ত পারফরম্যান্স। ইরান, ইংল্যান্ড, ওয়েলস, স্পেন, পর্তুগাল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র- আমরা সবাই আমাদের সমর্থকদের জন্য আনন্দময় ও উপভোগ্য খেলা উপহার দিতে চাই।
- ইএনপিএন থেকে ভাবানুবাদক : মাসুদুল হাসান সাফিন