পেলের ভবিষ্যদ্বাণী পূরণে মরক্কো কি জিততে পারবে?
মঙ্গলবার রাতে দোহার এডুকেশন সিটি স্টেডিয়ামে সবচেয়ে অপ্রত্যাশিত ঘটনাটি ঘটে যখন ফিফা বিশ্বকাপের আসরে স্পেনকে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় করে মরক্কো।
৭০ এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে পেলে ভবিষ্যদ্বাণী করেন ২০০০ সালের আগেই কোনো না কোনো আফ্রিকান দেশ কাপ জিতে নিবে। তবে কিংবদন্তী পেলে তো কত কথাই বলেছেন। তার সব ফলবে এমনও নয়।
কিন্তু আফ্রিকার টুর্নামেন্ট জেতার যে স্বপ্ন তিনি দেখিয়েছিলেন সেটার সম্ভাবনা এখন পুরোপুরি উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
২০২২ বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো আফ্রিকার পাঁচ দেশের কোচই ছিলেন আফ্রিকান।
নভেম্বরে ক্যামেরুন ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি স্যামুয়েল ইতো ফিলস বলেন তাঁর ইচ্ছা দুই আফ্রিকান দলের মধ্যে ফাইনাল খেলা দেখা। আর সেই ফাইনালে মরক্কোকে হারাবে ক্যামেরুন।
সেটা নিয়ে অবশ্য তখনই অনলাইনে হাসিঠাট্টা শুরু হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু গভীরভাবে তলিয়ে দেখা যাক। আফ্রিকার কোনো দল এখন পর্যন্ত কেন বিশ্বকাপ জিততে পারেনি?
এর শুরুটা উপনিবেশবাদ থেকেই। ১৯৩০ থেকে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত আয়োজিত সাত বিশ্বকাপে আফ্রিকা থেকে প্রতিনিধিত্বকারী একমাত্র দেশ ছিল মিশর।
এর পিছে অনেকগুলো কারণ ছিল। পশ্চিম ইউরোপীয় দেশগুলোর অধীনে উপনিবেশ হিসেবে থাকা যেমন একটি কারণ ছিল, তেমনি ফিফার সাবেক কর্মকর্তারাও আফ্রিকার দেশগুলোকে সরাসরি টুর্নামেন্টে জায়গা দিতে আপত্তি প্রকাশ করেছিল। এমনকি যে দেশগুলো স্বাধীনতা অর্জন করেছিল, তাদের ক্ষেত্রেও আপত্তি জানানো হয়েছিল।
১৯৬৬ সালে আফ্রিকা মহাদেশ থেকে ইংল্যান্ডে আয়োজিত ফিফা বয়কট করা হয়। ফিফাকে বার্তা দিতেই এই বয়কটের আয়োজন। পরবর্তীতে ১৯৭০ সালে আফ্রিকা বিশ্বকাপে জায়গা করে নেয়।
এরপরের তিন দশকে দলগুলো দারুণ সব খেলা উপহার দিয়েছে। আলজেরিয়া পশ্চিম জার্মানিকে হারিয়েছে, মরক্কো পর্তুগালকে। এমনকি ক্যামেরুনের কাছেও আর্জেন্টিনা হেরেছে।
কিন্তু ফিফা বিশ্বকাপে দেশগুলোর অংশগ্রহণ বরাবরই কম ছিল। ১৯৮২ সালে মাত্র দুটি, ১৯৯৪ সালে মাত্র তিনটি এবং ১৯৯৮ সালে মাত্র পাঁচটি দেশ আফ্রিকা থেকে অংশ নেওয়ার সুযোগ পায়।
আর তাই আফ্রিকার এখন পর্যন্ত কাপ না জেতার অন্যতম বড় কারণ হচ্ছে সেখানকার দেশগুলোর অংশগ্রহণ বরাবরই কম ছিল।
গত ১২ বছরে দেশগুলো ভালো ফল দেখাতে পারেনি এমন কথা হয়তো অনেকে বলবেন। কিন্তু অংশগ্রহণের সুযোগ বাড়লে যে ভালো ফল দেখানোর সম্ভাবনাও বাড়ে, সেটা অস্বীকার করার উপায় তো নেই।
২০২২ সালের বিশ্বকাপে এসে দেখা গেছে বৈষম্য শুধু কোয়ালিফিকেশন স্লটের কারণেই হয় না। বরং আয়োজক হওয়ার অধিকারের ক্ষেত্রেও তা বড় প্রভাব রাখে।
২০০২ সালে টুর্নামেন্টের সহ-আয়োজক থাকাকালে দক্ষিণ কোরিয়া সেমি-ফাইনালে উঠে। দক্ষিণ আফ্রিকায় আয়োজিত আফ্রিকার প্রথম বিশ্বকাপে ঘানা পেনাল্টি মিস করায় সেমি-ফাইনালে পা রাখতে পারেনি।
এখন প্রশ্ন হতে পারে এটা কি কাকতালীয়? হোস্ট হলেই কি কেবল এশিয়া ও আফ্রিকা নিজেদের সেরাটা দেখাতে পারে?
২০২২ সালের বিশ্বকাপে এসে এর উত্তর হচ্ছে না। এ বছর নকআউট পর্বে ছিল এশিয়ার তিন অংশগ্রহণকারী। কাতার বিশ্বকাপ এখন পর্যন্ত আফ্রিকার দেশগুলোকে সবচেয়ে সফলভাবে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ দিয়েছে।
আফ্রিকার প্রথম দেশ হিসেবে ব্রাজিলকে হারিয়েছে ক্যামেরুন। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সকে হারিয়েছে তিউনিশিয়া। আর মরক্কো সাত পয়েন্ট নিয়ে প্রথম আফ্রিকান দেশ হিসেবে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।
সে যাই হোক, মূল কথা হলো মরক্কোর সামনে এখনও সুযোগ আছে।
মরক্কোর বিশ্বাস বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়া থেকে তারা মাত্র ২৭০ মিনিটের দূরত্বে দাঁড়িয়ে আছে। হয়তো আমাদেরও তাদের বিশ্বাস করার সময় এসেছে।
- সূত্র: বিবিসি