'কল্পনার চেয়েও বেশি পেয়েছি, চ্যাম্পিয়ন আমরাই’: হেরেও আনন্দে ভাসছে মরক্কান সমর্থকরা
প্রথম আফ্রিকান দেশ হিসেবে বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠা হলো না মরক্কোর। বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সের কাছে ২-০ গোলের ব্যবধানে হেরে সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিতে হল অ্যাটলাসের সিংহদের।
প্রথম আফ্রিকান দল হিসেবে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠার অর্জনটাকে আরেক ধাপ এগিয়ে ফাইনাল পর্যন্ত নিয়ে যেতে চেয়েছিল মরক্কো। তবে বেলজিয়াম, স্পেন, পর্তুগালকে টপকে সেমিফাইনালে আসা মরক্কোর জন্য সেটি বোধহয় একটু বেশিই চ্যালেঞ্জিং হয়ে গিয়েছিল।
কাতারের আল-বাইত স্টেডিয়ামে কি তবে মরোক্কান ফুটবল কাল শেষ দেখে ফেলল! একদম না। বরং কাল এই স্টেডিয়ামে রচিত হয়েছে মরোক্কান স্বপ্নের প্রথম ভিত। হার নয়, সমর্থকদের কাছে বড় জয় প্রথম আরব দেশ হিসেবে বিশ্বকাপের আসরে এতদূর আসা। এখন শুধুই সামনে এগিয়ে চলা।
মরক্কো ফুটবলের সমর্থক ফাতিমা বলে ওঠেন, "এটাই তো ফুটবল। আমরা দল নিয়ে সত্যিই গর্বিত। মরক্কোর ফুটবল এখন পুরোপুরি বদলে গেছে। আমরা হারি নি, হারার তো কথাই নয়। আমরা চ্যাম্পিয়ন।"
বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সের কাছে ২-০ গোলের ব্যবধানে হেরে সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিয়েছে। কিন্তু যে গৌরব আর সম্মান তারা অর্জন করেছে তারা অভূতপূর্ব।
ম্যাচে হার নিশ্চিত হবার পর অনেক মরোক্কান সমর্থকই গ্যালারি ছেড়ে যায়। তবু লাল-সবুজের জনস্রোত থেকে খেলার একেবারে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত 'মরক্কো', 'মরক্কো' চিৎকার ভেসে আসছিল।
আমিনী নামের আরেক মরোক্কান সমর্থক বলেন, "প্রাউড, প্রাউড আর প্রাউড- এটাই আমার এই মুহূর্তের একমাত্র অনুভূতি। তারা ইতিহাস রচনা করেছে। এই টিমটা এখনও তরুণ আর এখন পরের বিশ্বকাপগুলোর জন্য লক্ষ্য ঠিক করছে তারা।"
"আমরা এখন হাল ছাড়ব না। এটা একটা মানসিকতার পরিবর্তন; আমাদের পুরো দল, খেলোয়াড় এবং দেশের এখন জয়ের মানসিকতা তৈরি হয়েছে। এটা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকেই বদলে রেখে দেবে," বলেন আমিনী।
সেমিফাইনালে মরক্কোর হারে কেঁদে বুক ভাসিয়েছেন ইউসরা।
"আমি আবেগাক্রান্ত হয়ে পড়েছি , তাই বলে আমি কিন্তু হতাশ নই। এখন পর্যন্ত আমাদের অভিজ্ঞতা দারুণ। আমরা দারুণ খুশি আর চরম গর্বিত। ওরা ইতিহাস রচনা করেছে। ওরা লড়াকু, ওরাই জয়ী। আমরা ওদের সব সময় সমর্থন দিয়ে যাব", বলেন এই 'ডাই-হার্ড' মরোক্কান ফ্যান।
আরেক সমর্থক শাইমার জন্য ছিল মিশ্র অনুভূতি। জন্মসূত্রে ফ্রান্সের নাগরিক শাইমার বাবা-মা উভয়েই মরোক্কান।
"আমি রাতে মরক্কোর পক্ষেই ছিলাম। তারা দারুণ পারফর্ম্যান্স করেছে। তারা দেখিয়েছে যে, আফ্রিকার একটি দলও কী দারুণ খেলতে পারে।"
প্রথম আফ্রিকান এবং আরব দেশ হিসেবে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠার নজির গড়েছে মরক্কো। এখনও সুযোগ আছে তৃতীয় স্থানে থেকে বিশ্বকাপ শেষ করার, যে লক্ষ্যে শনিবার ক্রোয়েশিয়ার মুখোমুখি হবে তারা।
যদিও অনেক মরোক্কান ভক্তের কাছেই এটি নিছক আনুষ্ঠানিকতা রক্ষার ম্যাচ।
"আমরা অ্যাটলাস লায়নদের নিয়ে অত্যন্ত গর্বিত। কেউ স্বপ্নেও ভাবেনি যে আমাদের দল বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠবে। এখন আমরা চাই বিশ্বকাপের তৃতীয় স্থান জয় করে নিতে। তবে যদি সেটি নাও হয়, তাতেও আমাদের খেদ নেই। আমরা তো ইতিমধ্যেই কল্পনার চেয়েও বেশি পেয়ে আছি", অকপট স্বীকারোক্তি মরোক্কান ভক্ত লামিয়ার।