মানসিক দৃঢ়তাই ফ্রান্সের সবচেয়ে বড় চালিকাশক্তি
বিশ্বকাপের আগেই জানা ছিলো পল পগবা এবং এনগোলো কান্তে খেলতে পারবেন না চোটের জন্য। বিশ্বকাপ দলে ডাক পাওয়ার পরেও দল থেকে ছিটকে পড়েন ক্রিস্টোফার এনকুনকু এবং ব্যালন ডি'অর জয়ী তারকা করিম বেনজেমা। এছাড়াও আরও কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়কে চোটের জন্য হারায় ফ্রান্স।
মূল একাদশের এমন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়দের হারালে যেকোনো দলই ধসে যাওয়ার কথা। বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলার স্বপ্ন তো বহুদূর। কিন্তু বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স সেটিই করে দেখাল। নিজেদের বিশ্বচ্যাম্পিয়নের মুকুট ধরে রাখা থেকে আর মাত্র এক ম্যাচ দূরে কিলিয়ান এমবাপ্পেরা।
২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপ জয়ের পেছনের মূল কারিগরদের মধ্যে ছিলেন ফ্রান্স মাঝমাঠের দুই তারকা, পল পগবা এবং এনগোলো কান্তে। এই দুই অস্ত্রকে ছাড়াই দল গোছাতে হয়েছে দিদিয়ের দেশমকে।
পগবা এবং কান্তের জায়গায় এবার খেলছেন চুয়ামেনি এবং রাবিও। পারফরম্যান্স তো বটেই, বাকিসব দিক থেকেও পগবা-কান্তের অভাব ভুলিয়ে দিয়েছেন চুয়ামেনি-রাবিও জুটি।
ফ্রান্সের ফাইনালে উঠার পেছনে সবথেকে বড় কারণ তাদের মানসিক শক্তি। বিশ্বকাপের দলের সঙ্গে কাতারে এসেও যখন চোটের জন্য ফর্মে থাকা করিম বেনজেমা ফিরে গেলেন, ফ্রান্সের জেতার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে গিয়েছিল।
কিন্তু নিজেদের দৃঢ় মনোবল দিয়ে ফ্রান্স উঠে গেছে বিশ্বকাপের ফাইনালে। দলের প্রয়োজনে জ্বলে উঠেছেন অলিভিয়ের জিরু, অতোয়ান গ্রিজম্যানরা। আর কিলিয়ান এমবাপ্পে তো আছেনই, গোল্ডেন বুট এবং বলের লড়াইতে ভালোভাবেই আছেন ফরাসি এই তারকা।
২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপে তেমন কোনো অবদান না রেখেও বিশ্বকাপ জেতা জিরুকে তো কম বিদ্রুপের শিকার হতে হয়নি। সেই জিরুই এবার ৪ গোল করে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা, এর মধ্যে হয়ে গেছেন ফ্রান্সের সর্বকালের সেরা গোলদাতাও। কোয়ার্টার-ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ জেতানো গোলটিও করেছেন ৩৫ বছর বয়সী এই স্ট্রাইকার।
অপরদিকে দলের প্রয়োজনে নিজের ভূমিকা বদলে পুরোদস্তুর মিডফিল্ডার বনে গেছেন গ্রিজম্যান। দলের নাটাই এখন তার হাতে, যেভাবে ইচ্ছে দলকে চালিত করছেন সেভাবেই। গোল্ডেন বল জেতার লড়াইয়ের আছেন তিনিও।
বিশ্বকাপ যেন কিলিয়ান এমবাপ্পের জন্যই, রাশিয়া বিশ্বকাপে ৪ গোল করেছিলেন। পেলের পর প্রথম টিনেজার হিসেবে বিশ্বকাপ ফাইনালে গোল করার কীর্তিও তার। কাতার বিশ্বকাপে এমবাপ্পে করেছেন ৫ গোল, যা লিওনেল মেসির সমান সর্বোচ্চ।
পগবা-কান্তেদের অভাব ভুলিয়ে দেওয়া চুয়ামেনি-রাবিওর মাঝে ফ্রান্স খুঁজে পেয়েছে নতুন দিনের কান্ডারিদের। রক্ষণে তো আছেনই চির ভরসার প্রতীক রাফায়েল ভারানে, গোলকিপারও ২০১৮ বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক হুগো লরিস।
মানসিক দৃঢ়টাই এই ফ্রান্স দলকে নিয়ে এসেছে এতদূর। ফাইনালে মেসির আর্জেন্টিনাকে হারাতে হলে আরেকবার দরকার এই শক্তি কাজে লাগানো।
সেটি করতে পারলে ইতালি এবং ব্রাজিলের পর প্রথম দল হিসেবে পরপর দুই বিশ্বকাপ জয়ী দল হবে ফ্রান্স। ইতোমধ্যে ইতিহাস গড়া এই ফ্রান্স দলকে আরো ঐতিহাসিকভাবেই মনে রাখবে বিশ্ব।